ওদের চোখে মোদের ভারত
পূর্ণেন্দু পত্রী
দে’জ পাবলিশিং (২০২০, পুনর্মুদ্রণ)
১০৬ পাতা
হার্ডকভার
বিনিময় মূল্য ১০০/-
মোট ছয়জন বিখ্যাত ভ্রমণকারী–মেগাস্থিনিস, ফা-হিয়েন, হিউয়েন সাঙ, মার্কো পোলো, ইবন বতুতা ও আল বেরুণীর চোখে তৎকালীন ভারতের ছবি ধরা পড়েছে পূর্ণেন্দু পত্রীর এই সরল সহজ বর্ণনায়। ইতিহাস কেবল সাল তারিখ বা ঘটনার নীরস বিশ্লেষণ নয়। ইতিহাস যে কত আকর্ষণীয় ও নিরপেক্ষ হতে পারে তা পত্রীর এই বইটি আমাদের কাছে এক জ্বলন্ত উদাহরণ।
ভারতবর্ষ এক মানবতার নাম, মানুষের জন্য মানুষের ভালোবাসা, ভালোবাসার জোয়ারে এ ভারতবর্ষ ভাসমান। যুগ যুগ ধরে তাই্ত বিশ্বমানবের যাওয়া আসা ।সব তীর্থের আঁকাবাঁকা পথ ঘুরে, ভালোবাসার তীর্থ ভারতে এসে মেশে। ভারতবর্ষ মানে কোন আর্ট পেপারে আঁকা মানচিত্র নয়। এই নাম উচ্চারণের সাথে সাথে আবেগ ভালোবাসা শ্রদ্ধায় ভরে ওঠে মন। ভারতবর্ষ বৈচিত্র্যের লীলাভূমি। প্রাকৃতিক পরিবেশ, সামাজিক আচার-আচরণ, ভাষা ধর্ম পোশাক পরিচ্ছদ জীবনযাত্রা প্রণালী-সবেতেই ফুটে ওঠে বৈচিত্র্য । উত্তরে আকাশছোঁয়া হিমালয় পর্বত তার মাথার মুকুট-যা ভারতকে তার নিজস্ব সভ্যতা ও সংস্কৃতির বীনা বাজিয়ে বিশ্বকে নূতন মত ও পথের সন্ধান দিয়েছে। তিন দিকে উত্তাল ফেনিল সমুদ্রের জলরাশি। নদীমাতৃক বিস্তীর্ণ সুজলা সুফলা সমভূমি, গহন অরণ্য, ঊষর মরুপ্রান্তর–এক অপরূপ বৈচিত্র্য দান করেছে। প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যের মত জাতি বৈচিত্র্য ও আমাদের দেশকে বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকে স্বতন্ত্র করেছে। যুগ যুগ ধরে বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠীর মানুষ ভারতবর্ষে এসেছেন, নিজেদের স্বাতন্ত্র হারিয়ে ফেলে ভালবেসে এদেশের সংস্কৃতির সাথে মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছেন। এ যেন একটা সুতোই নানা রঙের ফুল দিয়ে গাঁথা মালা। ভারতীয় শিক্ষা সংস্কৃতি আস্তে আস্তে ছড়িয়ে পড়েছে সমগ্র বিশ্বে।বহু মহামানবের আবির্ভাবে পুণ্য হয়েছে ভারতভূমি।
ইতিহাসের পাতায় নজর দিলে আমরা দেখতে পাই যুগ যুগ ধরে বহু গুণমুগ্ধ মানুষ এদেশের মাটিকে স্পর্শ করে ধন্য হয়েছেন। ছুটে এসেছেন বারে বারে, আলিঙ্গন করেছেন ভালোবেসে । এমনই কিছু ইতিহাস বিখ্যাত নাম মেগাস্থিনিস , ফা-হিয়েন, হিউয়েন সাং, মার্কো পোলো, ইবন বতুতা ,আলবেরুনী। লেখক এর লেখনী শক্তির মধ্য দিয়ে খুব সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে ওদের চোখে মোদের ভারত–এর বর্ণনায়। লেখক সাবলীলভাবে সহজ সরল ভাষায় উপস্থাপন করেছেন যা সত্যিই মনমুগ্ধকর।
