অবচেতনে যাদের মুখে অন্যের গাওয়া গান
বুঝতে তাদের হবে-এটা একুশের অপমান।
বাংলা
-
-
তিনি প্রকৃত ছিলেন একজন সমাজ সংস্কারক। জাতিভেদ, অস্পৃশ্যতা, কুসংস্কার দূরিকরণে সারা জীবন তিনি অন্তহীন প্রচেষ্টা চালিয়ে গেছেন। জাতিভেদ প্রথা হলো এমন একটি সমস্যা যার অভিশাপ থেকে আজও ভারতবর্ষ মুক্ত নয়। জাতিভেদ, অস্পৃশ্যতা একটি জাতির প্রগতির পথে বড় বাধা, বড় অন্তরায়। আমরা এই একবিংশ শতাব্দিতেও পারিনি এসবের উর্ধ্বে উঠতে, পারিনি কুসংস্কার ও হিংসা মুক্ত উচ্চ মননশীলনের অধিকারী হতে।
-
যাই হোক, সংস্কৃত থেকে জাত ভারতীয় অন্যান্য ভাষার মত বাংলা ভাষাতেও কথ্য স্তরে পানি শব্দ একসময়ে সার্বজনীনভাবে প্রচলিত ছিল। তাছাড়া এটাও বোধ হয় জানা যে, ‘জল’ যেমন সংস্কৃত উৎসের, তৎসম শব্দ: ‘পানি’-ও তেমনি সংস্কৃত উৎসের, তবে তদভব। ‘পানীয়’ থেকে পানি। তা না জেনেই এক শ্রেণীর হিন্দু বাঙালি ‘পানি’-র উপর বিদ্বেষ নিয়ে বসে থাকেন। ‘যবন’ স্পর্শদোষে পানিকে যেন কুল হারাতে হল। কিন্তু অভিধানে যখন এই বিকৃত মানসিকতার পরিচয় পাই তখন দুঃখ হয় বৈকি। একটু লক্ষ্য করলে দেখা যাবে যে, বেশীরভাগ হিন্দু অভিধান-প্রণেতার অভিধানেই জল শব্দের প্রতিশব্দ হিসেবে ‘বারি’ ‘সলিল’ ইত্যাদি শব্দের দেখা পাওয়া গেলেও ‘পানি’ কথাটির দেখা পাওয়া যায় না বললেই চলে। এটা অচেতন নয়, সচেতন বর্জন- এটাই বিপদের কারণ। মুসলিম শাসকরা চৌদ্দঘাটের পানি পান করে বাংলায় এসেছিলেন। তাই তাদের উত্তরসূরীরাও পানি দখল করলেন আর সেই দুঃখে হিন্দুরা পানি ছেড়ে জল ধরলেন।
-
যেখানেই বাঙালি সেখানেই ভোটে হিংসা, রক্তপাত, সন্ত্রাস। পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা ভারতের এই দুই রাজ্য ও প্রতিবেশী বাংলাদেশে নির্বাচনে রক্তপ্রবাহের দৃশ্য সবচেয়ে বেশি। কয়েক বছর আগেও বিহারকে আমরা জঙ্গলরাজ বলতাম। কিন্তু হিংসার আবহে বাংলা এখন কয়েক যোজন এগিয়ে। ভারতের অন্য রাজ্যে যখন রক্তপাতহীন ভোট প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়, তখন বাঙালি অধ্যুষিত রাজ্য বা দেশে নির্বাচনে রক্তপাত অতি স্বাভাবিক ঘটনা। বাঙালির এ বড় লজ্জা!
-
রাজনৈতিকভাবে সচেতন মানুষ, যাদের মধ্যে মানবতার প্রতি চেতনার প্রতিফলন পরিলক্ষিত হয়, ন্যায় অন্যায়ের পার্থক্য করতে পারে, সমাজের মাঙ্গলিক চিন্তার চর্চা করে তারা কিন্তু বামপন্থী রাজনৈতিক চেতনার প্রতি আস্থা রেখে আগামী দিনের সুখী সমৃদ্ধ রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখে। ব্রিটিশ শাসনাধীন উপনিবেশিক সময় কাল থেকে অধুনা পুঁজিবাদের আশ্রয় পুষ্ট বিশ্বায়নের যুগেও সেই ধারা বহাল আছে। সমস্যা হল, বামপন্থী রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির নিবিড় পাঠ, পরিকল্পিত অনুশীলন আর স্বচ্ছ প্রয়োগ নীতির যে ব্যাপক চর্চার পরিবেশ দরকার, সেটাই গড়ে তোলা সম্ভব হচ্ছে না।