দুই বাংলাসহ অন্য রাজ্যে এবং পৃথিবীর নানা প্রান্তে মহাসমারোহে দেবী দুর্গার আরাধনা হয়ে আসছে। পুজোর নিয়মকানুনের ব্যাপারটায় তথাকথিত ‘বাঙাল’, ‘ঘটি’দের মধ্যে তেমন কোনও প্রভেদ দেখা যায় না। বাড়ির পুজোতে প্রতি বাড়িতে কার্যত একই নিয়ম। ষষ্ঠীতে অধিকাংশ মহিলারাই উপবাস করেন, সন্তানের মঙ্গলকামনায়। এইদিন সবাই পুজো দেওয়ার পর সাধারণত ভাত না খেয়ে শুকনো খাবারই খান। সপ্তমীর দিন বেশির ভাগ স্থানেই অঞ্জলি দেওয়ার তেমন রেওয়াজ নেই। কিন্তু যেসব স্থানে সীমিত অঞ্চলের অল্প মানুষজনের মধ্যে পুজোর আয়োজন হয়ে থাকে— যেমন দশটা পরিবার মিলে যারঁ পুজোর কাজে সবসময় ব্যস্ত, সবকিছু তদারকি করে চলেছেন, তাঁরা সকাল থেকে খাওয়া-দাওয়া না করে পুজো নিয়েই সময় কাটান। পুজোর শেষে অঞ্জলি দিয়ে যার যা খুশি খান।
পুজোয় অঞ্জলি দেওয়ার পর যে যার পছন্দমতো, তা-ই খেতে পারেন। আসলে এসব পুরোটাই লোকাচারের অঙ্গ। ব্রাহ্মণরা যে যেখানে যেমন বোঝেন, বোঝান সে-রকমই। নির্দেশও দিয়ে থাকেন এবং সেটাই চলে আসছে। এ ব্যাপারে শাস্ত্রীয় কোনও মতামত নেই। ব্রাহ্মণরা নিজের নিজের মনগড়া যুক্তি তৈরি করে বলেন, এইসব করা উচিত। শাস্ত্রে যা বলা রয়েছে তা হল, পুজোআর্চার ব্যাপারটা স্থান-কাল নিরপেক্ষ নয়, সবই স্থান-কাল সাপেক্ষ। খাওয়ার ব্যাপারটা যেখানে যেমন পরিবেশ পরিস্থিতি, সেই অনুসারে নিয়মগুলো তৈরি হয়। তবে শাস্ত্রে এসব লেখা থাকা মানেই ধ্রুবসত্য না-হতেই পারে, কারণ শাস্ত্র রচয়িত কে বা কারা? সে তো মানুষই। কেউ না কেউ লিখে গেছেন। দুর্গাপুজোয় ওপার বাংলার মানুষজনের আচার-আচরণে যে ভিন্নতা এপার বাংলার মানুষ দেখে থাকেন, অনুরূপভাবে এপারের মানুষের প্রথাগুলো ওপারের মানুষজনের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে— এ আবার কী দেখছি! ওঁরা ঠিক করছেন না আমরাই ঠিক? উল্টো দিক থেকেও তা-ই। সত্যি বলতে কি, যুগ যুগ ধরে যে জিনিসগুলো যেখানে যেমন চলে আসছে, সেগুলোই চলতে থাকবে স্বাভাবিক ভাবেই।
অষ্টমীতে কিন্তু খাওয়া দাওয়ার ব্যাপারটা একেবারেই আলাদা। এদিন এপার বাংলার মানুষজন লুচি-ময়দার খাবারই খান। ভাত খান না কেউই। ঠাকুরের কাছে এঁরা লুচি-ময়দার খাবারই ভোগ হিসাবে দিয়ে থাকেন। ওপার বাংলার ক্ষেত্রে কিন্তু তা নয়। ওখানে অষ্টমীর দিন অন্নভোগ দেওয়াই নিয়ম। খিচুড়ি ভোগ, পোলাও ভোগ ইত্যাদি। অষ্টমীতে ওঁরা খিচুড়ি, মাছ-ভাতেই অভ্যস্ত। এমনকি কেউ কেউ মাংসভাত খেয়ে থাকেন, বিশেষত যেসব জমিদার বাড়িতে পাঁঠাবলির সঙ্গে মাংসভাত খাওয়ার প্রথা ছিল, সেখানে এই প্রথা চলছে আজও। ওপার বাংলায় কিন্তু অষ্টমীতে লুচি-ময়দার ব্যাপার নেই। ‘নদীমাতৃক’ দেশ। ওখানে বিভিন্ন ধরনের মাছ-সহযোগে ভাতই প্রাধান্য পায়।