গ্রীক বীর আলেকজান্ডার বিশ্বজয়ের স্বপ্ন দেখেছিলেন। তাঁর বীর সেনাবাহিনীর পদভারে কম্পিত হয়েছিল এশিয়া মহাদেশ। আলেকজান্ডারের সেনাপতি সেলুকাস ভারতবর্ষে এক দূত পাঠিয়েছিলেন যিনি মেগাস্থিনিস নামে পরিচিত। মেগাস্থিনিস দীর্ঘদিন এদেশে ছিলেন, এদেশ সম্পর্কে তাঁর অভিজ্ঞতা লিপিবদ্ধ হয়েছে ‘ইন্ডিকা’ গ্রন্থে। যা থেকে আমরা প্রাচীন ভারতবর্ষের সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারি । অনুসন্ধিৎসু চোখ নিয়ে তিনি ঘুরে বেড়িয়েছেন সমগ্র ভারতবর্ষ । দীর্ঘদিন তিনি কাটিয়েছিলেন পাটালিপুত্রে। পাটালিপুত্র রাজপ্রাসাদের অপূর্ব সোনা রুপার কারুকার্য তাঁকে মুগ্ধ করেছিল। সেখানকার মানুষের জীবন-যাপন প্রণালী সবকিছু খুব সুন্দর ভাবে জীবন্ত হয়ে উঠেছে তাঁর বর্ণনায়।
ফা হিয়েন ছিলেন বিখ্যাত চৈনিক পরিব্রাজক। ভারতে বৌদ্ধ তীর্থস্থান গুলি পরিদর্শন বৌদ্ধ ও সংস্কৃত ধর্মশাস্ত্র অধ্যায়ন এবং গভীর জ্ঞান লাভ ও বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থ সংগ্রহের উদ্দেশ্যে সুদূর চীন থেকে ভারতবর্ষে এসেছিলেন গুপ্ত সম্রাট দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের রাজত্বকালে। ভারত ভ্রমণের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে লিখেছিলেন ‘ফো- কুয়ো- কি’ যা ভারত ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এই গ্রন্থে ভারতীয় জনজীবনের এক অনন্য সাধারণ বর্ণনা ফুটে উঠেছে। চীনের সেনসি রাজ্যের প্রধান শহর চ্যাং গান, ধন্য হয়েছিল এমন একজন মহামানবের স্পর্শে। আসল নাম কুঙ্গ। দীক্ষা নেওয়ার পর হলেন ফাহিয়েন-অর্থ বিনয়ের প্রতিমূর্তি। বৌদ্ধ ধর্ম চীন দেশে ছড়িয়ে পড়লেও ফাহিয়েন এর মনে হয়েছিল তাঁরা যা জানছে, যা পালন করছে তা অসম্পূর্ণ। জানতে হলে যেতে হবে বুদ্ধের জন্মভূমিতে। তাঁর মনে এক সংকল্পের প্রদীপ জ্বলতে থাকে, একদিন যাবোই সেই জ্যোতির্ময়ের দেশে। তথাগতের পুণ্য জন্মভূমির ধুলো মাথায় নিয়ে ধন্য হতে।
পা বাড়ালেন ভারতবর্ষের দিকে। চোখ ভরে উঠল বিস্ময়ে, আনন্দে–আহা এ তো সোনার দেশ, শান্তির দেশ। ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলেন তাঁর স্বপ্নের দেশকে। দেখলেন উর্বর সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা এই দেশকে। মাঠে মাঠে সোনার ফসল। মানুষের মধ্যে আন্তরিকতার অভাব নেই, অতিথি পরায়ণ। বিদেশীদের এমন আপ্যায়ন করেন যেন পরিচিত কোন আপনজন। মানুষজন ছিল সুখী তবে অস্পৃশ্যতা ছিল সমাজে। রাজধানী পাটালিপুত্র দেখে চোখ জুড়িয়ে