শুরুতেই তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে। তা যাক, তাল তো গোলই, আর তার পাতাও গোল। মানে প্রায় গোল, এই পৃথিবীর মতো, এদিক ওদিক একটু-আধটু চ্যাপ্টা-চুপ্টা হতে পারে, কিন্তু আমরা সরল মনে তাকে গোলই বলি। তো, এই নিয়ে আর তিলকে তাল করবেন না প্লিজ! আমি তখন রূপকথার দেশের স্বাধীন নাগরিক, আমার সেই দেশে রাজার সিন্দুকে তাল তাল সোনা থাকত। সোনায় ঝলমল করত রাজপ্রাসাদ আর রাজার সাত রানি। আর মেঠো রাস্তার পাশে তালগাছে ঠ্যাং ঝুলিয়ে চুল এলিয়ে বসে দিব্যি উকুন বাছতেন ভূত-গিন্নি। প্রশ্ন করা মানা না হলেও, কোনও ডালপালা নেই এমন তালগাছে ভূত ভদ্রলোক পেত্নী সুন্দরীকে নিয়ে কোথায় ঘর বাঁধতেন, এ-প্রশ্ন কোনওদিন মাথায় আসেনি। আর যেখানে প্রশ্ন থাকে না সেখানে শুধু ভূতই নয়, বিশ্বাসও ঘাঁটি গাড়ে আরামে। আমাদের তাই আজন্ম বিশ্বাস, তালগাছে ভূত থাকে। বাড়ির কাছাকাছি তাই তালগাছ রাখতে চান না অনেকেই।
তবে আমাদের বাড়ির পঞ্চাশ ফুটের মধ্যেই তিনটে তালগাছ ছিল। ভাদ্র মাসে বাড়ি থেকেই তাল পড়ার ধুপধাপ শব্দ শোনা যেত। আমি তখন ছুটতাম তালতলায়, তাল কুড়োতে। শ্রাবণ-ভাদ্র বলে নয়, আমার গুরুজনদের ডান হাত ছিল বারোমেসে তালগাছ, সেই গাছের তাল সারা বছরই আমার পিঠে দুমদাম পড়ত। সেই জন্য তাল খুব একটা স্বস্তিদায়ক ছিল না আমার কাছে। তার উপর ছিল পরলৌকিক ভয়। দু’একটা মিথ্যা কথা বললেই, ঘুমন্ত মানুষকে ডিঙিয়ে গেলেই মরার পরে যমরাজ তালগাছ ডিঙিয়ে নেবেন! তা-ও আবার হাই-জাম্প মেরে নয়, তালগাছের দুই দিকের মাটিতে পা রেখে! বুঝুন ঠ্যালা! পরকালের তাল ঠেকাতে গিয়ে তালগাছ নিয়ে এমন বেতাল আইনের ভয়ে আমার প্রাণটা শুকিয়ে থাকত সবসময়। তার উপর লবা কাকাদের মিল ঘরের পিছনের মাঠে সারি সারি এগারোটা তালগাছ ছিল ভূত-কলোনি। ওখান দিয়ে যাওয়ার সময় আমার হৃৎপিণ্ডে তাল পড়ার শব্দ হত, দ্রিম… দ্রিম… দ্রিম!
বাংলাদেশের গহের আলি করে দেখিয়েছেন। নিজে তিনি ভিক্ষুক, কিন্তু রাস্তার দু’ধারে আর সরকারি জমিতে এ পর্যন্ত ১২ হাজারের বেশি তালগাছ লাগিয়ে গড়ে তুলেছেন তাঁর তাল-সাম্রাজ্য। ভিক্ষা করতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে চেয়ে আনতেন তালের আঁটি, পুঁতে দিতেন রাস্তার দু’পাশে, সরকারি জমিতে। বড় হয়ে এই তালগাছই তাঁকে এনে দিয়েছে জাতীয় পরিবেশ পদক। গহের আলি শিখিয়েছেন ভিক্ষাবৃত্তি করেও একটা গোটা সাম্রাজ্যের অধিপতি হওয়া যায়। তাল-সাম্রাজ্যের অধিপতি গহের আলিকে বিনম্র শ্রদ্ধা!