দুর্গাদেবীর পুজো, শক্তির আরাধনায় বাংলাদেশে ও পশ্চিমবঙ্গে উভয় জায়গাতেই নবমীতে বলি দেওয়া হয়। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে অষ্টমীতে কোনও বলিপ্রথা নেই। বলি যা কিছু হয়, তা নবমীতেই। বাংলাদেশে তা নয়, সেখানে কিন্তু অষ্টমীতেও পাঁঠা ও অন্য কিছু বলি দেওয়া হয়ে থাকে। তবে পাঁঠাবলির প্রথা যেসব জায়গায় ছিল বা আছে, সেখানে এই পদ্ধতিই চলে আসছে। আর যেসব বাড়িতে বা মন্দিরে পাঁঠাবলি একেবারেই উঠে গেছে, সেখানে চালকুমড়ো, আখ, শসা, কলা ইত্যাদি বলিরূপে নিবেদন করা হয়। তবে একটা ব্যাপার অবশ্য লক্ষণীয়, এপার বাংলার প্রায় সব বাড়িতে নবমীর দিন মাংসভক্ষণের আয়োজন কার্যত বাধ্যতামূলক হয়ে গেছে। যদিও ব্যতিক্রমীদের কথা উভয় বাংলার ক্ষেত্রেই অবশ্যই আলোচ্য হতে পারে না। ষষ্ঠী এবং দশমীতে মাছ-মাংস খাওয়ার ব্যাপারটা সে রকমভাবে প্রাধান্য পায় না। এই দিনে সাধারণত নিরামিষ খাবারই রন্ধন হয়ে থাকে। তবে কী ওপার বাংলা, কী এপার বাংলা, উভায় সমাজেই দশমীতে মিষ্টিমুখের আয়োজন যেন নিয়মে পর্যবসিত হয়ে গেছে।
দুর্গাপুজোর সময় ষষ্ঠী দিনে যে পুজোটা হয়, দুর্গাকেই ষষ্ঠীরূপে এদিন আরাধনা করা হয়ে থাকে। মহাসপ্তমী থেকেই বাস্তবিক অর্থে দুর্গাপুজো শুরু হওয়ার কথা। কিন্তু যেহেতু শাস্ত্রীয় নিয়ম একরকম, আর স্থান-কাল ভেদে লোকাচার আলাদা, তাই যেখানে ষষ্ঠীর দিন পুজো হয়, সেখানে সাধারণ মানুষ মা ষষ্ঠীরূপেই দেবীর কাছে পুজো দিয়ে থাকেন সন্তানের মঙ্গল কামনায়। এসব ক্ষেত্রে অঞ্জলির সময়, ‘মা-ষষ্ঠী’র প্রণাম মন্ত্র এবং অঞ্জলি মন্ত্র দিয়েই পুরোহিতরা পূজা করে থাকেন। ষষ্ঠীপুজো মানে সন্তানের জন্মগ্রহণ, তার মঙ্গলকামনায় যে ধারণা ও ব্যাপারগুলো কিছু মানুষের মধ্যে গেঁথে রয়ে গেছে, সেভাবে পুজো হলেও বিষয়টা কিন্তু তা নয়। ‘ষষ্ঠী’ অর্থ সার্বিক মঙ্গল। তবে প্রাচীন ধ্যানধারণা অনুযায়ী সন্তান ধারণ, জন্মগ্রহণ এবং সন্তানের মঙ্গলকামনা উভয়ই জাগতিক একটা মঙ্গলসূচক ব্যাপার। আর এভাবেই ষষ্ঠীকে মিলিয়ে দেওয়া হয়েছে সন্তানের বিষয়টিতে। তাই কোনও বাড়িতে দীর্ঘ দিন সন্তান না-জন্মানোর পর যখন সন্তান আসে, বলতে শোনা যায়— এত দিনে ‘মা-ষষ্ঠী’র কৃপাতেই সব হল।
