প্রতিদান

শ্রাবণ মাস। আকাশে ঘন ঘন কালো মেঘের আনাগোনা। সূর্যাস্তের আগেই বিকালবেলাতে যেন অকাল সন্ধ্যা নেমে আসার উপক্রম হয়েছিল। সকলের আশঙ্কাকে সত্যি করে টুপটাপ শব্দে মাটিতে পড়তে শুরু করেছিল মোটা মোটা বৃষ্টির ফোঁটা। স্থানীয় ক্লাবের মাঠে পাড়ার যে কয়েকজন যুবক জমাট আড্ডা দিচ্ছিল, তারা তাড়াতাড়ি উঠে এলো ক্লাবের বারান্দায় মাথার উপর ছাউনির আশায়। চেয়ারগুলি টেনে নিয়ে যে যার মত বসল, সবার মনোযোগ তখন বৃষ্টির দিকে। ঠিক তখন ক্লাবের প্রধান ফটক দিয়ে হাঁটার লাঠিতে ভর করে স্থুলকায় শরীর নিয়ে ধীরে ধীরে ঢুকছেন জীবন বিশ্বাস। পাড়ারই এক বাসিন্দা, ষাটোর্ধ, নিঃসঙ্গ ও বিপত্নীক। জীবনের প্রতি আপাত বিশ্বাস রেখেই নিঃসঙ্গতাই দিন কাটে তার। জীবন সায়াহ্নে তার জীবনদীপ নিভে যাওয়াটা শুধূ সময়ের অপেক্ষা, তবুও অনিশ্চিত শ্বাসকে সঙ্গী করে জীবনকে ভালবেসে বেঁচে থাকাটাই যে একমাত্র উপায়।

জীবন বিশ্বাস অসুস্থ, বার্ধক্যজনিত রোগে ভোগেন তিনি। সকালে ও রাত্রে দু বেলাতেই ওষুধ খেতে হয়। উচ্চ রক্তচাপ ও মধুমেহর সমস্যায় তিনি আক্রান্ত। স্ত্রী মারা যাবার পর থেকেই বিগত কয়েক বছর ধরে তিনি আর ভাল নেই। কারণ মন ভাল না থাকলে শরীর ভাল থাকে না, অপর দিকে রোগা শরীর মনকে দুর্বল করে দেয়। তবুও সবই ঠিকঠাক চলছিল। বছর পাঁচেক হল চাকুরি থেকে অবসর নিয়েছেন। একমাত্র পুত্র, বউমা, এক নাতি ও নিজ স্ত্রীকে নিয়ে মহানন্দে ছিলেন। হঠাৎ স্ত্রী বিয়োগ তার জীবনকে যেন তছনছ করে দিল। তাকে দেখার মত আর আপন কেউ থাকল না। আদরের ছেলে এবং বউমা ধীরে ধীরে যেন পাল্টে যেতে থাকল। বাবা চেষ্টা করেছিলেন যে ভাল লেখাপড়া শিখে ছেলে যেন একটা চাকরি পায়। কিন্তু না, মানুষের সব ইচ্ছা পূরণ হয় না। ছেলে পড়াশোনায় মাঝারি মানের হওয়ায় প্রতিযোগিতামূলক চাকরির পরীক্ষায় তেমন বিশেষ সুবিধা করতে পারে নি। বাধ্য হয়ে বাবা তাকে গচ্ছিত মূলধন খরচ করে একটা ব্যবসা খুলে দেন।

ছেলে এখন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। কিন্তু বাবা-মায়ের প্রতি দায়বদ্ধতা বলে কোন বিষয় তার মনোজগতে নেই। বরং বাবা এখন তার কাছে বোঝাস্বরুপ। চাইলেই তাকে ঝেড়ে ফেলা যায়, দায় থেকে স্বঘোষিত অব্যাহতি নেওয়া যায়। বাবা এখন অসুস্হ, তার দেখাশোনা করার দায়িত্ব সে নিতে পারবে না বলে বাবাকে সাফ জানিয়ে দিয়েছে। তার যোগ্য সহধর্মীনীও তাকে এ বিষয়ে যথাযোগ্য সঙ্গত করেছে। তাদের যুক্তি হল বাবার তো এখন আর সংসারের কোন ঝামেলা, দায়িত্ব এসব নেই। সুতরাং তিনি একটা ভাড়া বাড়ীতে থাকলেই ভাল থাকবেন। সেখানে দেখাশোনা করার লোকজনও যেমন রাখা যাবে, তেমনি হাসপাতালের কাছাকাছি হলে চিকিৎসকের সাহায্যও তাড়াতাড়ি পাওয়া যাবে। তাই বাবার আপত্তির কোন কারণ তারা দেখতে পাচ্ছে না।

