সহিদুল ইসলাম
পেটের ব্যামোই জেলহক সেখের কাল। দুবেলা না খাটলে মুখে হাত ওঠে না।পেট আর রোগ নিয়েই যতো গলা ধাক্কা। তবে তার মোটা বুদ্ধিতে সার বুঝেছে ‘ সবখানেই ফেলো কড়ি মাখো তেল।”
সেদিন গঞ্জের হাসপাতালের ডাক্তার ধ এর মুখে ঐ একই কথা শুনেও জগতের সেরা বস্তুটি আজো জোগাড় করতে পারলো না। অগত্যা বৌয়ের সাধের ধনটা চাদরে ঢেকে হাসপাতালে পৌঁছাতেই রোগগ্ৰস্থ প্রাণটা দমছুট হতে চাইছে । শীতের রোদ হাসপাতালের নোংরা বিছানা শুকাচ্ছে। চারিদিকে কফ মল মুত্র মড়া কান্না যন্ত্রনা কুকুর ছাগল শুয়োর এসবের মধ্যেও ওর মনটা হালকা মনে হচ্ছে । বাঁচা গেল। আজ অন্তত জল ঔষধের প্রমোশন ঘটবে। জেলহক সেখ এক কোনে বসে মরচে পড়া শরীরের হাজা লাগা ঘা চুলকাচ্ছে। বারান্দা জুড়ে মানুষের গিজগিজ আর কাতরানি। জেলহক সেখ এদিক ওদিক উঁকি মারে। ” আজ আবার মিটিং” পুরুষালী কণ্ঠের এক নার্সের কথার জবাবে আর এক নার্স বলে উঠলো ” মিটিং না ঢং । সব দু নম্বরী কারবার।”
জেলহক সেখের ভীষণ ভালো লাগা থামছে না। মিটিং ? তাহলে আজ কাজ হবে। ওর চোখ দুটো ডাক্তার ধ এর সন্ধানে হয়রান। হঠাৎ ডাক্তারের চেনা কণ্ঠের আওয়াজ ওর কানে এলো। রোগে মুচড়ানো দেহটা ভুরু পায়ে এগিয়ে গেল ঘরের ভেজানো দরজার সামনে। আড়চোখে দেখে ডাক্তার ধ। ওকে ওর সহসা ধনন্তরী বলে মনে হলো।
এ ঘরটায় আজ প্রশাসন ও জনস্বাস্থ্য সম্পর্কিত সভা। সভায় আজ গরীব মানুষের সেবাপ্রকল্প অধিক গুরুত্ব পাবে। ডাক্তার ধ জ নেতা ক্ষ স নার্স ম তাদের মস্তিষ্ক প্রসূত কথাগুলোই সভাকক্ষে তুলে ধরে।
কথা এক—
” কেউ ধোয়া তুলসী পাতা নয় ? সরকারি পয়সা তছরূপ?”
“সভা বিরোধী প্রসঙ্গ । “
নেতা ক্ষ বলল — “রাজনৈতিক চক্রান্ত। “
ডাক্তার ধ বললেন – ” নার্সদের অসাধুতা।”
অসহযোগিতা।
নার্স ম –” এ অপবাদ। “
ডাক্তার ফ –“অজ্ঞতা ধর্মান্ধতা।”
ডাক্তার ধ ধমকে উঠলেন — “বাকবিতণ্ডা বন্ধ করুন। জনস্বাস্থ্য সম্পর্কিত মতামত জানান।”
নেতা ক্ষ এবার বললেন -” চিকিৎসা বিজ্ঞানকে গরীবের কূঁড়ে পর্যন্ত পৌঁছে দিতে হবে।”
ডাক্তার ধ -” এ প্রতিজ্ঞা নিয়েই তো ডাক্তারী বিদ্যা শুরু। সব গরীব মানুষের চিকিৎসা আগে করতে হবে।” নেতা ক্ষ – স্বাস্থকেন্দ্রে টাকা পয়সা—” ডাক্তার ফ “– থাক না ওসব কথা। এখানে টাকা –“
জেলহক কথাগুলো শুনে অসুখ শরীরটায় বল পায় । সেই তো আস্তো গরীব। তবুও যেন ” ফেল কড়ি মাখো তেল ।” প্রবাদটা মাথায় থেকে গেছে। অথৈ জলের পাথারে পড়ে সে হাবুডুবু খায়। কূল খুঁজে পায় না। ভ্যাবাচাকা খেয়ে ওদের কথাবার্তার মধ্যেই দরোজা খোলা পেয়ে টলতে টলতে ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়ে। সভাগৃহ আঁতকে ওঠে। সকলে হতবাক।
জেলহক তার শতচ্ছিন্ন তেলচিটে চাদরের তলায় থেকে একটা জীবন্ত প্রাণী বুকে সাহস এনে ডাক্তার ফ এর টেবিলে রাখে।
সভাগৃহ সমস্বরে বলে “– মুরগী — “
কাতর কন্ঠে জেলহক সেখ বলে “– বাবু ব্যারাম!”
ততক্ষণে সভাগৃহে আক্রান্ত মুরগীটা কঁকিয়ে ওঠে “– কঁ কর — কঁ – কঁ – র – কঁ -কঁ