‘খুদা, জীবন লদীর ছেছ বাঁকে আছ্যা আমার  এ্যাখুন মুনে পড়চে, আমি এ্যাকডা পাপী। য্যামুন ত্যামুন পাপী লই; বিরাড পাপী। জুয়ান কালে আমি এ্যাকডা ডাকাত চিনু। ভয়ংকর ডাকাত। আমার দাপটে গাঁয়ের মানুছ ছবাই চুপ করে থাকতোক। চোক আমার ছব ছুময় ছিঁদুরের মুতো লাল হয়ে থাকতোক। আমার চোক দেকেই মানুছ আমাকে ভয় করতোক। ফলে য্যাখুন যে পাপ কত্তে মুন চাহালচে ত্যাখুন ছে পাপ করেচি। কাহুকে কুনু ডর করিনি। এ্যামুন কী তুমাকেও না। কিন্তুক এ্যাখুন খুব ভয় কচ্চে। মরার পরে আমার কী হবে? আমার কী হবে? তাই, এ্যনেক পাপের মধ্যে থিক্যা বাচাই করা দুড্যা পাপ তুমাকে ছুনাবো। ছুনান্যার পর তুমার কাচে ক্ষ্যামা চাহাবো। তুমি আমাকে ক্ষ্যামা করে দিও খুদা, তুমি আমাকে ক্ষ্যামা করে দিও। 

  

রোযদার হিকমত মিয়ার ছাতে রমযান মাছে গণ্ডগোলঃ-

   রমযান মাছের ছেদিন বিছ তারিক চিল। বিছডা রোযা তাই বিছ তারিক। হিকমত মিয়া ছেদিন আছরের নামাজ পড়ে মছজিদ থিক্যা বার হয়ে কাচের এ্যাকডা মাচানে বছেচিল। বছে ছুময় কাটাচিল। ঘণ্টা খ্যানেক ছুময় কাটাতে পাল্লেই দাঁতন করার ছুময় হয়ে যাবে। বাকি ছুময়ডা তারপর দেকতে দেকতে চলে যাবে। আমি ত্যাখুন অই মাচানে আছ্যা বছেচিনু। বছে জামার পকেট থিক্যা বিড়ি-দিয়াছলাই বার করে এ্যাকডা বিড়ি ধরালচিনু। ধরিয়ে টানতে ছুরু করেচিনু। বিড়ি থিক্যা চিমনির মুতো ধুমা বার হচিল। ধুমার গন্ধে হিকমত মিয়া খুক খুক করে দু-তিনবার কেছেচিল। কেছে বুলেচিল, ‘তুই এ্যাকটা কী ছেলে বুল তো, ফকরুল! রোযা রমযান মাসে দিনের বেলায় মানুষের সামনে এভাবে কেহু বিড়ি টানে! রোযদার মানুষের সামনে বিড়ি টানা এ্যাকদমই হুকুম নাই। হাদিসে কঠিন ভাবে নিষিদ্ধ আছে। রোযদার মানুষের অতে ক্ষতি হয়। খুব ক্ষতি হয়। এসব তুই মানবি ন্যা!’

   আমি উত্তরে হিকমত মিয়াকে বুলেচিনু, ‘তুমি রোযদার মানুছ না খাওয়া মানুছ আমি তা জানবো কীভাবে? তাহিলে আমি য্যাখুন বিড়ি ধরাচিনু ত্যাখুন তুমার বুলা উচিৎ চিল যে, তুমি রোযা আচো; আমি যেন বিড়ি না ধরাই। তাহিলেই আমি বিড়ি ধরাতুক না। কিন্তুক তুমি তা বুলোনি। বুলেচো? এডা তুমারই ভুল।’

   ‘বুলার সুময় দিলি কই, যে বুলবো? বসা মাত্রই তো বিড়ি ধরিয়ে টানতে লাগলি। তুই মাচান থেকে নেমে যা! আমার ভিতর ক্যামুন আঁকপাঁক কচ্ছে।’

   অমনি আমার তার ওপর রাগ হয়ে গেলচিল। আমাকে নেমে যাতে বুলল! তারপরই আমি তাকে মাচান থিক্যা ডেনে ফেলে দিয়েচিনু, ‘ভয়ে আমার ছাতে কেহু কথা বুলতে ছায়ুচ পায় না। আর ছালা তুমি আমাকে মাচান থিক্যা নেমে যাতে বুলো! তুমার এ্যাতো বড়ো ছায়ুচ!’

