খ্যাড়ের গাঁদা ও অ্যাক্ টুকরা পেরেম্ 

হাঁমারঘে পড়শী দাদুর বাড়িতে অ্যাকটা নয়-দশ বছরের বেটিছ্যালা ব্যাড়াতে আইস্যাছে। এ গাঁয়ের প্রায় ঝনার বাড়ির পিছাদিকে আমবাগান, বাঁশবাগান। হাঁমারঘেও দশ বারোটা আম গাচ । রায়হান ভর দুপ্পহারে বাগানে একলাই ঘোরাঘুরি কোরছিলো।পিছাদিকে ঘুইরা দ্যাখে ঐ বেটিছ্যালাট্যা খাড়ো হয়্যা আছে। চোখ্খের পলক না ফ্যালা  তাকিয়্যা আছে। রায়হানের ভিতরখ্যান কেমন য্যানো শিরশিরিয়্যা উঠলো। কত্ত বেটিছ্যালা দ্যাখেছে এম্নি তো কুনুদিনি হয় নি। খানিক অ্যাগ্গ্যা অ্যাইস্যা কহিলো,”তোর নাম কিরে ? “রায়হান” তো? চল ওই খ্যাড়ের পালাটায় ঢ্যাসা দিয়্যা বোসি ।” শুন্যা তো ঘ্যাবরা গ্যালো রায়হান। ফের কহিলে ,” হাঁমার নাম রাসু।” চোখ ঘুরিয়্যা ঘুরিয়্যা ম্যাল্ল্যাই  কথা কোহ্যা গ্যালো। আর রায়হান কথা-গালা গিল্যা গ্যালো। রায়হানের কিরকুম ঘোর লাগা অবস্থা। উঠব্যার সময় রায়হানের হাত ধৈরা টানলে। রায়হান তখন বুকের মৈধ্যে ইসক্রিম চুষছে। বুকে শির্ শিরানি ; আইসক্রিম চুষলে যেরকুম  হয়। কাইল ফের দ্যাখা হৈবে। মনে থুবি কথাটা।

বসন্ত কালের বাতাস। আমের গাছে ছোট্ট ছোট্ট আম ধৈরাছে। এখনো য্যানো মুকুলের সুগৈন্ধ মৌ মৌ কৈরছে ।বাগানে গ্যালে রায়হানের মোন ক্যামন পাগোল পাগোল কৈরা ওঠে। রাসু অ্যাইসা য্যানো মাতাল কৈরা দিয়্যাছে।

কখন কাইল হৈবে? রায়হানের জানে তর সইছে না।লকডাউনে স্কুলে ছুট্টি চলছে।সাত কেল্যাসের গাঁইয়্যা ছ্যালার আর পঢ়া কীসের? দুপ্পাহর। রায়হান সটাং বাগানে চৈল্যা অ্যাইলো। হ্যাঁ, মহারানী অ্যাইস্যাছে। “এই-ই দেরি কেনে  হৈল?” প্রোশ্ন কৈরলে। রায়হান গাইগুই কোরছ্যালো।কিন্তু শেষ কোরতে দিল ন্যা। হাত ধৈরা ঝাঁপ দিলো খ্যাড়ের গাঁদায় তারপরে,  ঘাড় ধৈরা এত্তো বতকী গৈল্প আর শেষ হয় ন্যা। আম গাছে উদাসী ভাটিব্যালার কুনঠে কোকিল অ্যাক্ টানা ড্যাক্যা য্যাইছে। রায়হানের বুক ঢিপ্ ঢিপ্ কোরছে ; কেহু যতি দেইখ্যা ফ্যালে? হাইলিশ্বাস ছ্যাইড়া রায়হান কোহিলে, “চ, হাঁর ডল্লাগছে।”