একবার ওই তালতলার মাঠে বনভোজন করতে গিয়ে ভূতে তাড়া করেছিল আমাদের। ঘটনা যদিও কাকতালীয়। সদ্য খোঁড়া ভেজা উনুনে ধোঁয়ায় ধোঁয়ায় অপটু হাতে খিচুড়ি আর বেগুনভাজা নামাতে বেলা গড়িয়ে বিকেল হয়েছিল। খিচুড়ি আর আধভাজা বেগুন তখন ধুমোটে গন্ধে ম ম করছে। এমন সময় ভূতের গায়ের গন্ধ ভেসে এল! সন্ধ্যা নামার মুখে কলাপাতায় ঢেলে যেই না একগাল খিচুড়ি মুখে তুলতে গেছি, তালগাছে বারকয়েক অদ্ভুত শব্দ হল! এ নিশ্চয়ই ভুতুড়ে সিগন্যাল! আমরা তো মুখের গ্রাস আর হাঁড়িপাতিল ফেলে দে-দৌড়! এখন মনে হয়, হয়তো কোনও পাখি ডানা ঝাপ্টিয়ে ঘরে ফিরেছিল তখন! অথবা, হয়তো তালগাছ স্নেহমাখা স্বরে বলেছিল, ‘‘খুকিরা তাড়াতাড়ি খেয়ে নাও, অন্ধকার নামছে যে!’’ আমাদের ভীরু শিশুমন চিনতে পারেনি সেই ভালোবাসা, বুঝতে পারেনি সেই ভাষা।
সে আজ পঁচিশ-তিরিশ বছর আগের কথা। শব্দটাকে আবারও কাছ থেকে শুনবো বলে মাস ছয়েক আগে খান মুহাম্মদ মইনুদ্দিনের ভাষায় মেয়েকে বললাম, ‘ঐ দেখা যায় তালগাছ, ঐ আমাদের গাঁ’, চল একবার যাই। আমার সেই রূপকথার দেশে গিয়ে দেখলাম, সেই মাটিতে একটাও তালগাছ নেই আর। কোনও অদ্ভুত শব্দ নেই, ভয়ও নেই। সুতরাং, ভূতও নেই। বুকের বাঁ দিকে দ্রিম দ্রিম শব্দটা তবুও থামেনি এখনও।
মেয়ে যখন ছোট ছিল তার কান্না থামাতে মাঝে মাঝে দুলালের তালমিছরি মুখে দিয়ে দিতাম। মেয়ের কান্না থেমে যেত। কিন্তু আমার মায়ের হাতের তাল-রুটির ডাক এখনও থামেনি। তালের রস, গুড়, পাটালি, তালশাঁস, তালের পায়েস….. উফফ্! আর বলতে পারছি না, জিভ টসটস করছে। তবে শুধু সুস্বাদুই নয়, কে জানত বাবা ভিটামিন এ, বি, ও, সি, জিঙ্ক, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, আয়রন, আর অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ঠাসা এ সব খাবার! জানলে, আর চারখান তালের রুটি বেশি করে খেয়ে রাখতাম তখন। এত এত সিদ্ধ জিনিসের মধ্যে নিষিদ্ধও কিছু ছিল অবশ্য। তালের রস থেকে তৈরি তাড়ি খেয়ে বেতাল মাতাল মানুষও দু’এক জন থাকত গাঁয়ে-ঘরে।
মদই হোক বা মিছরি, প্রবাদ-প্রবচন হোক বা ভোজন, বাঙালি গ্রাম্যজীবনে তাল-সংস্কৃতির ছাপ খুব গভীর। তালগাছ বাঙালির ফ্যানগাছ। তালপাখার ঠান্ডা বাতাস যুগ যুগ ধরে বাঙালিকে ফ্যানের আরাম দিয়েছে। প্লাস্টিকের সর্বগ্রাসী ব্যবহার আসার আগে তালপাতার চাটাই, মাদুর, বসার আসন, তালপাখা গ্রামবাংলার মাটির সংসারের স্থায়ী সদস্য ছিল। তালপাতার পুতুল, চরকা ছিল বাংলার শিশুর খেলার সাথী। একসময় শিশুর হাতের-লেখার খাতা ছিল তালপাতা। বহু প্রাচীন তালপাতার পুঁথিও আবিষ্কৃত হয়েছে। তালগাছের কাণ্ড দিয়ে তৈরি ডিঙি, নৌকায় ভাটিয়ালি গানের ঢেউ উঠত বাংলার নদীতে। সিমেন্ট আবিষ্কারের অনেক আগেই তালগাছের লম্বা আর শক্ত কাণ্ড ধনীদের কড়িবরগার দালানকোঠা উপহার দিয়েছিল। আর দরিদ্রের কুটিরে দিয়েছিল তালপাতার ছাউনি।
বলেছিলাম না সব তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে। গেল তো? তবে তালগোলটা তালের আকৃতি নিয়ে পাকাচ্ছে না, পাকাচ্ছে মানুষের প্রকৃতি নিয়ে। এখন, বললেই তো তাল ঠোকাঠুকি লেগে যাবে! তবে আমি বলবই, মানুষের মতো এমন বেতাল জাতি পৃথিবীতে আর দু’টি নেই। সব্বার পরে এসেও প্রকৃতির সব তাল কেটে দিচ্ছে সে!