বয়স্ক জীবন বিশ্বাসকে বৃষ্টির সময় গেটে ঢুকতে দেখে ক্লাব সদস্যরা ব্যস্ত হয়ে পড়েছিল। কেউ তার মাথার উপরে ছাতা ধরল, কেউ তার অশক্ত শরীরকে বারান্দায় উঠতে সাহায্য করল। চেয়ারে বসে তিনি কিছুটা ধাতস্হ হয়েছিলেন এবং কিছুটা আশ্বস্তও, কারণ সন্তানতুল্য ছেলেমেয়েদের থেকে বয়স্করা তো এরকম ব্যবহারই আশা করেন। চির উদ্যমী যুবক প্রশান্ত এবার জীবন বিশ্বাসের মুখোমুখি বসে উপযুক্ত সম্মান জানিয়ে জিজ্ঞাসা করল, ‘বলুন জেঠু, এখন কেমন আছেন?’

‘কোনওরকমে বেঁচে আছি, শরীর ও মন কোনোটাই ভাল নেই।’ প্রত্তুতরে বলেছিলেন জীবন বিশ্বাস।

‘কেন, রক্তে চিনির মাত্রা কি আবার বাড়ল? মনটা ভাল নেই কেন? আবার কি বাড়ীতে কোনও অশান্তি!’ চিন্তিত মুখে কারণ জানতে চায় প্রশান্ত। সঙ্গে থাকে সহযোগী মোস্তাফা, কমল, জোসেফ ও ইসমাইল।

‘তোমাদেরকে আমার অশান্তির কারণটা আগেই বলেছিলাম, আর তুমি তো আমার ছেলের সঙ্গে কথা বলার জন্য আমার বাড়িও গিয়েছিলে।’

প্রশান্তও সঙ্গে সঙ্গে ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানিয়ে ফের জিজ্ঞাসা করেছিল, ‘হ্যাঁ, কিন্তু আপনার ছেলে কি এখনও নিজের ভুলটা বুঝতে পারেনি? ও তো পারে ওর দোষটা স্বীকার করতে।’

‘না, ও জানে যে ওর কোন দোষ নেই। জানো, ওরা কোনভাবেই চায় না যে আমি বাড়ীতে থাকি!’ বলতে বলতে চোখদুটো জলে ভরে আসে জীবন বিশ্বাসের।

‘কিন্তু জেঠু, আপনি মনটা শান্ত করুন, দেখবেন একদিন সবই ঠিক হয়ে যাবে।’ সকলে বলে ওঠে।

‘না বাবা, কোন কিছুই আর ঠিক হবে না। তোমরা বরং আমাকে একটা ঘর ভাড়া ঠিক করে দাও।’

‘আপনি ওসব নিয়ে কিছু ভাববেন না, আমরাও আপনার ছেলের বয়সী। এটুকু নিঃশ্চয় করে দিতে পারব। কাজের লোক আর খাবারের জন্য ভাল ব্যবস্হা করে দিচ্ছি, কম তেল-মশলাযুক্ত খাবার দেবে, আশাকরি কোন অসুবিধা হবে না।’ কথাগুলো একনাগাড়ে বলেছিল প্রশান্ত।

‘তাই হবে বাবা, ভগবান তোমাদের মঙ্গল করবেন। আমার আশির্বাদ রইল।’ জীবন বিশ্বাস আশির্বাদের হাতটা বাড়িয়ে দিয়েছিলেন।