প্রসঙ্গত যে কথাটা বলা দরকার তা হল, সংস্কৃত ভাষাকে গুরুত্ব না-দেওয়ায় এবং এই ভাষাচর্চা থেমে যাওয়ার পরে নতুন করে ধোঁয়াশা তৈরি হচ্ছে পুজোপ্রেমী মানুষদের মধ্যে। সমস্যাও বেড়েছে অনেক কিছুতেই। সংস্কৃতকে তুলে দেওয়ার পরে ‘কুসংস্কার’ও বেড়ে চলেছে। মানুষ সংস্কৃত ভাষাটা যদি জানতেন বা শিখতেন, তা হলে মানুষের মধ্যে এত সংস্কার বাসা বেঁধে থাকত না। কেননা কোনও শাস্ত্রেই কোথাও কোনও কুসংস্কারের বিন্দুমাত্র স্থান নেই। যা কিছু পরিবর্তন হয়েছে, সবই মানুষ তথা পুরোহিতরা নিজেদের স্বার্থে নিজেদের মতো করে আসল সত্য আড়াল করে চাপিয়ে দিয়েছে। এ-সবই সম্ভব হয়েছে, সংস্কৃত ভাষাটাকে অন্ধকারে পাঠানোর ফলেই।
তথাকথিত পুরোহিতরা এর সুযোগ নিয়ে যাচ্ছেন। অর্থাৎ তাঁদের যেখানে যেমন সুবিধা অসুবিধা, সেই অনুযায়ী নির্দেশ দিয়ে দিচ্ছেন মানুষকে। এ-ভাবেই তাঁদের কাছে অ-প্রচলিত ব্যাপার স্যাপারও ‘মূল্য ধরিয়ে’ দিলে কার্যসমাধা হয়ে যাচ্ছে সহজেই। সাধারণ মানুষ এ-সব বুঝেও বুঝতে পারছেন না নিজস্ব উপলব্ধির অভাবে। কোনও পুরোহিত যদি মনে করেন, পুজোয় ‘জলে ভেজানো চাল’ পাওয়া মানেই তা সংরক্ষণের ক্ষেত্রে অসুবিধার, তখন তিনি নিজের সুবিধামতো নির্দেশ দিয়ে বলেন যে, পুজোয় সব চাল-ই ব্যবহৃত হবে শুকনো— এটাই নিয়ম। কেউ যদি প্রশ্ন করেন, ওই ‘ঠাকুরমশাই’ ভিজে চালে পুজো করেন, কিন্তু আপনি…? তখন অনিবার্য উত্তর— আরে বাবা, সকলে সব নিয়ম কি ঠিক ঠিক মেনে চলে? সবার তো সব সঠিকটা জানা না-ও থাকতে পারে। এই আমিও একদম সব ক্ষেত্রেই একশো ভাগ সঠিক, তা নাও হতে পারি। তবে তা সবই সিদ্ধরূপ পায়, আমার আরাধনা ও মায়ের কাছে আন্তরিক নিবেদনে। ফলে মা-ও আশীর্বাদ করেন। আর আপনারা আপনাদের লক্ষ্যে সফলতা পান। অর্থাৎ বোঝাই যাচ্ছে, পুরোহিতরা কথার মারপ্যাঁচে কিছু ফাঁকও তৈরি রাখেন নিজেদেরই সুবিধার্থে।
এ-প্রসঙ্গে বলি, পুরোহিতদের কেউ কেউ বলে থাকেন, সংস্কৃতের ব্যাখ্যার ক্ষেত্রেও তো নানা মুনির নানা মত। সায়নাচার্য সবকিছু ভুল ব্যাখ্যা করে গেছেন। পানিনি’র ব্যাখ্যাই সঠিক এবং যথার্থ। কত জন মানুষ এ-সব জানেন! ফলে তৈরি হয় আপাত বিরোধ। উদাহরণ স্বরূপ, মহেঞ্জোদারো। মহেঞ্জোদারো শব্দের অর্থ কী? উত্তর মৃতের স্তূপ। এই অর্থ করেছেন হয় রোমিলা থাপার, নয় তো