আমার সেই গ্রাম্যবেলায়, সে দালানকোঠাই হোক বা তালপাতার কুঁড়ে, ঘরে ঘরে বার্থ ডে সেলিব্রেশনের এত হুজুগ উঠেনি। তখন শুধু একজনেরই হ্যাপি বার্থ ডে পালন হত। জন্মাষ্টমীর দিন কৃষ্ণের হ্যাপি বার্থ ডে। সেই খুশিতে ঘরে ঘরে লুচি আর তালের বড়া ভাজা হত। কৃষ্ণের খুব পছন্দের তালের লুচি, তালের বড়া, তালক্ষীর দিয়ে হ্যাপি বার্থ ডে পালন, থুক্কু, পুজো করা হত। এখনও হয় অবশ্য। তবে পরের দিন নন্দ উৎসবে মুখে নীল রং মেখে, চুলে ময়ূরের পালক গুঁজে, হাতে বাঁশি নিয়ে গৃহস্থের উঠোনে আর হাজির হন না আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বার্থ ডে বয় স্বয়ং কৃষ্ণ। আমার ছোটবেলায় কৃষ্ণ সশরীরে বার্থ ডে সেলিব্রেট করতে বেরিয়ে পড়ত পাড়ায় পাড়ায়। কোনও কোনও কৃষ্ণ রাধাকেও নিয়ে আসত। সঙ্গে থাকত মস্ত দলবল। একজন স্যাঙাৎ থাকত পিঠে বস্তা নিয়ে আদায় করা চাল-ডাল-আলু-পটল রাখার জন্য। আর একজন কাঁধে বাহক নিয়ে ঘুরত। বাহকের দু’দিকে দুটো বড়ো বড়ো ধামা ঝোলানো থাকত। তাতে জড়ো হত বাড়ি বাড়ি আদায় করা লুচি আর তালের বড়া।
‘হ্যাপি বার্থ ডে টু কৃষ্ণ’ বলে কেউ গান গাইতো না ঠিকই, আর মোমবাতিতে ফুঁ দিয়ে কেক কাটার উল্লাসও ছিল না, তবে সমবেত কণ্ঠে যখন ‘কী আনন্দ হল রে ভাই কী আনন্দ হল, লুচির উপর তালের বড়া গড়াগড়ি গেল’ বলে গান ধরত, সে কী উন্মাদনা! আমি ওদের পিছন পিছন আমাদের গোটা গ্রামের প্রতিটা বাড়ি ঘুরতাম। খুব ইচ্ছে হত ‘কী আনন্দ হল রে ভাই’ বলে ওদের সঙ্গে গ্রাম ছেড়ে অন্য গ্রামে চলে যেতে। তখনও বিভূতিভূষণের ‘তালনবমী’ গল্পের নেপাল আর গোপালের সঙ্গে আমার দেখা হয়নি। তাই তালনবমীর দিনে বাঁধভাঙা চোখের জল তখনও ছুঁতে পারেনি আমার তালের মতো গোলগাপ্পা গালদুটোকে। এখন রথের মরসুম চলছে, না-বললে আবার বলভদ্র তার সমস্ত ভদ্রতা ভুলে লাঙলের ফলা দিয়ে আমার পেটটা ফুটো করে দেবে, তাই এ-প্রসঙ্গে বলে রাখি, কেবল তালের বড়াই জগন্নাথের প্রিয় নয়, তাঁর প্রিয় দাদা বলভদ্রের রথের নামও তালধ্বজ।
