হিন্দুত্ব, ফ্যাসিবাদ ও ভারতবর্ষ
মীর রাকেশ রৌশান
পূর্বাঞ্চল, ২০২৩
মুল্য ৩০০
হিন্দুত্বের স্বরূপসন্ধানে ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কসবাদী দার্শনিক আইজাজ আহমেদের সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন বিজয় প্রসাদ। ভাষান্তর করেছেন ওহিদ রেহমান। সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন “বাবরি মসজিদ ছিল হিন্দুত্বের বিরুদ্ধে মুসলমানদের আক্রমণের প্রতীক।” তাই প্রথমেই এটি ধ্বংস করার পরিকল্পনা হয়। ভেঙ্কট রামকৃষ্ণন নিয়েছেন রোমিলা থাপারের আর একটি সাক্ষাৎকার। এটি ভাষান্তর করেছেন শুভমন। ভারতের ইতিহাসে বিরুদ্ধ মত প্রসঙ্গেই অতি ডানপন্থী মনোভাবের ব্যাখ্যা দিয়েছেন তিনি।
ভারতবর্ষ স্বৈরাচারী গ্রাসের কবলে কিভাবে গৈরিকরণের পথে অগ্রসর হচ্ছে এবং তার রাজনীতিকরণ ঘটছে তার তাত্ত্বিক ও প্রায়োগিক দিকগুলি প্রতিটি প্রবন্ধেই উঠে এসেছে। বদরুদ্দীন উমর ভারতবর্ষে সাম্প্রদায়িকতার জন্মের উৎস হিসেবে ১৯৪৭ এর ভারত ভাগকেই দায়ী করেছেন। অমর্ত্য সেন স্বৈরাচারী শাসকের বিরুদ্ধে অহিংসার পথকেই অনুসরণ করতে বলেছেন। অরুন্ধতী রায় বিভিন্ন গণহত্যা এবং মবলিঞ্চিং এর উল্লেখ করে উগ্র সাম্প্রদায়িকতার জন্য হিন্দু ফ্যাসিবাদকেই দায়ী করেছেন। রাম পুনিয়ানি দেখিয়ে দিয়েছেন ফ্যাসিবাদের প্রেক্ষাপট কোথায়। ১৯২৫ সালে আরএসএসের জন্ম থেকেই তাদের লক্ষ্য এবং কার্যক্রমের পন্থাগুলি উল্লেখ করেছেন।
মোদির শাসনে মুসোলিনির পাঠ দেখতে পেয়েছেন রামচন্দ্র গুহ। হিন্দুত্ব-কর্পোরেট কিভাবে শক্তিশালী কেন্দ্রীকরণ নীতিতে একজোট হয়েছে তারই নিদর্শন তিনি তুলে ধরেছেন। প্রভাত পট্টনায়ক ফ্যাসিবাদের প্রতিচ্ছাযায়় নয়া জাতীয়তাবাদের উত্থান লক্ষ্য করেছেন। সেই কারণে এসেছে সংখ্যালঘু বিরোধিতা, দমন-পীড়ন।শুভাশিস মুখোপাধ্যায় ফ্যাসিবাদের আদি ইতিহাস অনুসন্ধান করেছেন। আশিস গুপ্ত ইসলামোফোবিয়া সৃষ্টিতে সংবাদমাধ্যমের ভূমিকা বিশ্লেষণ করেছেন। অশোক মুখোপাধ্যায় দেখেছেন ফ্যাসিবাদী চেতনা কিভাবে মনন-মেধাকেও দখল করেছে। মৃন্ময় সরকার শিক্ষায় গৈরিকরণের আমদানিকেই কৌশলী ফ্যাসিবাদ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
মীর রাকেশ রৌশান হিন্দুত্ব ফ্যাসিবাদী সংখ্যালঘু নিধনের থিওরিটিক্যাল দিকটির কথা উল্লেখ করেছেন। সেখানে নয়া জাতীয়তাবাদের সঙ্গে চলতে থাকে মানবাধিকারের প্রতি অবজ্ঞা, শত্রু চিহ্নিতকরণ, সেনাবাহিনীর প্রতি বাড়তি সম্মান প্রদর্শন, নারী বিদ্বেষী মনোভাব তৈরি, গণমাধ্যমের নিয়ন্ত্রণ, ধর্মের রাজনীতিকরণ, কর্পোরেট ক্ষমতার সুরক্ষা, শ্রমিকদের স্বাধীনতা হরণ, বুদ্ধিজীবী ও শিল্পী-সাহিত্যিকদের প্রতি অবজ্ঞা, মাত্রাছাড়া স্বজনপোষণ, ভুয়া ভোট ইত্যাদি।
বর্তমান ভারতের দিকে তাকালে আমরা বইটির সব কথার এক ভয়ংকর প্রতিফলন বাস্তবে পদে পদে দেখতে পাই। আর ভারতবর্ষ ক্রমশ ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে তার শক্তি সংগ্রহ করতে পেরেছে বলেই প্রমাণিত হবে।
এই সংকলনটি একটি ঐতিহাসিক নিদর্শন এবং সতর্ক গ্রন্থ। সততা ও অনেক পরিশ্রম করেই বর্তমান ভারতবর্ষের প্রকৃত স্বরূপ তুলে ধরার সামর্থ্য অর্জন করেছেন সম্পাদক।