প্রশান্ত পাড়াতুতো বৃদ্ধ জেঠুর পায়ে হাত দিয়ে প্রনাম করে বলেছিল, ‘ছোটোবেলায় বাবাকে হারিয়েছি, তাকে সেবা করার সুযোগ পাই নি কোনদিন। তাই আপনার পাশে থাকতে পারলে আমারও খুব ভাল লাগবে।’

সস্নেহ নয়নে বৃদ্ধ তাকিয়ে থাকেন তার দিকে। আপন মনে বিড়বিড় করে বলেন, ‘এ জীবনে সবাই সব কিছু পায় না। কেউ না পেয়ে আফশোষ করে, কেউ আবার পেয়েও হেলায় হারায়।’

বৃদ্ধর এই কথা শুনে উপস্হিত সকলে তখন পাওয়া-না পাওয়ার গোলকধাঁধায় হারিয়ে যেতে থাকে। হঠাৎ নীরবতা ভঙ্গ করে প্রশান্ত বলে উঠেছিল, ‘আপনার সঙ্গে না মিশলে এই মহান জীবন দর্শনের কথা আমরা এত সুন্দরভাবে উপলব্ধি করতে পারতাম না। যাইহোক, আমরা কালই ভাড়া বাড়ীর ব্যবস্হা করে আপনাকে জানাচ্ছি।’

‘আমিই না হয় ক্লাবে এসে তোমাদের সঙ্গে দেখা করবো।’ বৃদ্ধ জীবন বিশ্বাস আশস্ত করল।

‘না, তার আর দরকার হবে না। আমরা আপনাকে ভাড়া বাড়ীতে পৌঁছে দেব। আপনি আপনার দরকারি জিনিসপত্র গুছিয়ে নিয়ে প্রস্তুত থাকবেন, তাহলেই হবে। আর চলুন এখন আমি আপনাকে বাড়ী পৌঁছে দিয়ে আসি।’ প্রশান্ত আগ্রহের সঙ্গে বললেন।

‘তোমরা গল্প করো, আমি ধীরে ধীরে চলে যেতে পারব।’ এই বলে জীবন বিশ্বাস হাতে লাঠি নিয়ে অশক্ত পায়ে হাঁটতে হাঁটতে গেট দিয়ে বেরিয়ে গেলেন।

মাস দুয়েক আগে একবার জীবন বিশ্বাস ক্লাবের ছেলেদের কাছে তার সমস্যার কথা বলেছিলেন। বাড়ীতে স্ত্রী নেই, আবার অন্য কোন সন্তানও নেই যে বাবার সমস্যার সমাধান করবে। আর আত্মীয়রা বর্তমান সময়ে কে কার দেখভাল করার সময় খুঁজে পায়! ইচ্ছা থাকলেও উপায় হয় না, আবার উপায় থাকলেও অনেকের ইচ্ছা থাকে না। তাই বাধ্য হয়ে পাড়ার ছেলেদের কাছে সমাধান চাইতে আসা। প্রশান্ত ওনার ছেলেকে অনুরোধ করে বুঝিয়ে বলেছিল বিষয়টা দায়িত্বের সঙ্গে মানবিকভাবে ভাবতে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে সে বাস্তবে তার জায়গাতেই অনড় রয়েছে। এখন উপায়ান্তর না দেখে তারা সিদ্ধান্ত নিল যে পরদিন সকালে একটা ঘর ভাড়া করতে হবে। তার পর কাজের লোক, সবশেষে হোম ডেলিভারি।

পরদিন সকালে প্রশান্ত ঘর ভাড়ার সন্ধানে বের হয়েছিল। অনেক অনুসন্ধানের পর একটা ঘর তার পছন্দ হয়। জায়গাটা মন্দ নয়। মিনিট পাঁচেকের পায়ে হাঁটার দুরত্বে হাসপাতাল ও ডাক্তারদের চেম্বারগুলো পড়ে। জীবন বিশ্বাস আগেই বলেছিলেন যে ভাল ঘর হলেই চলবে, ভাড়াতে আটকাবে না। সে কথা মাথায় রেখে প্রশান্ত আলো-বাতাসযুক্ত ভাল একটা বাসযোগ্য ঘর ভাড়া করেছিল। সেকথা সে দুরভাষে জীবন বিশ্বাসকে জানিয়েও দিয়েছিল যাতে করে তিনি বিকেলের দিকে প্রস্তুত থাকতে পারেন।