   মাচানের নীচে ডেন চিল। অই ডেন দিয়ে পাড়ার  য্যাতো পানি নামতোক। আমি অই ডেনে ফেলে দিয়েচিনু। ডেনে পড়ে ছে আর উঠতে পারেনি। ওখ্যেনেই মরে গেলচিল। বয়ছ্ক লোক না! এ্যাক আচাড়েই মরে গেলচিল। মাথার ঘেলু বার হয়ে। 

  

ধরমপুর গাঁয়ে ডাকাতি কত্তে গিয়ে এ্যাকডা কচি বাচ্চা খুনঃ-

   অই ঘটনার ঠিক ছাতদিন আগে আমি ধরমপুরে ডাকাতি কত্তে গেলচিনু। ধরমপুর লদীর অই পারের এ্যাকডা গাঁ। পাথরঘাটা, ছঙ্করপুর তারপর ধরমপুর। হিন্দু-মুছলমান মিলেমিছে গাঁ। ধরমপুরের কথা লোক মুখে আমার আগেই ছুনা চিল যে, ধরমপুরে এ্যানেক মালদার লোক আচে। পাকা বাড়ি আচে। ছুতরাং ধরমপুরে ডাকাতি কল্লে খালি হাত, পা লিয়ে ফিরতে হবে না। বেছ মালধন পাওয়া যাবে। কিন্তুক হটাক করে কি যাওয়া যায়! রাছ্তাঘাট চিনহার দরকার আচে। ডাকাতি করে বেরিয়ে আছতে হবে না! রাছ্তাঘাট চিনহা না থাকলে বেরিয়ে আছা যাবেনা। মানুছের হাতে ধরা পড়ে অঘোরে মারা পড়তে হবে। এ্যামুনডা যাতে না হয়; আগের দিন তাই আমি গাঁডা ঘুরতে গেলচিনু। অচিনহা এ্যাকডা মানুছকে গাঁয়ে ঘুরতে দেখলে গাঁয়ের এ্যনেকে ছন্দেহ কত্তে পারে। মানুছের ছেই ছন্দেহ দূর কত্তে আমি কুল্যার হকার ছেজে গেলচিনু। ইছলামপুরে খান ছাতেক কুল্যা কিনে ছাইকেলের হ্যান্ডেলে বাঁন্ধ্যা লিয়েচিনু। তারপর গাঁয়ে ঢুকে হাঁক দিতে ছুরু করেচিনু, ‘কুল্যা লিবা গো, কুল্যা! ব্যাতের ভালো কুল্যা। লাইলন দিয়ে ভালো করে বাঁন্ধা আচে। য্যাতোই জিনিছ ঝাড়ো বাঁন্ধন খুলবে না।’

