এক বিকেলে নিঃশব্দে দুজনে সাঁকো পেরিয়ে নদীর ওপারে মল্লিকাদির বন্ধুর বাড়ি যাই। পথে আমাদের একবাক্য কথারও চালাচালি হয় না যেমনটা সবসময় হয়। নোমান আলী খানের সাথে সেই দিঘির শাণবাঁধানো-ঘাটে মল্লিকা’দির শেষআলাপ হয়। এবং বিকেল নেমে এলে নিঃশব্দে বাড়িরপথে ফিরতে পা বাড়াই।
সাঁকোর মাঝপথে দাঁড়িয়ে পশ্চিমদিকে দৃষ্টি ফেরালে লাল-টকটকে বিদায়ী সূর্যটায় চোখ আটকে যায়। “সূর্যাস্তে বিষাদের সুর থাকে ঠিক যেমন সূর্যোদয়ে থাকে সুখস্বপ্ন”-মল্লিকাদির কথা। তিনি এমনতরো কতো কথা আমাকে প্রায়ই বলতেন। আমরা প্রায়ই সূর্যাস্ত দেখতে বাঁশের সাঁকোর মধ্যিখানে নীরবে দাঁড়িয়ে যেতাম আজও স্বভাব মতো থমকে দাঁড়াই। পশ্চিম আকাশ, আজকে একটু বাড়াবাড়ি রকমের বিষাদের লাল আভায় মুড়ে আছে। মল্লিকা’দির কান্নাভেজা চোখজোড়ায় বিষাদের রঙের বড়বেশি মাখামাখি টের পাই। আমি আমার বাড়িরপথে পা বাড়াতে উদ্ধত হলে, মল্লিকাদি আমার হাতজোড়া তার হাতের মুঠোয় শক্ত করে ধরে রাখে। দিঘিরজলের মতো টলমল অশ্রুফোঁটা আমার হাতে গড়িয়ে পড়ে। আমি আলতোভাবে হাত ছাড়িয়ে বাড়ির পথ ধরি।
গল্প
- 
    
- 
    বুড়ো ও ছুটছে; 
 ধোঁকাচ্ছে, ছুটছে।
 পঁচাত্তরের বুড়ো,
 ছুটতে কষ্ট হয়।
 মুখমণ্ডলে বহু দাগ,
 চোখে মুখে আতঙ্ক।
 সন্তান কথা শোনে না,
 কথাও রাখে না।
 মারামারি, রক্তারক্তি,
 একা সব চায়।
 বাকিরা বাঁচবে না!
 বরবাদ করলো।
 বুড়ো মনের কষ্টে
 ছুটছে — ছুটছে –
- 
    কি হয়েছে, কাশেমের মেয়ের? আর শরমের কথা কি কমু? এক পোলার লগে ভাগছে দশ টাকায় দু’ টাকা ফেরত দিতে দিতে বলা মলয়ের কথা যেন রমিজের জন্য মুহূর্তেই জ্বালানির খোরাক হিসেবে কাজ করে। চোখ দুটো আত্মতৃপ্তিতে জ্বলজ্বল করে ওঠে ওর। এই কাশেমের সাথে ওর হিসেব চুকানোর খেলা বহু পুরোন গল্প। নিম্ন মধ্যবিত্ত ঐ অমায়িক মানুষটার ব্যক্তিত্বের কাছে ও যেন অঘোষিত যুদ্ধে পদে পদে হেরেছে। অজান্তে মনের মাঝে ঈর্ষা খানা তুষের আগুনের মত দিন রাত জ্বলত। ওফ! আর এখন! আর ভাবা যাচ্ছে না। আনন্দের আতিশায্যে একখানা পান জলদি মুখে পুরে নেন জমির। তৃপ্তিটা বুঝি আজ ষোল আনা মিলছে। 
- 
    আগের শান্ত দরিদ্র শহরটায় ধনী বিলাসীর ছাপ প্রকট হয়ে উঠছে রাতারাতি।বদলে যাওয়া সুন্দরী শহরটা দামী হচ্ছে দিনকেদিন। জমির দামও আকাশছোঁয়া।আগারগাঁওতে লাগছে সরকারি ছাপ। সেই ছাপকে কেন্দ্র করেই বানিজ্যিক আবহাওয়ায় আধুনিক বৈচিত্র্যময় রুপ নিচ্ছে। 
