স্মৃতিমেদুর অন্ধকার

সাতের দশকের দ্বিতীয়ার্ধটা জুড়ে ছিল আমাদের ছেলেবেলা। আজ যখন সেই ছেলেবেলার স্মৃতির আলোটা মাঝে মাঝে জ্বলে ওঠে, তখন তার সঙ্গে কোত্থেকে একটা ছায়াও এসে জোটে। লহমায় বুঝতে পারি, সেটা লোডশেডিংয়ের ছায়া।

তখন গরম কালটাই ছিল পাওয়ার কাটের প্রারম্ভিক সিজন। সন্ধেবেলা মাঠ থেকে বাড়ি ফিরে পড়তে বসার কিছুক্ষণের মধ্যেই আলো-টালো সব নিভে যেত। চলন্ত টিভির ঠিক কেন্দ্রে একটা আলো ক্রমশ ক্ষীণ হতে হতে অন্ধকারে ডুবে যেত। ক্লান্ত হয়ে পরিক্রমা বন্ধ করে দিত মাথার ওপর বনবন করে ঘুরতে থাকা সিলিং ফ্যানটাও। জ্বালানো হত হ্যারিকেন কি মোমবাতি। তাদের লকলকে অগ্নিশিখার দিকে চেয়ে থাকতে থাকতে মনটাকে যে কোথায় হারিয়ে ফেলতাম, কত সময় যে নষ্ট হয়ে যেত। মোমবাতির আগুনটায় আবার আড়াআড়িভাবে তর্জনী চালাতাম। আঙুল পুড়ত না। ম্যাজিক!

একসময় হ্যারিকেনের কাচটায় কার্বনের পুরু কালো স্তর জমত। মোমবাতির পাদদেশটায় মোম জমে জমে উঁচু ঢিপি হয়ে উঠত। এক হাতে একটা হাতপাখা থাকত ঠিকই, কিন্তু সেটার আস্ফালন ছিল সীমিত। আলো নিভে যাবে যে। নচ্ছার মশাগুলো তার সুযোগ নিত। আমাদের পিঠের দিকটাই ছিল তাদের ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ড। হাতপাখার ডাঁটি দিয়ে সে-দিকটা বেশ করে চুলকে নিতাম। অন্যমনস্ক হয়ে কতবার যে গালে-মুখে সেই পাখার সপাট চড় খেয়েছি, তার ইয়ত্তা নেই।

এত কষ্ট পেয়েছি, তবু মিথ্যে বলব না, অধিকাংশ দিন কিন্তু খুব আনন্দ হত। পড়ার হাত থেকে ছুটি মিলত। পা রাখতাম ঘরের বাইরে। সেখানে তবু চাঁদের আলো-টালো পড়ত। দূরে কোথাও যাওয়ার ছাড়পত্র ছিল না। উল্টো দিকের বাড়ির রকে চার-পাঁচজন বন্ধু মিলে আবার জমাতাম আড্ডা। সেদিনকারই বিকেলের খেলা নিয়ে সে কি চুলচেরা বিশ্লেষণ। আবার কখনও খেলতাম মেমারি গেম। দু’তিন ঘণ্টার আগে কারেন্ট আসত না। যেদিন আসত, সেদিন খুব মন খারাপ হয়ে যেত।

বড় প্রিয় ছিল সেই অন্ধকার। কিন্তু আজ বুঝতে পারি, পড়াশোনার ক্ষতি হয়েছে অনেকখানি। লোডশেডিং না থাকলে মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিকে আমরা প্রত্যেকেই বোধহয় ৫০/৬০ নম্বর করে বেশি পেতে পারতাম।

লোডশেডিংয়ের সেই ভয়ঙ্কর দিনগুলো কোনওদিনই যেন আর ফিরে না আসে। তবু, আজও কীরকম যেন একটা মায়ার গন্ধ রয়ে গেছে ছেলেবেলার সেই অন্ধকারে। বড় স্মৃতিমেদুর সেই অন্ধকার। নানা রঙের অনেক আলো যেন ডুবে আছে সেই অন্ধকারে।

You may also like

Vinnokatha
Prothom Khondo
Price: Rs.260/-
www.vinnokatha.in
মেহনতি মানুষের মুক্তি নিশ্চয়ই একদিন আসবে। সব ধরণের শোষণ শেষ হবে একদিন--এ স্বপ্ন আমরা দেখি। শুধু দেখি না, একে বাস্তবে কার্যকর করতে 'ভিন্নকথা' তার সাধ্যমত প্রয়াস চালিয়ে যাবে। মানুষকে সঙ্গে নিয়ে, মানুষের চেতনার লক্ষ্যে, মুক্তির লক্ষ্যে।
মেহনতি মানুষের মুক্তি নিশ্চয়ই একদিন আসবে।সব ধরণের শোষণ শেষ হবে একদিন--এ স্বপ্ন আমরা দেখি। শুধু দেখি না, একে বাস্তবে কার্যকর করতে 'ভিন্নকথা' তার সাধ্যমত প্রয়াস চালিয়ে যাবে। মানুষকে সঙ্গে নিয়ে, মানুষের চেতনার লক্ষ্যে, মুক্তির লক্ষ্যে।
Vinnokatha
Prothom Khondo