সময় ক্রমশ এগিয়ে চলেছে। প্রশান্ত বিকালে কমল, ইসমাইল ও যোসেফকে সঙ্গে নিয়ে সোজা পৌঁছে যায় জীবন বিশ্বাসের বাড়ী। কিছুক্ষনের মধ্যে জীবন বিশ্বাস অনিচ্ছা সত্ত্বেও তার শেষ সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হন। বাবার শেষ পদক্ষেপে সন্তোষ প্রকাশ করে ছেলে বলে, ‘বাবা এখন বৃদ্ধ হয়েছেন, তার বাঁচার জন্য একটা শান্ত পরিবেশ দরকার। আমার ছেলে বাড়ীতে সবসময় খেলাধূলা, চিৎকার ইত্যাদি করে, তাই বাবার পক্ষে ভাড়া বাড়িই শ্রেয়। কাজের লোক দেখাশোনা করবে, অসুবিধা তো কিছু নেই।’

যোসেফ ও ইসমাইল নিজেদের মধ্যে বলাবলি করছিল, ‘এমন ছেলে যে নিজের বৃদ্ধ বাবাকেও শেষ বয়সে দেখল না!’

কোনপ্রকারে কথাটা জীবন বিশ্বাসের কানে যেতেই তিনি বলে ওঠেন, ‘কখন দেখবে বলো! নিজের ব্যবসা, ছোটো বাচ্চাকে বড় করা ও অন্যান্য সাংসারিক কাজ তো আছেই। ওদের সামনে এখন নতুন জীবন। বৃদ্ধ বাবাকে দেখতে গেলে নিজেদের দেখভালে সময় কম পড়বে যে। ওরা ভাল থাক, ভগবানের কাছে আমি এইটুকুই চাই।’

কথাটা শেষ করে তিনি তার বিছানাপত্র, কিছু পোশাক, থালা, বাটি, জলের বোতল, জরুরী ওষুধপত্র এবং একখানা ভাঁজ করা পুরনো চিঠি ক্লাবের ছেলেদের দিকে এগিয়ে দেন। সবশেষে লাঠিতে ভর করে তিনি গাড়িতে উঠে বসেন।

গোধূলীবেলায় সুর্যাস্তের রঙে আকাশ রঞ্জিত। নিয়তির ঝড়ে তিনি যেন এক নীড়হারা পাখি। গাড়ি রওনা দেয় ভাড়া বাড়ির উদ্দেশ্যে, এগিয়ে যায় সামনের দিকে। আর জীবন বিশ্বাসের জল ভরা চোখের সামনে ভেসে উঠতে থাকে তার অতীত জীবনের সুখ-দুঃখের নিবিড় মুহূর্তগুলো।

সেই যে বছর ছেলে জন্মাল, সেই বছরটা জীবন বিশ্বাস ও তার স্ত্রীর জীবনে যেন একটা মাইলফলক বছর। সংসারে সন্তানের বহু আকাঙ্খিত আগমন যেন সুখের সাগরে দোলা দিল। তাকে সঙ্গে নিয়ে দুজনের পথচলা। পুরানো সেই চোখ দিয়েই যেন স্বামী-স্ত্রী একে অপরকে নতুন করে দেখা।

স্মৃতি উস্কে মনে পড়ে যায় ছেলের শৈশবের কথা। একদিন যখন ছেলে অন্য শিশুদের সঙ্গে দোলনায় দোল খাচ্ছিল, তখন জীবন বিশ্বাস এক পরিচিতর সঙ্গে কথা বলতে বলতে ছেলের দৃষ্টির বাইরে চলে গিয়েছিলেন। ফিরে দেখেন ছেলের সে কী কান্না! জাপটে ধরে বাবাকে বলে, ‘বাবা, তুমি বল, আমাকে ছেড়ে আর তুমি কোথাও যাবে না’।

বাবা তিন সত্য করে বলে, ‘ঠিক আছে, আর কখন যাব না।’