গিয়েছিল ফা হিয়েন এর। অভিভূত হয়েছিলেন এই স্থাপত্যের গায়ে অপূর্ব সব কারুকার্য দেখে তাঁর মনে হয়েছিল এই অসাধ্য সাধন মানুষের কর্ম নয় কোন দৈত্য -দানব গড়ে দিয়েছেন মন্ত্রবলে। দুর্গম মরুপথ পেরিয়ে খোটানের মাটিতে পা দিয়ে চোখ জুড়িয়ে গিয়েছিল পর্বত ঘেরা সবুজ প্রকৃতির দিকে তাকিয়ে। তাঁর লেখায় পাওয়া যায় খোটানের শোভাযাত্রার সুন্দর বর্ণনা। এখানে সোনা রুপা আর দামি দামি রত্ন দিয়ে সাজানো বিহার দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন। এক এক করে ঘুরেছিলেন গান্ধার তক্ষশীলা পেশোয়া মথুরা শ্রাবন্তী কোপিলাবস্তু লুম্বিনী বৈশালী ইত্যাদি বুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত সকল স্থান। বৈশালীর বিহারেই জীবনের শেষ দিনগুলো কাটিয়েছিলেন বুদ্ধদেব। এই নগরী ছিল বুদ্ধদেবের শেষ কর্মস্থল।
এবার আসি আর এক বিখ্যাত বৌদ্ধ ভিক্ষু হিউয়েন সাং এর স্মৃতিকথায় ভারতের ছবি। তিনি ছিলেন বিখ্যাত বৌদ্ধ ভিক্ষু, পন্ডিত পর্যটক ও অনুবাদক। চীন এবং ভারতীয় বৌদ্ধ ধর্মের মধ্যে যোগসূত্র স্থাপন করেছিলেন তিনি। মূলত বুদ্ধের নিদর্শন এবং স্মৃতিধন্য স্থান সমূহ পরিদর্শন করা এবং গৌতম বুদ্ধ সম্পর্কিত রচনা সংগ্রহ করে নিয়ে যাওয়ার জন্য তিনি ভারতবর্ষে এসেছিলেন।বুদ্ধের প্রকৃত ধর্মকে জানতে, দেখতে সেখানকার পবিত্র তীর্থস্থানগুলো, বুদ্ধের পায়ের ছোঁয়ায় ধন্য ধূলিকণাকে স্পর্শ করতে চেয়েছিলেন। হিউয়েন সাং এর মন প্রাণ নিবেদিত ছিল বৌদ্ধ ধর্মের প্রতি। ভারতবর্ষের দৈনন্দিন জীবনের খুঁটি নাটি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে না দেখলেও তবু ও চলতে ফিরতে যা চোখে পড়েছে তা তাঁর বর্ণনায় সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে। কাশ্মীর প্রসঙ্গে বলেছেন-প্রচুর ফুল ফল ও ফসল হয় এখানে। মানুষজন দেখতে সুন্দর কিন্তু অসৎ এবং চালাক । লেখাপড়ায় অনুরাগী। তাঁর লেখা থেকে থানেশ্বর রাজ হর্ষবর্ধন সম্পর্কে আমরা অনেক কিছু জানতে পারি। পুরুষপুরে তিনি যখন পৌঁছেছিলেন তখন তা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। এখানে তিনি আখের গুড়ের সঙ্গে পরিচিত হয়েছিলেন। পরবর্তীতে আখের গুড় থেকে চিনি তৈরি করার পদ্ধতি চীনারাই শিখিয়েছিলেন তাই এমন নামকরণ।
