অসহায়

by কণিকা সাহা

নিথর দেহটার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছেন জীবনবাবু। স্টাফরুমে বসে খবরটা সবাই শুনেছিলেন মিড ডে মিলের দিদিদের কাছ থেকে।খারাপ লেগেছিল সবার। তারপর যা হয়! সবাই চলে গেছিলেন নিজের নিজের ক্লাসে। কিন্তু জীবনবাবু হেডস্যারের অনুমতি নিয়ে বেরিয়ে এলেন। পা চলছে না। একটা রিকশা নিলেন।

পুলিশে পুলিশে ছয়লাপ। ‘মাষ্টারমশাই’ পরিচয় দিয়ে ভেতরে গেলেন।এটাই কি সেই মিলন? চেনার উপাই নেই। হাতে, ঘাড়ে ট্যাটু।বিড়ি খেয়ে খেয়ে কালো ঠোঁট। পিছিয়ে গেলেন প্রায় তেরো বছর আগে। ক্লাস ফাইভ। মিষ্টি চেহারার চঞ্চল ছোট্টখাটো একটি ছেলে। সারাক্ষণ দুরন্তপনা করে বেড়াচ্ছে। স্যার, ম্যাডামদের বকা খেয়েও সবসময় হাসিমুখ। ওর বুদ্ধিদীপ্ত চোখদুটির দিকে তাকিয়ে জীবনবাবু কোনদিন তাকে বকতে পারতেন না। সবাই অবশ্য স্বীকার করতেন, “দুষ্টু, কিন্তু পড়াশোনায় ভালো”। স্কুলে দিতে আসতো ওর ঠাকুমা। মা নেই।বাবার সাথে বনিবনা না হওয়ায় অন্য কারো হাত ধরে ঘর ছেড়েছে। বাবা কোন এক রাজনৈতিক নেতার গাড়ি চালান। সারাদিন বাইরে বাইরেই কাটে।এত্তটুকু বয়স থেকে ঠাকুমাই মানুষ করেছে।

ক্লাস সেভেন থেকে ঘটলো ছন্দপতন। যে ছেলের ইংরেজি খাতায় একটা লাল দাগ দিতে পারতেন না জীবনবাবু, সেই ছেলের পড়াশোনায় মন নেই একদম। এত ব্রিলিয়ান্ট একটা ছেলে এভাবে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে চোখের সামনে! অনেক বোঝালেন।কোন লাভ হয় নি। ঠাকুমাকে, বাবাকে ডেকেও বলা হলো। বাবা ভ্রুক্ষেপহীন। আর ঠাকুমার চোখের জল ফেলা ছাড়া আর কী বা করার আছে!

নাইনে উঠে স্কুল ছাড়লো। জীবনবাবু বন্ধুদের দিয়ে বলে পাঠাতেন যেন আবার স্কুলে আসে।কাজ হয় নি কিছু।খুব খারাপ লাগতো। একজন মেধাবী ছাত্রের মেধা এইভাবে নষ্ট হতে দেখে।বেশ কিছু বছর কেটে গেলেও ভুলতে পারেন নি তিনি মিলনকে। এর ওর কাছ থেকে খবর নিতেন। বছর দুই আগে খবর পেলেন ও নাকি কোন এক রাজনৈতিক দলের হয়ে কাজ করছে।একদিন দেখা হয়ে গেলো রাস্তায়। পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলো।
-স্যার,ভালো আছেন?
-হুম।তোর কী খবর? এত ভালো ছেলে! পড়াশোনাটা করলি না! শোন বাবা, রাজনীতি কিন্তু খুব কঠিন জিনিস। বুঝে শুনে চলিস।
-ও সব তো কবেই ছেড়ে দিয়েছি স্যার! এখন অটো চালাই।
-খুব ভালো করেছিস, বাবা। ভালো থাকিস।

তারপর আজকের এই খবর! সাতসকালে কে বা কারা বাড়ির মধ্যে ঢুকে মিলনের মাথায় গুলি করে পালিয়ে গেছে। চোখটা ঝাপসা হয়ে আসছে। মিলনের প্রাণহীন দেহটার দিকে আর তাকিয়ে থাকতে পারলেন না তিনি।আস্তে আস্তে বেরিয়ে এলেন ভীড় ঠেলে। মিলনের মতো কতশত সম্ভাবনাময় ফুল যে অকালে ঝরে পড়ে! চোখের সামনে দেখেও কিছুই করতে পারেন না। বড় অসহায় লাগে নিজেকে।বড্ড বেশী অসহায়!

You may also like

Vinnokatha
Prothom Khondo
Price: Rs.260/-
www.vinnokatha.in
মেহনতি মানুষের মুক্তি নিশ্চয়ই একদিন আসবে। সব ধরণের শোষণ শেষ হবে একদিন--এ স্বপ্ন আমরা দেখি। শুধু দেখি না, একে বাস্তবে কার্যকর করতে 'ভিন্নকথা' তার সাধ্যমত প্রয়াস চালিয়ে যাবে। মানুষকে সঙ্গে নিয়ে, মানুষের চেতনার লক্ষ্যে, মুক্তির লক্ষ্যে।
মেহনতি মানুষের মুক্তি নিশ্চয়ই একদিন আসবে।সব ধরণের শোষণ শেষ হবে একদিন--এ স্বপ্ন আমরা দেখি। শুধু দেখি না, একে বাস্তবে কার্যকর করতে 'ভিন্নকথা' তার সাধ্যমত প্রয়াস চালিয়ে যাবে। মানুষকে সঙ্গে নিয়ে, মানুষের চেতনার লক্ষ্যে, মুক্তির লক্ষ্যে।
Vinnokatha
Prothom Khondo