চোখের জল কখন যে গড়িয়ে পড়েছে, চোখই জানে না। আর বয়সকালে ক্ষীন দৃষ্টিশক্তির চোখেও অতীতকে ভালো দেখা যায়।

স্ত্রী যখন মধ্য চল্লিশের কোঠায়, তখন তার একবার স্ত্রীরোগ হয়েছিল। ডাক্তারবাবুর পরামর্শে ছোটো একটা শল্য চিকিৎসায় সে বারের মতো রক্ষা হয়। হাসপাতালের বেডে শুয়ে স্ত্রী স্বামীকে বলেছিলেন, ‘তোমার আগে আমি যদি চলে যেতে পারি, তাহলেই আমার শান্তি।’

উত্তরে স্বামী বলেছিল, ‘বেশিরভাগ পরিবারে স্বামীরাই আগে যায়, তাই আমিও আগে যাব, দেখে নিও।’

আজ কথা রেখেছে স্ত্রী। পারে নি সে।

স্মৃতিগুলো আবদ্ধ থাকে মনের অবচেতনে। সুযোগ পেলেই তারা উঠে আসে সজাগ মনে। তাদেরকে বাধা দেওয়ার ক্ষমতা আজ জীবন বিশ্বাসের নেই। অবশেষে ব্যস্ত রাস্তায় গাড়ির হর্ণ তাকে বাস্তবের রূঢ়তায় নিয়ে আসে।

এক সময় গাড়ি পৌঁছায় তার গন্তব্যে। জীবন বিশ্বাস আশ্রয় খোঁজেন অজানা ছাদের নিচে। হোম ডেলিভারির খাবার চলে আসে সময়মত। কিন্তু রাতের শুকনো রুটি ও তরকারি তার স্বাদহীন জীবনে নতুন কোন মাত্রা যোগ করতে পারে না। তবুও বাঁচার জন্য মানুষকে খেতেই হয়। একসময় প্রশান্ত ও তার সহযোগীরা জীবন বিশ্বাসকে কয়েকটা মোবাইল নাম্বার এবং আপৎকালীন সময়ে পাশে থাকার আশ্বাস দিয়ে বাড়ির দিকে রওনা দেয়। বৃ্দ্ধ হয়ে পড়েন সম্পুর্ন একা। তার নিঃসঙ্গতা তার ঘটনাবহুল জীবনকে যেন নীরবে উপহাস করতে থাকে।

আজ চারিদিকের দেওয়ালগুলো যেন বড় নিষ্ঠুর তার কাছে। অপরদিকে নিস্তব্ধ রাতের পরিবেশ বৃদ্ধর মনোজগতে অনুপ্রবেশের জন্য আতঙ্ক ও দুশ্চিন্তাকে স্বাগত জানায়। রাতের ওষুধ খেয়ে তিনি শুয়ে পড়েন বিছানাতে। দু-চোখ অশ্রুপূর্ণ, পাশে ক্লাবের ফোন নাম্বার আর বুকের উপর খুলে রাখা সেই পুরনো চিঠিখানা যেটা তার স্ত্রী তাকে বিয়ের আগে লিখেছিলেন।

প্রিয়তম ……………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………

সবশেষে আসল কথাটি লিখি। জানো, বাবা-মা সবকিছু মেনে নিয়েছেন। এখন থেকে আমাদের জীবন সুন্দর করার দায়িত্ব কিন্তু আমাদেরই। আর কয়েকদিন পর থেকে তো আমরা একসঙ্গেই থাকব। চিন্তা কোরো না। ভালো থেকো। শরীরের যত্ন নিও।

                                                  ইতি

                                                তোমার প্রিয়তমা  

রাত পেরিয়ে সকাল হয়েছিল। পরিচারিকা এসে অনেক ডাকাডাকি করেও সাড়া পায় না বৃদ্ধের। ভাড়া বাড়ির কর্তা দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে দেখেন বিছানায় পড়ে জীবন বিশ্বাসের নিথর দেহ।

প্রশান্তর কাছে একটি ফোন আসে, ‘তাড়াতাড়ি আসুন। আপনাদের সেই বৃদ্ধ ভদ্রলোক আর এ জগতে নেই।’

You may also like