ইরফান হাবিব। বলুন, কেউ নিজেদের দেশের বা অঞ্চলের নাম— যেটা ‘উন্নত সভ্যতা’ হিসাবে পরিগণিত, সেই জায়গার নাম মৃতের স্তূপ রাখতে পারেন? সংস্কৃত ব্যকরণ অনুযায়ী যদি শব্দটি ভাঙা যায় তবে মহেঞ্জোদারো শব্দের অর্থ দাঁড়াবে একটা সুরক্ষিত দুর্গ। আসলে যাঁদের ইতিহাস লিখতে দেওয়া হয়েছে, তাঁদের কেউ ভারতীয় নন। নিজেদের মতো করে তাঁরা ভেবেছেন, অর্থ তৈরি করেছেন, লিখেছেন। আমরা যদি রমেশচন্দ্র মজুমদার বা যদুনাথ সরকারের ইতিহাস পড়ি তো পেয়ে যাব এ-সবের সঠিক ব্যাখাগুলো। পরিতাপের কথা, আমরা সঠিক ইতিহাস পড়া বা সঠিক জ্ঞান উপলব্ধি করার সুযোগ পাচ্ছি ক’জন! যে কথা হচ্ছিল— দুর্গাপূজার যে সংস্কার তথা নিয়ম আচার-আচরণে বিভিন্ন জেলা ও এলাকাভেদে যে ভিন্নতা, তা সবই স্বাভাবিক। মানুষ আঞ্চলিক ভাবেই বদলে যায় বা নিজেদের বদল করে।
একটু লক্ষ্মীপুজোর কথায় আসি। দেখা যায়, ওপার বাংলার মানুষ কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোয় ইলিশ মাছ দিয়ে ভোগ করেন, নিজেরাও ইলিশভাত খান। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ, তিনি তো রাজপরিবারের সন্তান— মাংস খাবেন এটাই স্বাভাবিক। তো শ্রীকৃষ্ণকে কেন নিরামিষাশী হিসাবে দেখব আমরা? অর্থাৎ সেই একই কথায় ফিরতে হচ্ছে, যে কোনও পুজোয় প্রথা, খাওয়া-দাওয়া সবই যে যাঁর নিজস্ব রুচি ও ব্রাহ্মণদের নির্দেশ মতোই। এতে কোনটা ভুল, কোনটা ঠিক এসব বিতর্ক নিরর্থক।
উল্লেখ্য, এখানকার এবং বেশির ভাগ জায়গাতেই পুরোহিতরা ‘কালিকাপুরাণ’ মতে পুজোপদ্ধতি মেনে চলেন। অনেক জায়গায় বৃহৎ নন্দিকেশর পুজোপদ্ধতি। কিন্তু বেলুড় মঠের পুজোপদ্ধতি অনেক ব্যাপারেই পৃথক। উদাহরণ, ‘কুমারীপুজো’। এই পুজো প্রায় সর্বত্রই নবমীর দিন হয়ে থাকে। কিন্তু বেলুড় মঠ— এমনই জায়গা, যেখানে অষ্টমীর দিন ‘কুমারীপুজো’ হয়ে থাকে প্রতি বছর। প্রসঙ্গত বলে রাখা প্রয়োজন, শাস্ত্রমতে কুমারীপুজো শুধু দুর্গাপুজোয় নয়, শক্তির আরাধনায় তথা কালীপুজো, অন্নপূর্ণাপুজো, বাসন্তীপুজো, জগদ্ধাত্রীপুজোয় করা হয়ে থাকে। তবে এটা সর্বত্র এবং সব ক্ষেত্রে আয়োজন করা সম্ভব হয় না। খরচ বেড়ে যাওয়া ও সময়াভাব সমস্যায়। বেলুড় মঠে অষ্টমীর দিন কুমারীপুজো-র আয়োজনের অন্যতম কারণ হতে পারে, ওখানে অষ্টমীর দিন বহু পূণ্যার্থী যান। তাঁরা অনেকেই এই পুজো দেখার সুযোগ পান বলেই হয়তো। এক্ষেত্রে অবশ্য অর্থনীতির ব্যাপারটাও যুক্ত থাকতেই পারে।