দুচোখ ভরে দেখেছিলেন বুদ্ধের জন্মস্থান কপিলাবস্তু। মায়া দেবীর ঘর, লুম্বিনী উদ্যান। মুগ্ধ হয়েছিলেন পাটালিপুত্র রাজপ্রাসাদ দেখে যদিও গুপ্ত সম্রাটদের সময়ের জৌলুস জাঁকজমক জেল্লা কিছুই ছিল না। স্বপ্নের বিদ্যাপীঠ নালন্দা। পাহাড়ের চূড়ার মত সৌধের মাথা আর অপূর্ব স্তম্ভের গায়ে কারুকার্য । সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত নিয়ম শৃঙ্খলার ছন্দে বাঁধা সকলের জীবন। মঠের নিয়ম কানুন কঠোর। সকাল থেকে রাত্রি পর্যন্ত চলে শাস্ত্রপাঠ, ধর্মের আলোচনা। বিদেশের পণ্ডিতরা এখানে আসেন ধর্ম বিষয়ে সন্দেহ দূর করতে। হিউয়েন সাং এসেছিলেন অধ্যক্ষ শীলভদ্রের সময়। তিনি শশাঙ্কের রাজধানী কর্ণসুবর্ণে এসেছিলেন। এখানকার উর্বর জমি, ফসলের প্রাচুর্য, খাবার দাবারের প্রাচুর্য, সুন্দর আবহাওয়া, মানুষে মানুষে সৌহার্দের বাতাবরণ তাঁকে মুগ্ধ করেছিল।
প্রাচীন কাল থেকেই ইতালির বণিকদের সাথে প্রাচ্যদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে সেরা জিনিসগুলো ইতালীয় বণিকদের হাত ধরে পৌঁছে যেত ইউরোপের বিভিন্ন বাজারে। ইতালির ভেনিস শহর এক সময় ঐশ্বর্যে ফুলে ফেঁপে উঠেছিল। ‘মার্চেন্ট অব ভেনিসে’ তার বর্ণনা পাওয়া যায়। ভেনিসের এক বণিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন মার্কো পোলো। বাবা নিকোলোর হাত ধরে একদিন পৌঁছে গিয়েছিলেন মঙ্গল সম্রাট কুবলাই খানের রাজ দরবারে। জহুরির চোখ এক পলকেই বুঝে নিলেন মার্কো পোলো কোন সাধারণ ছেলে নয়। কুবলাই এর সংস্পর্শে মার্কো পোলো জ্বলে উঠেছিল, সেই দিগন্ত বিস্তৃত শিখার আলো ছড়িয়ে পড়েছিল সমগ্র বিশ্বে। তাঁর ভ্রমণ কাহিনী ইউরোপীয়দের মধ্যে নব উন্মাদনার সৃষ্টি করেছিল। কুবলাই খানের সান্নিধ্যে কাটিয়েছিলেন ১৭ বছর। কুবলাই খা তাঁকে খাঁচায় আটকে না রেখে উড়তে দিয়েছিলেন দূর দূরান্তের আকাশে। ওড়া শেষে যখন ফিরে আসতেন তখন কুবলাইখা অভিভূত হয়ে শুনতেন মার্কোর ভ্রমণ কাহিনী। তিনি ছিলেন বিশ্ব পর্যটক। তাঁর আগে কেউ পৃথিবীর এত বিশাল পরিধি জুড়ে ভ্রমণ করেননি। বিভিন্ন দেশ ঘুরে তিনি প্রকাশ করেছিলেন তাঁর ভ্রমণ কাহিনী।
এশিয়া সম্পর্কে জানার জন্য মার্কোর পান্ডুলিপি জ্ঞানের খনি। মার্কোর ভ্রমণ কাহিনী পড়েই ক্রিস্টোফার কলম্বাসের চোখ রাঙা হয়ে উঠেছিল অজানা পৃথিবী আবিষ্কারের স্বপ্নে। তিনি ভারতবর্ষের ভিতরে প্রবেশ করেননি। সমুদ্র তীরবর্তী কিছু জায়গায় তিনি এসেছিলেন যেমন করমন্ডল উপকূল। প্রচুর মণিমুক্তা পাওয়া যায় সেখানে। এখানকার মানুষরা সারা শরীরে অলংকার হিসেবে মনি মুক্তা পরে। মূর্তি পূজার প্রচলন ছিল। প্রজারা সকলেই সুখী। চোর ডাকাতের উপদ্রব নেই। সকলেই নিয়ম শৃঙ্খলা মেনেই চলেন। এরপর তিনি তেলেঙ্গানা হয়ে গিয়েছিলেন মহীশূর। তেলেঙ্গানার সুতোর পোশাকের প্রশংসা করেছেন। তার কথায় মহীশূর ব্রাহ্মণদের জন্মভূমি। এরা ভীষণ ধার্মিক কখনো মিথ্যে কথা বলে না। অপরের জিনিসের প্রতি লোভ নেই ।