রক্তিম নতুন অফিসে জয়েন করেছে সদ্য। আজ কাজের চাপ একটু কম ছিল। ছুটির পর রাস্তায় নামার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই একটা এসি বাস পেয়ে গেল সে। উঠে দেখল, একটা টু-সিটার তখনও খালি। রক্তিম পরমানন্দে সেটায় বসে পড়ল।
সে বসার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই তার পাশের আসনে বসে পড়লেন যে মধ্য পঞ্চাশের ভদ্রলোক, তিনি তার নতুন অফিসেরই অন্য কোনও ডিপার্টমেন্টের কর্মী। মুখচেনা, কিন্তু পরিচয় নেই। পরিচয় পর্ব শুরু হয়ে গেল অচিরেই। ঠিক সেই সময় তাদের পাশে এসে দাঁড়াল একটি মিষ্টিমুখের অল্পবয়সি তরুণী। বয়স বড়জোর বাইশ কি তেইশ ।
রক্তিম অবাক হয়ে দেখল, ভদ্রলোক ক্ষণে ক্ষণে আড়ে আড়ে জরিপ করে চলেছেন মেয়েটিকে। আর সেটা করতে গিয়ে কথার খেই হারাচ্ছেন ঘন ঘন। শুধু তাই নয়, উঠে দাঁড়িয়ে মেয়েটিকে বারবার সনির্বন্ধ অনুরোধ জানাচ্ছেন তাঁর জায়গায় বসার জন্য। মেয়েটি অবশ্য কিছুতেই তাতে রাজি হচ্ছে না। রক্তিম এসবে একটু বিরক্তই হচ্ছিল। হাঁটুর বয়সি একটা মেয়েকে নিয়ে একজন বয়স্ক লোকের এই আদিখ্যেতা শুধু অসহ্যই লাগছিল না, রীতিমতো অশ্লীল মনে হচ্ছিল তার।
ইতিমধ্যে বাস কিন্তু ভরে উঠেছে অনেকটাই। আর ঠিক তখনই ঘটনাটা ঘটল। থেকে থেকেই মেয়েটির গায়ের ওপর উঠে পড়ছিল এক গ্রাম্য অশীলিত যুবক। মেয়েটি ভদ্রভাবে তাকে সরে দাঁড়াতে বলায় আগুনে একেবারে ঘি পড়ল। যুবকটি প্রচণ্ড আক্রোশের সুরে তাকে বলল, ‘আমি ঠিকই আছি, আপনি বরং ঠিক করে দাঁড়ান।’ ব্যাস, রক্তিমের সহকর্মী ভদ্রলোক সঙ্গে সঙ্গে একেবারে তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠলেন। রীতিমতো তুলকালাম কান্ড বেঁধে গেল। মহাখাপ্পা যুবকটি এবার ঘুষি বাগিয়ে মারতে গেল তাঁকে। বাসের বাকি লোকজন কোনওক্রমে সামাল দিল পরিস্থিতি। যুবকটিও বিপদ বুঝে পরের স্টপেই নেমে গেল তড়িঘড়ি।
একটু বাদেই এসে গেল রাসবিহারী মোড়। রক্তিম নেমে পড়ল। নেমে পড়লেন তার সহকর্মীও। দু’জন দু’দিকে যাবে। যাওয়ার আগে রক্তিম কিছুটা উপযাচক হয়েই তাঁকে বলল, ‘আজ আরেকটু হলে কিন্তু ওই বদ ছেলেটা আপনাকে মেরেই বসত। রাস্তাঘাটে অত মাথা গরম করবেন না দাদা, দিনকাল ভালো নয়।’ ভদ্রলোক বললেন, ‘মাথা গরম করতাম না ভাই। কিন্তু ওই মেয়েটাকে দেখতে না, একদম আমার মেয়ের মতো। একেবারে হুবহু এক চেহারা।’
ভদ্রলোকের অতিরিক্ত ইনভলভমেন্টের কারণটা রক্তিম এতক্ষণে বুঝতে পারল। বলল, ‘তাই বলুন। তা কী করে আপনার মেয়ে? চাকরি? না, এখনও পড়াশোনা চালাচ্ছে?’ ভদ্রলোকের গলাটা এবার একটু বাষ্পাচ্ছন্ন শোনাল। বললেন, ‘কিচ্ছু করে না ভাই। ওপরে চলে গেলে কি কিছু আর করা যায়? দু’বছর আগেই আমাদের সব শেষ হয়ে গেছে ভাই। অনেক চেষ্টা করেও মেয়েটাকে বাঁচাতে পারিনি।’