- 
    মা ছেলেকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে ফেলে। কেঁদে কেঁদে বলে, ‘সহ্য কইর্যা লে বাবা, সহ্য কইর্যা লে।আসিফের বাপ তোকে ম্যাইরাছে, একথা কাহোকে কহিস না বাবা। অরা একদিন দশ কেজি চাউল দিয়্যাছিলো হামরাকে।ফেরও হয়তো কুনু দিন দিবে। তোর ম্যাইরের কথা যদি কাহোকে কহ্যা দিস, তেবে আর অরা কুনুদিন কিছু দিবে না। তোর বাপ খাটতে পারে না। হামার বিড়ি বাঁধার কাম নাই। পরের দয়ার উপরে ভরসা কইরাই এখনিকা দিন কাটাইতে হইছে। হাংরে বাড়ি আর দু’দিনের খাবার আছে। তারপর হয়তো তোর আনা রোইজ কচুর শাকই খায়্যা রহইতে হইবে। 
- 
    রাতের বেলা বিছানায় শুয়ে শুয়ে ভাবছিলেন কি করে তিনি ফরিদুল আলম থেকে ফরি পাগলায় পরিণত হলেন।যখন তিনি প্রাইমারী স্কুল পড়তেন তখন তিনি কথা কম বলতেন।ক্লাস ঘরের জানলা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকতেন।ফলে মাষ্টার হঠাৎ তাকে প্রশ্ন করলে অপ্রস্তুত ভাবে অন্য কিছুই বলে দেন। তখন মাষ্টার বলে ছিলেন ছেলেটা মনে হয় পাগল ।সেই থেকে পাগল বলা শুরু ।যেহেতু তার নাম ফরিদুল আলম ।তাই তাকে ফরি পাগলা বলে।তবে সে কোন দিন কোন ব্যক্তির ক্ষতি করেনি।পাগলের মত আচরণ করেন নি।আসলে তিনি নীরব থাকতে ভালো বসেন।আর এটাই তার অপরাধ। 
- 
    আজও তিনি এসেছেন। এর আগেও বেশ কয়েকবার এসেছিলেন। নামাজ শেষে মুসল্লিদের সামনে দাঁড়িয়ে তাঁর আবেদন রাখছেন। যেমনটা আগেও রাখতেন। তিনি… 
- 
    জেলহক কথাগুলো শুনে অসুখ শরীরটায় বল পায় । সেই তো আস্তো গরীব। তবুও যেন ” ফেল কড়ি মাখো তেল ।” প্রবাদটা মাথায় থেকে গেছে। অথৈ জলের পাথারে পড়ে সে হাবুডুবু খায়। কূল খুঁজে পায় না। ভ্যাবাচাকা খেয়ে ওদের কথাবার্তার মধ্যেই দরোজা খোলা পেয়ে টলতে টলতে ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়ে। সভাগৃহ আঁতকে ওঠে। সকলে হতবাক। 
- 
    এমনি এক বিকেলে নুড়ি বালি পাথর মেশানো সরু রাস্তায় একাকি হেঁটেছিলাম।দুদিকে ঘন আকাশচুম্বী বৃক্ষরাজি সব বোবা হয়ে অদ্ভুত চাহনি দিয়ে আমাকে পরখ করছিল।আজ কুয়াশা কম। তাই গাছেদের ফাঁক দিয়ে তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করছিলাম বাদামি সূর্যের ম্যাড়ম্যাড়ে আকাশের গলা বেয়ে ঢলে পড়া। 