এরা দীর্ঘায়ুর অধিকারী। যেহেতু তাদের খাওয়া-দাওয়া অল্প আর তারা সংযমী। গুজরাটে তিনি দেখেছিলেন বিরাট বন্দর। এখান থেকে জিনিসপত্র জাহাজ ভর্তি হয়ে চলে যায় বিদেশের বাজারে। তিনি জীবিত অবস্থায় সম্মান পাননি। দেশের মানুষের কাছে তিনি ছিলেন মিথ্যাবাদী, তাঁর কথাগুলো ছিল বানানো, মনগড়া ,রূপকথা। মৃত্যুশয্যায় তাঁকে বাধ্য করা হয়েছিল সবকিছুকে মিথ্যে বলে স্বীকার করে নিতে। যদিও তাঁর কথার মধ্যে কিছু অতিরঞ্জন ছিল, তবুও তা ছিল মহা মূল্যবান জীবন্ত দলিল যা তাঁকে মৃত্যুর পরে বিখ্যাত করেছিল।
আফ্রিকার ইতিহাস বিখ্যাত পর্যটক ইবন বতুতা পৃথিবী ভ্রমণের নেশায় দেশ ছেড়ে একদিন বেরিয়ে পড়েছিলেন। ঘুরতে ঘুরতে এক সময় হাজির হয়েছিলেন দিল্লির সুলতান বিন তুঘলকের রাজ দরবারে। বিন তুঘলক তাঁকে দূত হিসেবে পাঠিয়েছিলেন চীন দেশে। ভারতবর্ষের দীর্ঘদিনের ভ্রমণ অভিজ্ঞতায় খুঁটে খুঁটে দেখেছিলেন এদেশের নাড়ি নক্ষত্র। যা পরবর্তীতে জীবন্ত হয়ে উঠেছে তাঁর লেখনীতে। নিখুঁতভাবে এঁকেছিলেন বিন তুঘলককে। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী অথচ ধৈর্য্যহীন ছটফটে পাগল লোক ছিলেন। তাঁর বিবরণীতে বাংলাদেশের জনজীবনের এক অপরূপ চিত্র ফুটে উঠেছে। তিনি অকপটে স্বীকার করেছেন বাংলাদেশের মতো শষ্যের কম দাম পৃথিবীর আর কোথাও নেই। এখানে মানুষজন খুব কম খরচে সুখে স্বাচ্ছন্দ্যে জীবন যাপন করে। উর্বর জমি, খাদ্যশস্য ফলমূল কোন কিছুর অভাব নেই। জগত বিখ্যাত ঢাকায় মসলিন দৃষ্টি কেড়েছিল ইবন বতুতার,যা তিনি কিনেছিলেন। পাশাপাশি তৎকালীন সমাজ ব্যবস্থায় প্রচলিত সতীদাহ প্রথার বীভৎস দৃশ্য দেখে তিনি ব্যথিত হয়েছিলেন। ইবন বতুতার বিবরণ থেকে রাষ্ট্র ব্যবস্থারও অনেক তথ্য আমরা জানতে পারি।
তিনি ভারতবাসীর ধর্মীয় বিশ্বাস আচার-আচরণ জীবন যাপনের প্রণালী গভীরভাবে অধ্যায়ন করেছেন। তিনি অকপটে ভারতের ভালো এবং মন্দ দিকগুলো নিখুঁতভাবে তুলে ধরেছেন নিজস্ব অননুকরণীয় শৈলীতে। প্রত্যেকটি খুঁটিনাটি অভিজ্ঞতা গেঁথে গেঁথে তৈরি করেছেন ভারতীয় জনজীবনের নকশা। বাস্তবের উপর কোন রং চাপাননি। ভালো-মন্দ সব লিখে গেছেন নির্দ্বিধায়।
ওদের চোখে মোদের ভারত পড়ে বর্তমান ভারতের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলে এক করুণ ও মর্মান্তিক চিএ ফুটে ওঠে যা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অনেক আগেই অনুধাবন করেছিলেন এবং তার জন্য তাঁর অনুতাপও পরিলক্ষিত হয়। আশা, পত্রীর বই পাঠকদের ভারতবর্ষের এক চিরায়ত ঐতিহ্যের সন্ধান দেবে।