   হাঁক দিচিনু আর রাছ্তাঘাট দেকচিনু, বাড়িঘর দেকচিনু। অবছ্তাছালী লোকের বাছ দেকতে পাচিনু। কাঁচা বাড়ি খুবই কম চোকে পড়চিল। বেছির ভাগই পাকা বাড়ি। দেকতে দেকতে এ্যাকডা রাছ্তা ধরে মাঠের ধারে চলে গেলচিনু। মাঠের ধারে এ্যাকডা পাকা বাড়ি চিল। বাড়িডার কাচে আর কুনু বাড়ি চিল না। না পাকা বাড়ি, না কাঁচা বাড়ি। বাড়িডার পিচুনে বাঁছ, পিঠ্যালুর বুন। তার পিচুনে গোরছ্থান। আর ছামনে মাটির কাঁচা রাছ্তা। রাছ্তার দুই ধারে হলুদ রাই ক্ষেত। আঘুন মাছ। পেতিডি রাই ছামনে মাছে কাটা হবে। আর ক’দিন বাদে ফুল ঝরে লিফুলে হবে। বাড়িডা ইটের পাঁচিল দিয়ে ঘেরা। তবে খুব উঁচু পাঁচিল দিয়ে লয়; গলা তড়ি পাঁচিল। উ পাঁচিল টপকান্যা আমার পক্ষে কুনু আচ্চয্য লয়। অর থিক্যা কতো বড়ো বড়ো পাঁচিল আমি—

   যাইহোক, বাড়িডার কাচে গিয়ে আমি হাঁক দিয়েচিনু, ‘কুল্যা লিবা গো, কুল্যা…’

   আমার হাড়্যা গলার হাঁক ছুনে বাড়িডার ভিতর থিক্যা বাচ্চা কোলে এ্যাকডা বউ বেরিয়ে আছ্যাচিল। পিন্ধনে তার লাল-চাপা ছাড়ি চিল। দেকতে খুব ছুন্দর লাগচিল। বেরিয়ে আছ্যা বউডা আমাকে কুল্যার দাম জিজ্ঞেছ করেচিল, ‘কুলোর দাম কত?’

   ‘এ্যাকছো টাকা।’ আমি বউডাকে কুল্যার দাম বুলেচিনু।

   আমার দাম ছুনে বউডা বুলেচিল, ‘আশি টাকা হলে একখানা দিয়ে যাও!’

   কুল্যা গালা আমার পাইকারি দরে কিনা চিল। এ্যাকেকডা কুল্যার দাম ছাট টাকা করে পড়েচিল। ছুতরাং আমি বউডাকে অই দামে এ্যাখান কুল্যা দিয়ে অকে ছুধালচিনু, ‘বাড়িতে তুমার ছ্বছুর-ছাচুড়ি কেহু থাকেনা? কাহুকে দেকচি ন্যা!’

   বউডা বুলেচিল, ‘আমার শ্বশুর-শাশুড়ি এ বাড়িতে থাকে না। ভিতর পাড়ায় আমাদের আরেক খানা বাড়ি আছে। সেখানে থাকে।

   ‘এ বাড়িতে তাহিলে কারা কারা থাকে?’

   ‘এ বাড়িতে শুধু আমরাই থাকি। আমি, আমার স্বামী আর আমাদের এই বাচ্চাটা।’

   ‘তুমার ছ্বামী কই!’

   ‘বাজারে আমাদের কাপড়ের দোকানে আছে। রাতে দোকান বন্ধ করে বাড়ি আসবে।’

   ‘এ্যাত বড়ো বাড়িতে মুটে তুমরা…তুমাধের ভয় করে না!’

   ‘ভয় করবে কেন?’

   ‘মাঠের ধারে বাড়ি। চোর, ডাকাত বুলে!’

   ‘আমাদের দেশে চোর, ডাকাত নেই। ঘরের জিনিস বাইরে পড়ে থাকলেও কেউ ছোঁয় না। কত জিনিস আমাদের বাইরে পড়ে থাকে। কাপড়ের বান্ডিল, থালাবাসন কত জিনিস। এখনও পড়ে আছে।’

   ‘তুমাধের দ্যাছ তো তাহিলে খুবই ভালো। আমাধের দ্যাছ হলে কিচু থাকতোক না। ত্যাল মাখা এ্যাকডা খুরি পর্যন্ত বাহিরে থুয়ার রুপায় নাই। ছব চুরি করে লিয়ে পালাবে। খুব ভয়ে ভয়ে আমাধের থাকতে হয়।’ 

   ‘খুব খারাপ দেশ তো তাহলে তোমাদের!’

