অরণ্য ও প্রকৃতির সন্তানেরা কলকলমুখর প্রাগসর মানবগোষ্ঠীর চাপে আজ নির্বাক। তাঁরা নীরবে দেখছেন তাঁদের নির্ভরযোগ্য বাসভুমি-বনভূমি-মাতৃভূমি অপরের [পুঁজিবাদীদের] হাতে করায়ত্ত। নিজভূমে পরবাসীর বেদনা তাঁদের নিত্যসঙ্গী। তাঁরা অসহায়। গিরিকুমার অরণ্যসন্তান—সেই বৃহত্তর কৃষ্ণভারতকে বাদ দিয়ে, উপমহাদেশের সাহিত্যচর্চা কেন, কোন চর্চাই পূর্ণাঙ্গ নয়।
বইকথা
-
-
মোট ছয়জন বিখ্যাত ভ্রমণকারী–মেগাস্থিনিস, ফা-হিয়েন, হিউয়েন সাঙ, মার্কো পোলো, ইবন বতুতা ও আল বেরুণীর চোখে তৎকালীন ভারতের ছবি ধরা পড়েছে পূর্ণেন্দু পত্রীর এই সরল সহজ বর্ণনায়। ইতিহাস কেবল সাল তারিখ বা ঘটনার নীরস বিশ্লেষণ নয়। ইতিহাস যে কত আকর্ষণীয় ও নিরপেক্ষ হতে পারে তা পত্রীর এই বইটি আমাদের কাছে এক মস্ত প্রমাণ।
-
অত্যাচারে জর্জরিত মুন্ডা সমাজে বিরসা হয়ে উঠেছিলেন ত্রাতাস্বরূপ- তাঁর সংগ্রাম মুণ্ডাদের ঠিক কতখানি ঐহিক মুক্তি বা সুখ স্বাচ্ছন্দ্য এনে দিল সেটা বড় কথা নয়, বড় কথা এই যে, বিরসা হয়ে উঠেছিলেন মুগ্ধ আত্মবিশ্বাস, আত্মসম্মানের প্রতীক। অপমান, উৎপীড়নের বিরুদ্ধে মুন্ডারা যে রুখে দাঁড়াতে পারে, সেই বোধে-বিশ্বাষে বিরসার ঈশ্বরতা- সেই ঐশ্বর্যে বিরসার অনন্যতা, অমরত্ব।
-
সোনা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বই পাশাপাশি বাস, তবে কেন উদাসীন? ধর্মকে কেন্দ্র করে মানুষে মানুষের যে বিভেদের প্রাচীর গড়ে উঠছে, এই মেরুকরণের একেবারে বিপরীতে অবস্থান করে। তাঁর মতে ভারতের স্বাধীনতা যুদ্ধে হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ-খ্রিস্টান সবাই রক্ত ঝরিয়েছে l সেখানে উচ্চবর্ণ, নিম্নবর্ণ, দলিত আদিবাসী ইত্যাদির কোন ভেদাভেদ নেই l কিন্তু লেখক লক্ষ্য করছেন যে মূলত ধর্মকে কেন্দ্র করে মানুষের মধ্যে ঘৃণা, বিদ্রুপ , তাচ্ছিল্য ও ভুল ধারণার সৃষ্টি হচ্ছে।
-
সকালের রোদ।কড়া নয়, মিঠে। গায়ে লাগলে এক অদ্ভুত অনুভূতি হয়। বেঁচে থাকা সার্থক মনে হয়।আমার মনে হয় অংশুমানের গল্পগুলির মূল আকর্ষণ লুকিয়ে আছে নিত্যদিনের মরার হাত থেকে জীবনকে ছিনিয়ে নিয়ে এক মূল্যবোধ নিয়ে বাঁচার প্রয়াসে। লুকিয়ে বা পালিয়ে বাঁচা নয়। হেরেও না হারার দৃঢ়তা নিয়ে বাঁচা।
-
কবি সুন্দর ও সরল ভাবে স্মৃতিচারণার মধ্য দিয়ে ফুটিয়ে তুলেছেন বাংলাদেশে শৈশব ও কৈশোরের যাপনের দিনগুলোকে। পরবর্তীকালে ভালোবাসার টানে যতবার তিনি গিয়েছেন সেই জন্মভূমিতে তার পুঙ্খানুপুঙ্খ স্নেহ মমতা ও ভালোবাসা মাখানো বর্ণনা ফুটে উঠেছে তাঁর কলমে।দেশভাগের নিয়তিকে মাথায় নিয়ে ভিটেমাটি ছেড়ে একদিন চলে এসেছিলেন পশ্চিমবঙ্গে। কিন্তু যার সাথে রয়েছে নাড়ির সম্পর্ক সেই সম্পর্ক ছেদ করে সত্যিই কি আপন ভেবে ছেড়ে চলে আসা যায়? মুছে যাওয়া দিনগুলো পিছুটানে, স্মৃতি যেন হৃদয়ে বেদনার রঙে রঙে ছবি আঁকে।