কদিন থ্যাইক্যা গরম খুব পড়্যাছে।ছোট  ছোট ব্যাটাছ্যালা বেটিছ্যালা সভাই লদ্দিতে গা’ধোয়।যুবুতিরঘে ল্যাইগ্যা অ্যাকটু কড়া লজর থাকে। আরো ক’অ্যাকট্যা বেটিছ্যালা জড়ো হয়্যাছে। রাসু খুব জিদ কৈরতে লাগলো, “চল চল লদ্দি চল, গাধিয়্যা আসি গ্যা। “রায়হান কোহিলে  দ্যাখ্, তোর নানি কিন্তু জিন্দ্যা থুইবে ন্যা। তখন হাঁকে দোষ দিবি না।” “আরে  না না চল “কোহ্যা লাফিয়্যা উঠৈলো রাসু।

যা হোক, দু’ঝনাই ডুব মারছে, আর গা ধুইছে। রায়হান একটু দূরে দূরে থ্যাকছে। রায়হান হেলতে জানে।কিন্তু রাসু হেলতে জানে না। হেলতে হেলতে রায়হান কখনি কখনি মেল্যাই দূরে  চল্যা যাইছে। আর তখ্খনি রাসু চিৎকার কৈরছে, “হাঁকে লিয়্যা চল। হাঁকে লিয়্যা চল।” কী আর কোরবে? রায়হান গলা পানিতে অ্যাইস্যা হাতটা ধরল। আর রাসু এক্খি লাফে রায়হানের গলা ধৈরা পিঠে ঝুল্যা পৈড়লো। রায়হান হ্যালার চেষ্টা কৈরলো, কিন্তু প্যারলো না। রাসু আরো জ্যাপটা ধৈরলো। রায়হান ওর শরীলে একটা শিহরণ অনুভব করে। পিঠে রাসুর কচি স্তনের গুটির স্পর্শ পায়। রায়হানকে ধৈরা লটাপোটি কৈরতে কৈরতে সামনে দিকে অ্যাইস্যা গলা জোড়িয়্যা ধৈরলো আর পা দু’টা দিয়্যা কোমরের সঙ্গে প্যাচ্ ম্যাইরা ধৈরলো।রায়- হানের সমস্ত শরীলের ভিতরি কেমনি কেমনি কৈরছে! রায়হানও একবার রাসুকে চ্যাপা ধৈরলো। শরীলটা ক্যামন যেন তলিয়্যা য্যাইতে থ্যাকলো।রায়হানের হুঁশ হৈলে ক্যামন য্যানো শরম লাগাতে লাগলো। কুনো কথা না কোহ্যা হাঁইটতে লাইগলো। আর পিছে পিছে রাসু ডাকতে ডাকতে ছুইট্যা আইলো।

ফের  কাইল।ফের খ্যাড়ের গ্যাঁদা ঢ্যাসা ম্যাইরা বৈস্যা আছে। দু’ঝোনার ভারে ছুট্টু খ্যাড়ের গাঁদা ঢলক্যা গ্যাছে। আইজ পাঁচদিন। রাসুর মন খুউব খারাব। কাইল বাড়ি য্যাইতে হৈবে।রায়হান কোহিলে, “হাঁর বুক তোকে ড্যাকছে। অ্যাকটু হাত দিয়্যা দ্যাখ।” কিন্তু হাত দিত্যা গিয়্যা রাসু আর সামল্হাইতে পাল্লো না।   এখেবারে মাথা গুইজ্যা দিইলে।রায়হানও জোড়িয়্যা ধৈরলো।

ম্যাঘলা আশমান। শিরশিরিয়ে বাতাস বোহিছে। লীল অভিমান। ম্যাঘগালা ঝুল্যা পড়্যা য্যাইবে মনে হচ্ছে।দিয়্যা আচ্চোকা সাঁ সাঁ কৈরা দমকা বাতাস। গাচের ডালপালা গালা দোমড়্যাইতে মুইচড়্যাতে লাগলো। ঝম-ঝমিয়্যা বৃষ্টি অ্যাইলো কোহ্যা! দু’ঝোনাই বুক চ্যাপা ধৈরলে। এ য্যানো রাসো রায়হানের মনের ঝড়।  বুকের মৈধ্যে তখন  যুমনা নদীর কল কল আওয়াজ। ধড়-ফড়িয়্যা খাড়ো হৈল। দু’পাঁ  আগ্গাইতে কি ন্যা আগ্গাইতে খ্যাড়ের গাঁদাটার মাথা  ভুইসড়্যা পোড়তে ল্যাইগলো। দু’ঝনা চৈমক্যা পিছ্যা দিকে  হুতাশ হোয়্যা  তাকিয়্যা থ্যাকলো। 

