মহম্মদ মানিক প্রসঙ্গ

by Abu Siddik

আবু সিদ্দিক

৬-ই অক্টোবর ২০২২ মহম্মদ মানিক প্রায় সব খবরের শিরোনামে।“Mohammed Manik saved the lives of 10 Hindus by jumping into the river during Puja” (thehindustangazette.com)। টেলিগ্রাফ খবর শুরু করেছে এভাবে,“Mohammad Manik, 28, would visit the banks of the Mal river every year on Dashami and watch, fascinated by the bustle and spectacle of Durga immersions. This Dashami, he was called on to act. The devout Muslim youth jumped into a turbulent Mal, risking his life to save people who had been caught unawares by a sudden swell in the river, caused by heavy rain in its catchment area” (telegraphindia.com)।  আমার পরিচিত ফেবু-বন্ধুদের ওয়াল ভরে গেল মানিকের ছবিতে। প্রচুর লাইক, কমেন্ট, প্রশংসা জুটলো মহম্মদ মানিকের কপালে।  আর জুটবেই বা না কেন? নিজের জীবন বাজি রেখে কমকরে ১০ জন মৃতপ্রায় কে হড়পা বানের কবল থেকে উদ্ধার করেছে জলপাইগুড়ির এই অচেনা অজানা গ্রামের ছেলে।  

ফেবুতে অনেক কমেন্টের মধ্যে একটি কমেন্ট একটু ভিন্ন ধরনের ঠেকলো। আর তাতে থেকেই এই পোস্টের অবতারণা। ভদ্রলোক লিখেছেন মহম্মদ মানিক না হয়ে মানিক মণ্ডল হলে খবরের এত বাড়াবাড়ি হত কি? যেই এই প্রশ্ন, সঙ্গে সঙ্গে তার হিন্দু-মুসলমান বন্ধুরা তাকে তুলোধোনা শুরু করেছে, এখনো করছে।  

ভদ্রলোকের দোষ কী? আমি তো অন্যায় কিছু দেখছি না।জীবন বাঁচানো মহৎ কাজ। এখানে কোন দ্বিমত থাকতে পারে না। কিন্তু কেন যেন মনে হচ্ছে খবরটি ভাইরাল হচ্ছে শুধুমাত্র মানিকের সাহস, সহানুভূতি ও হিরোইজম-এর জন্য নয়। এর পেছনে আছে অন্য ধরনের এক ইঙ্গিত। এক মুসলমান মানিক দশ হিন্দুর প্রাণ রক্ষা করেছে, এই জন্য।

যাহারা মানিকের খবর পোস্ট করছেন তাদের মনেও এই সুপ্ত সাম্প্রদায়িক ভাবনা কাজ করছে। সাম্প্রদায়িক ভাবনা ছাড়া এই পোস্টের এত গুরুত্ব পাওয়ার কথা নেই। যেন বন্ধুরা (হিন্দু-অহিন্দু) বলতে চাইছেন সব মুসলিম খারাপ নয়। সব মুসলিম গোঁড়া নয়। মানিককে দ্যাখ সে প্রতিবছর প্রতিমা বিসর্জন দেখতে যায়।  সকলের সঙ্গে হৈ-হুল্লোড় করে। নাম তার মহম্মদ হলেও সে গোঁড়া নয়। এই মানিক হল বাংলার সাম্প্রদায়িক সম্প্রিতির এক উজ্জ্বল মুখ।তাই তো সেলিব্রেটিরাও মানিককে নিয়ে টুইট ঝড় তুলছেন। মণ্ডল মানিক হলে হয়তো এতটা হতো না।

আর একবার হড়পা বান মাল নদীতে না এলে আমরা কেউই মহম্মদ মানিক কে মনে রাখব না। কারণ এযুগ হুজুগের যুগ। হিরো হওয়া যায় কয়েক মিনিটের জন্য।কয়েক ঘন্টার জন্য। তারপর যা কার তাই। কাহারও কিছু এসে যায় না। তাই এই মহম্মদ মানিককে কালকে আমরা ভুলতে বাধ্য। আজ যতই আল্লাদিত হয় না কেন!

আর মুসলমানদের মন্দির প্রাঙ্গণ ঝাড় দেওয়া, মুসলমানদের মন্দিরের জন্য জমি দান করা, মুসলামানদের মা মনসার মন্ত্র পাঠ করা, মুসলমানদের হিন্দুদের উৎসবে যোগদান করা, ইত্যাদির খবর আমার যেসব বন্ধুরা ঘটা করে ফেবুতে ছাড়েন, তারা সম্পূর্ণরূপে অসাম্প্রদায়িক একথা বলতে পারি না।কোথাও না কোথাও তাদের মনে সুপ্ত সাম্প্রদায়িক চেতনা কাজ করে। না হলে এসব পোষ্ট করার কোন কারণ দেখি না। মুসলমানরা এসব সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির কাজ যুগ যুগ ধরে করে আসছে। এতে অবাক, আল্লাদিত, বিস্ময় প্রকাশ করার তেমন কিছু দেখি না।  

আর যাই হোক, এভাবে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি হয় না। মুসলমানদের মুসলমান হিসেবে দেখুন, এবং উনাদের অবহেলা বঞ্চনার কথা তুলে ধরে উনাদেরকে সামাজিক, সাংস্কৃতিক অর্থনৈতিক রাজনৈতিক সাম্যের পথ দেখান। তাহলে এসব আজেবাজে পোষ্ট আর করতে হবে না। দম পাবেন। বুকে বল পাবেন। হৃদয়ে পাবেন তরতাজা বাতাস। মানে অক্সিজেন।      

You may also like