   ‘খুব খারাপ দ্যাছ। মুন বুলে, দ্যাছের মুখে আগুন দিয়ে কুনু দ্যাছে চলে যাই। কিন্তুক যাবো বুললেই কি যাওয়া যায়? মা, বাপ, ভাইবহিন ছবাই দ্যাছে আচে। পুখোর, বাগান, জমিজমা আচে। গরু, বাচুর আচে। বিবি, বাচ্চা আচে। তাই দ্যাছে পড়ে আচি। নাহিলে কব্বে—‘

   বুলে আমি চলে আছ্যাচিনু। আছার ছুময় ত্যাকোনা ঘুরে আছ্যাচিনু। ত্যাকোনা লদী পারের আর‍্যাগডা গাঁ। কারণ, ত্যাকোনায় আমার দুই ছহকর্মী থাকতোক। আলতাফ ও রছিদ। আমি  তাধের ছঙ্গে দ্যাখা করে বুলেচিনু, ‘আমি বিছেচ এ্যাকডা ছংবাদ লিয়ে তুমাধের কাচে আছ্যাচি। ছংবাদডা তুমরা ভালো করে ছুনো!’

   ‘বুলেন!’ আলতাফ ও রছিদ কান খাড়া করেচিল।

   আমি বুলেচিনু, ‘কাল ধরমপুরে এ্যাকডা বাড়িতে ডাকাতি কত্তে যাতে হবে। আমি ওখ্যেন থিক্যাই আছচি। মাঠের ধারে বাড়ি। ছুতরাং ডাকাতি কত্তে আমাধের কুনু বেগ পাতে হবে না। ছাতে ছুধু ভুজালি-পিছ্তল লিলেই হবে। আর মালধন ভরে আনার লাগ্যা খান তিনেক বড়ো বছ্তা লিতে হবে। না, বোম টোম ল্যাওয়ার দরকার নাই। আর হ্যাঁ, ছাইকেল ঠিক আচে তো? ঠিক না থাকলে ঠিক করে লিও। কারণ, ডাকাতি কত্তে আমরা ছাইকেলে যাবো। কাল বিক্যালে আমি তুমাধের এখ্যেনে ছাইকেলে চলে আছবো। আছ্যা থাকবো। তারপর ম্যালা রেতের দিকে লদীর ধার ধরে ছাইকেল ছাড়বো।’

   ‘কিন্তুক সাইকেল থুবেন কুনঠে? ধরমপুরে তো আমাধের সেরকম কেহু চিনহাশুনা নাই।’

   তাধের এই কথার উত্তরে আমি বুলেচিনু, ‘লদীর ধারে ম্যালা রাইয়ের ভুঁই। যে কুনু রাইয়ের ভুঁইয়ে ভরে দিয়ে চলে যাবো। তারপর কাজ ছেরে ছাইকেলের পিচুনে মাল বেঁধে লিয়ে চলে আছবো।’

   ‘খুব ভালো হবে।’ আমার কথা তারা ছমর্থন করেচিল।

   এরপর আমি বাড়ি চলে আছ্যাচিনু। আলতাফ ও রছিদ থাকার জন্য খুব ধরাধরি করেচিল তা-ও চলে আছ্যাচিনু। পরের দিন বিক্যালবেলায় ফের গেলচিনু। যাইয়্যা তিন খেড়ু আলতাফের ঘরে চৌকির ওপর ছুয়ে ঘুম গেলচিনু। ঘুম যাওয়ার ছুময় আলতাফের বউ অঞ্জিলাকে বুলেচিনু, ‘অঞ্জিলা, আমরা এ্যাখুন ঘুম যাচি; ঘড়ি দেখে তুমি রাত এগারোডায় আমাধের ডাকবা।’