তালগাছের গুণের কথা বলে শেষ করা যাবে না। তালগাছ ভূমিক্ষয় রোধ করে, ভূমিধ্বস ঠেকায়, ভূগর্ভস্থ জলের মজুত বাড়ায়, মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করে। তাল গাছের শিকড় মাটির অনেক নীচ পর্যন্ত প্রবেশ করে বাঁধ ও নদীভাঙন আটকায়। এত গুণ যার, স্বয়ং জগন্নাথের প্রিয় যে গাছ— যে ফল, কেবল মানুষই দেখাতে পারে তাকে অবহেলা আর অনাদরের দুঃসাহস। এত গুণী হওয়া সত্ত্বেও তালগাছকে ভূতের বাসা আর তালপাতার ঝরঝর থরথর কাঁপুনিকে ভুতুড়ে আড্ডা মনে করে আমরা চিরদিন তাকে দুচ্ছাই করে এসেছি। কোনওদিন তাকে যোগ্য মর্যাদা দিইনি। শ্রীকৃষ্ণের লীলাক্ষেত্র পুণ্যভূমি বৃন্দাবনে সোনার তালগাছ দর্শনে পুণ্য অর্জন করা মানুষটিই হয়তো বাড়ির পাশের তালগাছে ভূত দেখে জ্ঞান হারান। দোষ হয় তালগাছের, গৃহস্থের হাতে প্রাণ হারায় সে। আসলে মুখে যা-ই বলি না কেন, আমরা কোনওদিনই ভক্তি আর ভালোবাসাকে এক করে দেখতে শিখি না। এর ফলও পাচ্ছি হাতেগরম। ইদানীং, নিউজ চ্যানেল, খবরের কাগজ খুললেই চোখে পড়ছে বজ্রপাতে মৃত্যুর ঘটনা। পরিবেশ দূষণের ফলে বজ্রপাতের সংখ্যা যেমন বেড়েছে তেমনই তালগাছের মতো উঁচু গাছের সংখ্যা কমায় বাড়ছে ফাঁকা মাঠে কর্মরত কৃষকের বজ্রপাতে মৃত্যুর ঘটনাও।
তালগাছ ৯০-১০০ ফুট উঁচু হওয়ায় বজ্রপাত সরাসরি এ-গাছের মাধ্যমে মাটিতে গিয়ে আমাদের রক্ষা করতে পারে। মাথা পেতে বজ্রপাতের প্রথম ধাক্কা সামলে শহিদ হয় তালগাছ। পরিবেশ উন্নয়নে তালগাছের ভূমিকা অনেকখানি। বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনে ঘন ঘন উদয় হচ্ছে নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ। আয়লা, বুলবুল, আম্ফান, ইয়াস— খুব কম সময়ের ব্যবধানে আমাদের বারবার লণ্ডভণ্ড করে গেছে এরা। ঘূর্ণিঝড়, ঝোড়ো হাওয়া ও জলোচ্ছ্বাস থেকে উপকূলীয় বাড়িঘর, শস্য রক্ষা করতে পারে তালগাছ। এ সব দুর্যোগ মোকাবিলায় তালগাছ ‘এক পায়ে দাঁড়িয়ে’ মাথা উঁচু করে বুক পেতে রক্ষা করবে আমাদের। এই ভরসাতেই তো বাবুইপাখি তার কারুকার্যময় সুন্দর বাসাখানি পৃথিবীর এত এত গাছে থাকতে তালগাছে ঝোলাতে বেশি ভালোবাসে। পাখি যা বোঝে আমরা তা বুঝতে পারি না কোনওদিন!