     ২

রায়হান এম এ পাশ কৈরা গাঁয়ে ফিরা আইসছে। দশট্যা বছর হয়্যা গেলছে। জীবনের কত্ত কিছু প্যালট্যা গ্যাছে। দিন পৈনরো হোয়্যা গ্যালো রায়হানের বাড়িতে ফিরা আসা। দম বন্ধ হোয়্যা য্যাইছে যেন। ইউনিভার্সিটির রোমান্সের গৈন্ধ অ্যাখোনো মোনে সুভাস ছড়ায়। আইজকাইল রাসুর  কথা মোনে পোড়ে।কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালেও রাসুর কথা খুব মোনে হৈতো। খুব কষ্ট হৈতো। দম বন্ধ হৈয়্যা অ্যাইসলে তখোন দোজখের মতোন অ্যাকট্যা বড়ো কৈরা আগুনের লিশ্বাষ ছ্যাড়্যা দিতোক। তখোন বুকটা হালকা  হৈতোক। রাসু তো  অ্যাখোন সংসারের খুট্টা বান্ধা ছাগোল। সেতো স্বাধীন লয় যি পরের ক্ষ্যাতে খুট্টা উপড়্যা ঢুক্যা য্যাইবে। রায়হান ঠিক কৈরলো সে ভুতনি য্যাইবে। রাসুর সোতে দ্যাখা কৈরবে। কয়টা চকোলেট কিনা অ্যাকটা ফোল্ডিং ছাতা লিয়্যা বাহির হোয়্যা গ্যালো। রাসুর বাবার বাড়ি, শ্বশুর বাড়ি–ভুতনি। চৈত মাসের তিরফুট রোইদ। চোখের সামনে রোইদের বুদবুদি অ্যাইসা যেন আন্ধার কৈরা দিচ্ছে।গাছের পাত্তাও লড়ে ন্যা। জামা ঘামে জবজব্যা হোয়্যা ভিজ্যা গ্যাছে। ঘন্টা দেড়েক পরে গাঁয়ের মাথায় পৌঁছাইলো।

বাড়ী খুঁজ্যা পাইতে বেশি কষ্ট হৈলো না। গাঁ-ঘরের খ্যাড়ের বাড়ি য্যামন হয়, ত্যামনি। রায়হান বাড়ির দরোজ্যার কাছে য্যায়্যা সাড়া দিয়্যা ভিতরি ঢুক্যা গ্যালো। রাসু আলগা মানুষ কোহ্যা হড়মড়িয়্যা ঘরের ভিতরি ঢুক্যা গ্যালো। রায়হান কী কৈরবে ভ্যায়া না প্যায়া একট্যা বাচ্চাকে কোহিল, “এই  বাবা তোমার মাকে একটু ডাকো তো।” বাচ্চাটা কোহিল “মা ঘরের মৈধ্যে নুকিয়্যা  গ্যাছে।” কোহ্যা খিলখিল কৈরা হ্যাসতে লাইগলো। যাইহোক, বাহিরয়্যা অ্যাসা অ্যাকখান লম্ভা জিভ্যা বাহির কৈরা কোহিলে, “হাগে, জাইতনাশা! হামি চিহ্নিতে পারি নি।বৈস্! বৈসা! চ্যারখান দেরে ব্যাটা।”