-
নাদিরার একাকিত্ব, স্বামী হাসিমের তার প্রতি অবহেলা তাকে বেপরোয়া করে তোলে। সে সিরাজকে কাছে পেতে চায়। সিরাজকে তার সমস্যার কথা বলে। অনেকটা এগিয়েও আসে তারা। কিন্তু ঘটনাক্রমে চরম মুহূর্তে সিরাজের আত্মোপলব্ধি হয়। তার পিতৃ-মাতৃ অতীত ইতিহাস মনে পড়ে যায়। মনে পড়ে যায় বশিরউদ্দিন চাচাকে। সেই একই অন্যায় সেও কি করে ফেলবে! সিরাজ ফিরে যায় বৈধ সম্পর্কের বৃত্তে। নাদিরার থেকে ধীরে ধীরে সে দূরে সরে যায়।
-
হিন্দুত্ব ফ্যাসিবাদ নিয়ে বর্তমান ভারত কোন দিকে, স্বৈরাচারী শাসকের ইসলাম ধ্বংসের প্রক্রিয়া কী রকম ইত্যাদি বিষয়ের সঙ্গে ভারতের অর্থনীতি, সংবিধান, মানবনীতি কতখানি সংকটে তারই অনুসন্ধানে পূর্বাঞ্চল থেকে রাকেশ রৌশানের সম্পাদনায় কুড়িটি প্রবন্ধ এবং দুটি সাক্ষাৎকার নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে হিন্দুত্ব ফ্যাসিবাদ ও ভারতবর্ষ (সেপ্টেম্বর ২০২৩)। লেখক তালিকায় আছেন এই মুহূর্তের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য লেখক, চিন্তাবিদ, অধ্যাপক, সাংবাদিক এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। এঁদের মধ্যে কয়েকজনের নাম উল্লেখ করতেই হয়: অমর্ত্য সেন, অরুন্ধতী রায়, রাম পুনিয়ানি, বদরুদ্দীন উমর, রামচন্দ্র গুহ, প্রভাত পট্টনায়ক, শুভাশিস মুখোপাধ্যায়, আশিস গুপ্ত, অশোক মুখোপাধ্যায়, মৃন্ময় সরকার, অশোক চট্টোপাধ্যায়, অনিন্দ্য দাশ, কোয়েল সাহা, পার্থপ্রতিম রায়, সুমনকল্যাণ মৌলিক প্রমুখ।
-
ডিজিটাল যুগ। প্রত্যন্ত অঞ্চলে টেলিভিশন ইন্টারনেট বহুজাতিক কোম্পানির প্রসাধন সামগ্রী পৌঁছে গেছে কিন্তু পৌঁছাতে পারেনি শিক্ষা, স্বাস্থ্য হাসপাতাল। পৌছায়নি বিজ্ঞান চেতনার আলো। ওঝা সম্প্রদায়ের চিকিৎসায় সম্বল। বৈষম্যকে টিকিয়ে রাখার আপ্রাণ প্রচেষ্টা শুভ অশুভ শক্তির অছিলায়। ডাইনি প্রথাকে টিকিয়ে রাখার অর্থ হলো সব ধরনের বৈষম্যকে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা। বৈষম্য থাকলে বাজার বাড়বে। সচেতন বা অসচেতন গ্রাহক তৈরি হবে। মানুষের শুভ চিন্তার বিনাশ ঘটবে।
-
বাঙালি মুসলমান বইটিতে নিজেকে পরিমাপ করতে পারবে। তার বেডরুম থেকে অফিস ঘর, তার মাঠ থেকে হাট পর্যন্ত, তার ধর্ম থেকে অন্ধ-কুসংস্কারাচ্ছন্ন বিশ্বাস অর্থাৎ সংস্কার পর্যন্ত তথা সংস্কৃতি পর্যন্ত অনুধাবন করতে পারবে। প্রচলিত বহুভ্রান্ত ধারণারও অবসান ঘটাতে পারবে।