প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় তালগাছের ভূমিকা অনন্য। ইদানীং বজ্রপাতে মৃত্যুর ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় সরকার ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করছে। কিন্ত মৃত্যুর ক্ষতি কখনও পূরণ হয় না! প্রবল ঝড়বৃষ্টি ও বজ্রপাতে প্রাণহানি ঠেকাতে বজ্রনিরোধক তালগাছ লাগানো উচিত। কৃষিজমিতে তালগাছ লাগালে বিস্তৃত ছায়া হয়ে ফসলের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনাও নেই। প্রতিদিন প্রচুর পাতা ঝরে ক্ষেত নোংরাও হয় না। জায়গাও খুব কম লাগে। জমির আলের উপরেও দিব্যি বেড়ে ওঠে তালগাছ। কোনও বিশেষ যত্ন-আত্তির আশা রাখে না, আবার বিশেষ কোনও রোগবালাইও নেই তালগাছের।
বাংলাদেশের গহের আলি করে দেখিয়েছেন। নিজে তিনি ভিক্ষুক, কিন্তু রাস্তার দু’ধারে আর সরকারি জমিতে এ পর্যন্ত ১২ হাজারের বেশি তালগাছ লাগিয়ে গড়ে তুলেছেন তাঁর তাল-সাম্রাজ্য। ভিক্ষা করতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে চেয়ে আনতেন তালের আঁটি, পুঁতে দিতেন রাস্তার দু’পাশে, সরকারি জমিতে। বড় হয়ে এই তালগাছই তাঁকে এনে দিয়েছে জাতীয় পরিবেশ পদক। গহের আলি শিখিয়েছেন ভিক্ষাবৃত্তি করেও একটা গোটা সাম্রাজ্যের অধিপতি হওয়া যায়। তাল-সাম্রাজ্যের অধিপতি গহের আলিকে বিনম্র শ্রদ্ধা!
পরিবেশ নিয়ে তো চারিদিকে এত এত কথা হয়, কত বৃক্ষরোপণ উৎসব হয়, বজ্রপাতের বাড়বাড়ন্ত নিয়েও কম আলোচনা হচ্ছে না, কিন্তু আমরা এখনও তালগাছ লাগানোর কথা ভাবতে পারিনি। এ বার সময় এসেছে ভাবার। কেবল বজ্রপাত নিয়ে সচেতনতামূলক প্রচার করলেই দায়িত্ব শেষ হবে না, সরকারি উদ্যোগে তালগাছ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানোও একান্ত প্রয়োজন। তালগাছ মোটেও ফেলনা নয়, বহুবিধ গুণের পাশাপাশি সারি সারি তালগাছের সৌন্দর্যও কিন্তু কম নয়। শুধু ভূমিক্ষয়ই নয়, তালগাছ কোষের ক্ষয়ও রোধ করে। গাছ ধরে রাখে মাটির যৌবন, আর তাল মানুষের তারুণ্য!
বলেছিলাম না সব তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে। গেল তো? তবে তালগোলটা তালের আকৃতি নিয়ে পাকাচ্ছে না, পাকাচ্ছে মানুষের প্রকৃতি নিয়ে। এখন, বললেই তো তাল ঠোকাঠুকি লেগে যাবে! তবে আমি বলবই, মানুষের মতো এমন বেতাল জাতি পৃথিবীতে আর দু’টি নেই। সব্বার পরে এসেও প্রকৃতির সব তাল কেটে দিচ্ছে সে! আর হাতে একখান স্মার্ট ফোন পেয়ে সবাই এমন তালে তাল মিলিয়ে নাচছি আমরা, উড়ছি আকাশে, মাটিতে পা দেওয়ার প্রয়োজন নেই যেন! ওড়ার সাধ রবীন্দ্রনাথের ‘তালগাছ’-এরও হয় অবশ্য! তবে যেই মনে পড়ে ‘মা যে হয় মাটি তার, ভালো লাগে আরবার পৃথিবীর কোণটি’। তখন ‘ফেরে তার মনটি’। আর আমরা? নিজেদের তো ডানা নেই, গ্যাজেটে ভর করে আর কত উড়ব! কবে ফিরব আমরা মাটির কাছে? গাছের পাশে?
ভূতের তালগাছে শুধু বর্তমানই নয়, ভবিষ্যতেরও বাস
previous post