একট্যা প্লাস্টিকের চেয়ার।চ্যারটায় রায়হান বসে। অ্যাকটা লম্ভা শ্বাষ ছ্যাড়া কোহিলো, চিনতে পারছিস্।হামি শুধুই তোকে দ্যাখার লাইগা চৈলা আইনু।কহা ক্যামন আছিস।” ধীরে ধীর স্বাভাবিক হৈলো।”ভালোই আছি , কৈহা লিশ্বাষ ছাইড়্যা কোহিলে গরীবঘেরে ফের ভালো থাকা। পুছ কোরনু, “মিয়্যাভাই কুনঠে গেলছে।” জবাব দিলো, “পাশের গাঁয়ে গেলছে অ্যাকট্যা কামে। ফিরতে দেরি হৈবে।” তারপরে, রাশু লিজের কথা। ছ্যালাপিলার কথা।ঘর সংসারের হাজারো কথা কৈহ্যা থামলো। অ্যাকটা পারিবারিক মানচিত্র তুল্যা দিলে। দাঁড়া বৈলা ঘর থ্যাইক্যা প্লেটে অ্যাক্ টুকরো শিন্নি আর গ্লাসে মাটির কলশির ঠাণ্ডা পানি আইন্যা দিলে। আর কোহিল, “দুপ্পহারে ভাত খ্যায়া যাবি।”রায়হান কোহিলো ,”নারে হামি নানারঘে বাড়ি খাবো। নানা বুড়াহ্ হৈয়াছে। মেল্যাই দিন দ্যাখা নাই। দ্যাখা করাটাও দরকাজ আছে।” রাসুর ছ্যালা- পিলাদের হাতে চকোলেটগালা দিয়ে উইঠ্যা পড়লো। রাসু মুখখান ক্যামন কাচুমাচু কৈরতে লাইগলো। “শুন খ্যায়্যা যাবি। এমনি কৈরা যাবি না।” কোহিতে কোহিতে কাঁইন্তে লাগে আরকি?। আসলি, রাসুর ভিতরিটা এমনি কোরছিলো যে, গলা ধৈরা জড়িয়্যা ধৈরা বুকে কৈরা খানিক জান ঠাণ্ঠা করে। কিন্তুক এটা আর হৈবার লয়। রায়হান গলিতে দাড়িয়্যা বাড়িটার দিকে তাকিয়্যা থাকলো। চৌড়ি ঘর। ভালোবাসার খ্যাড় দিয়্যা সুন্দর কৈরা ছাউনি করা।গোটা বাড়িট্যাই কেমন যেন ভালোবাসার সুগৈন্ধ মাখা।  এসভ দেইখ্যা রায়হান যেন অ্যাকটু স্বস্তি পাইলো।

রায়হান ছাতা ফুটিয়্যা তিরফুট রোইদের মধ্যে হাঁটতে লাগলো।চিক্যাশ আগুনের গোলা হোয়্যা গ্যাছে,ল্যাগছে। গোট্টা দুনিয়্যাটা আগুনের তাপে জ্বৈলাপুড়্যা যাইছে।চোখে ধম্মার কুণ্ডলি।খ্যাড়ের গাঁদাটা মৈনে হৈলো জ্বৈলতে ল্যাগ্যা গ্যাছে। তারি সতে রায়হানের বুকের ভিরতিটা কোন্ আগুনে যেন পুইড়্যা ছাই হৈয়্যা যাইছে। রায়হানের মোনে হৈছে–ছোটো ব্যালাকার  পেরেমের শিকড়খান মনের ভিতরি থাইক্যা তুইল্যা ফ্যালা যায় না। যত্তদিন বাইচ্যা থাইকবে তত্তদিন ধিকধিক্ কৈরা পুড়্যাইতে থাইকবে। বার্নাড’শর একটা উক্তি ওর খুবি মনেহ্ পৈড়ছে–“প্রেম একটি জ্বলন্ত সিগারেট  যার শুরুতে আগুন এবং শেষ পরিনতি ছাই।”
                                           
            

You may also like