এপার বাংলা ওপার বাংলা যেখানেই হোক, অষ্টমীতে বেশির ভাগ মানুষই পুজো দেখতে যান, অঞ্জলিও দেন। এ দিন মাদুর্গা গৌরীরূপে পূজিত হন। অমাবস্যার পরের দিন থেকে ‘নবরাত্রি’র নয় দিনের পুজো কিছুটা আলাদা। অমাবস্যার পরের দিন তথা প্রথমাতে শৈলপুত্রী, দ্বিতীয়ায় ব্রহ্মচারিণী, তৃতীয়ায় চন্দ্রঘন্টা, চতুর্থীতে কুষ্মাণ্ড, পঞ্চমীতে স্কন্দমাতা, ষষ্টিতে কাত্যায়ণী, সপ্তমীতে কালরাত্রি, অষ্টমীতে মহাগৌরী, নবমীতে সিদ্ধিদাত্রী— নবরাত্রির পুজো। আর দশমীতে যে পুজো হয় সেটা হল— অপরাজিতা। ‘অপরাজিতা’ পুজো হওয়ার কথা সুতো কাটা ও বিসর্জনের পর। অপরাজিতা পুজোর অর্থ, এই পূজার মধ্যে দিয়ে সমস্ত সফলতা আর লক্ষ্যে পৌঁছনো সম্ভব হবে।
দুর্গাপুজোর ঠিক পরেই যে লক্ষ্মীপুজোর আয়োজন হয়, সে-প্রসঙ্গে অল্পকথায় বলা যায়, এটি কোজাগরী পূজা হিসাবেই খ্যাত। ‘কোজাগর’— মানে কে জাগবে? এই সূত্রেই কোজাগরী। সাধারণ ভাবে নিয়ম হল, লক্ষ্মীপুজোর সারা রাত্রিটা জেগে মা লক্ষ্মীর উপাসনা করার কথা। কিন্তু ওপার বাংলার কিছু মানুষ এই নিয়ম মানলেও এখানে এতা বিশেষ চোখে পড়ে না। বাড়ির লক্ষ্মীপুজোগুলো যথেষ্ট গুরুত্ব পেলেও, বারোয়ারির পুজো প্যান্ডেলগুলো বড়ই শুনশান। শুধুমাত্র একটা প্রদীপ জ্বলতে থাকে। জনপ্রাণীর দেখা মেলা ভার। আসলে ধুমধাম করে দুর্গাপুজো করার পর বাজেটে টান পড়ে, পাশাপাশি উদ্যোক্তাদের এনার্জিও তলানিতে এসে ঠেকে। এমনও দেখা গেছে, প্যান্ডেলের একফালি কাপড় ছিঁড়েই প্রদীপের সলতে পাকাতে হচ্ছে। জানি না, এতে মা লক্ষ্মী কষ্ট পান কিনা!
পরিশেষে সবিনয়ে বলি, পুজোআর্চা ব্যাপারটা মানুষের অন্যতম মুখ্য সংস্কার মাত্র। বেদের কোথাও নেই পুজো প্রসঙ্গটি। বেদে ‘সূর্য’ ছাড়া অন্য কোনও দেবদেবীর নাম খুঁজে পাওয়া যাবে না।এই যে দুর্গাপুজো ইত্যাদি, যা নিয়ে যৎসামান্য আলোচনা হল, এ-সব সমগ্র বেদের কোনও পৃষ্ঠাতেই নেই। সবটাই পুরাণ মতে। পুরাণই সাধারণ মানুষ মেনে চলছেন, পুজো চলছে বছরভর যথারীতি। বেদে প্রকৃতির নানা শক্তির বর্ণনা করা হয়েছে। স্তুতি রয়েছে অগ্নি, জল, বায়ু, সোম-এর। ঋক্বেদ ও ভৌত বিজ্ঞান আপাত ভাবে সমার্থক। হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর বেদের ব্যাখ্যা অতুলনীয়। সবিনয়ে বলি, যাঁরা ধর্মপ্রাণ মানুষ, পুজোআর্চায় বিশ্বাসী, ঈশ্বরবিশ্বাসে অক্লান্ত, সর্বাগ্রে তাঁদের বেদ অধ্যয়ন জরুরী।