কবিতা মেধার শুধু নয়, হৃদয়েরও মানবিক উচ্ছ্বাসের প্রকাশ তা তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন। তাই একদিকে শিশুতোষ জীবনের মর্মরিত আলোক সত্তা তাঁর কবিতায় প্রশ্রয় পেয়েছে, অপরদিকে মানবিক রসের প্রগাঢ় রূপায়ণ ঘটেছে। রোমান্টিক সত্তার সঙ্গে চিরপ্রেমিক সত্তা সংযুক্ত হয়েছে। যেখানেই মানবসংহার সংঘটিত হয়েছে, যেখানেই বিদ্বেষের বিষবাষ্প উঠেছে— কবি সেখানেই তাঁর প্রেমের অমৃতবাণী শুনিয়েছেন।
মুর্শিদাবাদ
-
-
বর্তমানে মালদা মুর্শিদাবাদের পোলু চাষ একেবারে লুপ্ত। লোকবিশ্বাস টোটকা মন্ত্র এই সব হারিয়েছ সময়ের বিবর্তনে। এখন আর এসবের চর্চা নেই। এসব গল্প কেউ বলতেও পারে না। এক দুই দশকের মধ্যে মালদা মুর্শিদাবাদের রেশম চাষ সম্পূর্ণভাবে লুপ্ত হয়ে যাবে। চাষীদের বিশ্বাস সংস্কার যা কিছু আছে তাও সম্পূর্ণ লুপ্ত হয়ে যাবে। গল্পকথা সংস্কারগুলি সংরক্ষণ করে না রাখলে আগামী প্রজন্ম হয়তো অতীত ইতিহাস সম্পর্কে বা তুঁতচাষা মানুষের জীবন সংস্কার চর্চার কথা জানতে পারবেনা ।
-
আবুবাক্কার একক কন্ঠে কাহিনীগান করলেও প্রত্যেক চরিত্রের কথা তার নিজ নিজ ভাষা ও ঢঙে করতেন। কাহিনী কথনের এই নাটকীয়তা তাঁকে কাহিনীকারদের জগতে রাজা করে রেখেছে। তিনি অবলীলাক্রমে মহিলা চরিত্রের ক্ষেত্রে মহিলা কন্ঠে কথা বলতে পারতেন এবং মহিলা কন্ঠে গানও গায়তে পারতেন।
-
একদিন চুপিচুপি বাড়ির কিষান ফেরেসতুল্লার সঙ্গে বাল্য বয়সে গিয়েছিলেন আলকাপের আসরে।তাঁদের গ্রামের কয়েকটি গ্রাম পরে, শ্রীপুরে। তখনও তিনি স্কুলে ভর্তি হননি। সময়ের পূর্বেই পৌঁছে যান। অধিক কৌতূহল নিয়ে ঢুকে পড়েন তৎকালীন সর্বশ্রেষ্ঠ আলকাপ শিল্পী রিয়াজুদ্দিনের ডেরায়। তাঁরা তখন খানাপিনায় ব্যস্ত। বালক কাশেমকে ডেকে নেন খেতে। খাওয়া হলে দু’আনা পয়সা দিয়ে বলেছিলেন ফিতা এনে দিতে। কাশেম ছুটে যান দোকানে। দামদর করে ফিতা কিনেন ঠিকই কিন্তু পকেটে হাত দিয়ে দেখেন পয়সাটা নেই। ভয়ে ফিরে আসতে পারেননি। রিয়াজুদ্দিন সাহেব লোক পাঠিয়ে ধরে আনেন। ঘটনা শুনে তাঁর মনে হয় পয়সাটা সে খেয়ে নিয়ে এখন মিথ্যে কথা বলছে। সটান কষে দেন একটা থাপ্পড়। বালক কাশেম উল্টে পড়েন এবং জ্ঞান হারান। কয়েকজনের শশ্রুষায় সুস্থ হয়ে উঠেন এবং আসরে বসে গান শোনেন। সেদিনই তিনি প্রতিজ্ঞা করেন, তিনিও একদিন কবিয়াল হবেন এবং রিয়াজুদ্দিন সাহেবকে প্রতিযোগিতায় হারাবেন।