কোচুবোনা উচ্চবিদ্যালয়, একাদশের ক্লাস নিচ্ছিলেন সাকির স্যর। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক, খুব ভালো পড়ান। পিনপতন নীরবতা ক্লাসে। মনোযোগ সহকারে স্যরকে শুনছে ছাত্রছাত্রীরা। বিষয়ের গভীরে যাওয়ার আগে সংবিধান,ক্ষমতা,সরকার, বাক স্বাধীনতা, মৌলিক অধিকার প্রভৃতি ব্যাসিক ব্যাপারগুলোর ধারণা দিচ্ছিলেন।
“রাজতন্ত্রের যুগ এখন অতীত, এখন জনগণই ক্ষমতার উৎস। সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ ভোট দিয়ে যাকে প্রতিনিধি নির্বাচন করবেন, তিনিই হবেন আমাদের প্রতিনিধি। রাস্তাঘাট,শিক্ষা,স্বাস্থ্য সহ সমাজ ও দেশের উন্নতিতে কাজ করবেন তিনি। মানুষের জন্য, মানুষের দ্বারা, মানুষের সরকার গঠিত হয় এভাবেই। মানুষ স্বাধীনভাবে যাকে ইচ্ছে তাকে ভোট দিতে পারবেন। এখন গণতন্ত্রের বৈশিষ্ট্য গুলো কি কি সেগুলো লিখে দিচ্ছি, খাতায় টুকে নাও কাল পড়ে আসবে।”
নজর ঘোরাতেই স্যর লক্ষ্য করলেন তৃতীয় বেঞ্চে বসা ছাত্র আহমদ, ক্লাসে যার একেবারেই মনোযোগ নেই, নীচের দিকে মুখ করে বসে আছে, বেশ মনমরার মতো! আবার মনে হচ্ছে যেন বিরক্তি ও ক্ষোভ তাকে ক্লাস থেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে।
স্যর একটু ধমকের সুরে, “আহমদ তোমার খেয়াল কোথায়? আর তুমি খাতা বের করো নি কেন?”
আহমদ মুখ তুলতেই পাশে বসে থাকা আরেক ছাত্র জানালো যে, “স্যর সদ্য শেষ হওয়া নির্বাচনে ভোটের দিন লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন ভোট দেবেন বলে। দুই পক্ষের লড়াই শুরু হয়, তারপর মুহুর্তেই কিসের যেন বিকট আওয়াজ হয়, অন্ধকারে ঢেকে যায় চারিদিক, সেখানেই মৃত্যু হয়েছে আহমদের পিতা আব্দুল হুসেনের! তাতেই কিছুদিন থেকে আহমদ খুব মনমরা হয়ে আছে! টেনশনে ঠিকঠাক কারো সাথেই কথা বলে না!”
পরিবারে আর কে কে আছে শিক্ষক মহাশয় জানতে চাইলে অশ্রুসিক্ত আহমদ জানালো, “মা, বছর পাঁচেকের ভাই এবং একবছরের এক বোন।”