   অঞ্জিলা তাই-ই করেচিল। ঘড়ি দেখে রাত এগারোডায় আমাধের ডাকতে ছুরু করেচিল, ‘আপনেরা ছব উঠ্যেন! রাত এগারোডা বেজে গেলচে।’

   আমরা উঠেচিনু এবং খানিক বছে ছরীরের আলছ্য কাটিয়ে আমাধের যা ল্যাওয়ার তা লিয়ে রাত বারোডা লাগাদ রওনা দিয়েচিনু। ছারা গাঁ ত্যাখুন লিছুতি। ছুধু পাড়ার কয়েকডা কুকুর জাগ্যা চিল। আমাধের দেখে তারা কয়েকবার ঘেউঘেউ আওয়াজ করলেও আমরা ‘থাক থাক’ করায় থেমে গেলচিল। আমরা ধরমপুরে পৌঁহচে গেলচিনু। তারপর লদীর ধারে এ্যাখান রাইয়ের ভুঁইয়ে আমাধের ছাইকেল গালা ভরে দিয়ে মাঠ মাঠ হাঁটতে ছুরু করেচিনু এবং বাড়িডার কাচে পৌঁহচে গেলচিনু। ঘুটঘুটে অন্ধকার রাত। কুত্থাও কুনু লোকের ছাড়া ছব্দ চিল না। বাঁছড়া বুনে ছুধু ঝিঁঝি পোকা ডাকচিল। আর জোনাকির আলো জ্বলচিল লিভচিল। গাঁয়ের ভিতর কারেন্ট থাকলেও বাড়িডায় কারেন্ট চিল না। গাঁয়ের ভিতর থিক্যা বেছ কিছুডা দূরে বুলে বোধহয় কারেন্টের তার বাড়িডা পর্যন্ত আছ্যাচিল না। এ্যাখুনকার মুতোন হলে চলে আছতোক। এ্যাখুন য্যাতো দূরেই বাড়ি হোক, য্যাতোই মাঠের মধ্যে হোক, কারেন্টের তার ঠিক পৌঁহচে যাবে। কারেন্ট থিক্যা এ্যাখুন কুনু মানুছ বঞ্চিত হবে না। আজ থিক্যা ছেডা ত্রিছ-চল্লিছ বচর আগেকার কথা। এ্যাখুন কারেন্টের কারণেই চুরি, ডাকাতি ছব বন্ধ হয়ে গেলচে। কারেন্টের আলোয় ছব কিচু পরিছ্কার দেকতে পাওয়া যায় না! এ্যাখুন কেহু চুরি, ডাকাতি কত্তে গেলে লোকের হাতে ধরা পড়ে মার খেয়ে বড়োলোক হয়ে যাবে।

যাইহোক, বাড়িডার কাচে পৌঁহচে গিয়ে আমরা খানিকক্ষুণ চুপ করে দাঁড়িয়েচিনু। দেওয়ালে কান পেতেচিনু। বাড়ির মানুছ কী রকম ঘুমাচে বুঝার চেছ্টা করেচিনু। বাড়ির মানুছ লাক ডেকে ঘুমাচিল। আমরা লাক ডাকা ছুনতে পাচিনু। তারমানে বাড়ির মানুছ ঘুমে গলে গেলচিল। অই ছুময় পাঁচিল টপকে আমি ভিতরে ঢুকে গেলচিনু। আমার ছাতে ছাতে আলতাফও ঢুকেচিল। রছিদ পাঁচিলের বাহিরে চিল। ভিতরে ঢুকে আমি দেখেচিনু, বাহির উছরায় বাড়ির মানুছ লাক ডেকে ঘুমাচে। ঘরে ঢোকা দরজার ছামনে। হালকা ছীতে গায়ে ছবার চাদর থাকলেও মুখ ছবার আলগা চিল। কুঠির ওপর হ্যারিকেনের ডিমডিমে আলোয় দেখতে পাওয়া যাচ্চিল।

যে বউডা আমার কাচে কুল্যা কিনেচিল অই বউডা আর এ্যাকডা পুরুছ (তার ছ্বামী টামী হবে হয়তো) পাছাপাছি ঘুমাচিল। পুরুছডার হাত বউডার বুকের ওপর রাখা চিল। বোধহয় পুরুছডার হাত জাগ্রত অবছ্থায় বউডার ছ্তন লাড়চিল। আর বউডার কোলে যে বাচ্চাডাকে দেখেচিনু ওই বাচ্চাডা বিচানার এ্যাক ধারে ঘুমাচিল। বাপ-মায়ের ছাতে তার যেন কুনু ছম্পর্কই চিল না। ঘরের এ্যনেক জিনিস বাহিরে রাখা চিল। বাহিরে বুলতে উছরায়। য্যামুন, হাঁড়িকলছি, থালাবাছন,  ছেলাইমেছিন, কাপড়ের গাঁট ইত্যাদি ইত্যাদি। আমি ছেগল্যা এ্যাক এ্যাক করে লিয়ে আলতাফের হাতে দিয়েচিনু। আলতাফ ছঙ্গে ছঙ্গে বাহিরে পার করে দিয়েচিল রছিদের হাতে।

উছরার জিনিছ ছব ল্যাওয়া ছেছ হলে আমি ঘরের ছিকলি খুলে ভিতরে ঢুকেচিনু। বাপরে, ঘরে কী জিনিছ! খাটের তলা আর ছান ছাইড কুনু জায়গা ফাঁকা চিল না। ছব জায়গায় কাঁছার বাছন ছাজান্যা চিল। তার মধ্যে তছলা, ডেগচি বড়ো জিনিস গালা খাটের তলায় চিল। আজক্যার বাজারে কিনতে গেলে ছেগল্যার ম্যালা টাকা দাম। আলমারিতে ছোনার গয়না চিল। ভিতরে কাপড়ের আরও এ্যাকডা গাঁট চিল।

ছুধু কি তাই? গাদলার তলায় থাক থাক করে টাকা ছাজান্যা চিল। টাকা গালা লিয়ে ছোনার গয়না গালা লিয়েচিনু। কাঁছার বাছন গালাও লিব। ছব ছেছে কাপড়ের গাঁটডা লিয়ে ঘর থিক্যা বার হবো। ঘরে কিচু থুবো না। এ্যামুন ছুমায় বাচ্চাডা কেঁদে উঠেচিল,’ ট্যাঁ…ট্যাঁ…ট্যাঁ…’ এই গ্যালো! এব্যার তো বাচ্চার মা’র ঘুম ভেঙে যাবে। ছর্বনাছ হয়ে যাবে। অমনি আমি ঘর থিক্যা বার হয়ে বাচ্চাডাকে কোলে তুলে লিয়ে দুই ঠ্যাং ধরে মুরগী ফাড়ার মুতো করে ফড়ফড় করে ফেড়ে ফেলেচিনু এবং পাঁচিলের বাহিরে রাইয়ের ভুঁইয়ে হাত ঝেড়ে ফেলে দিয়েচিনু। আপনি ছিয়াল, কুকুরে খেয়ে লিবে।

   বাড়িডায় ডাকাতি কত্তে আমাধের এ্যাক ঘণ্টা দছ মিনিট মুতো ছুময় লেগেচিল। এ্যারপর ছমছ্ত জিনিছ বহাতে আমাধের ভোর হয়ে গেলচিল। দু-তিন খ্যাপ মারতে হয়েচিল। ছব গাঁয়ের মছজিদে ত্যাখুন আযান পড়চিল।

   খুদা, আমার বাচাই করা পাপ দুড্যা তুমি তো ছুন ল্যা, এব্যার আমাকে ক্ষ্যামা করে দিও! কথা দিচি, আজ থিক্যা তুমার বন্দেগি করবো।’
                          —————–

You may also like