ঝরাপাতার গান
আয়েশা খাতুন
ছোঁয়া (২০২৩)
১১২ পাতা
হার্ডকভার
২৫০/-
আমাদের চাওয়া-পাওয়া, না -পাওয়া, অভাব -অভিযোগ -বঞ্চনা, আশা-হতাশা, ক্ষোভ রাগ হাসি -দুঃখ -কষ্ট ইত্যাদি অনুভূতিগুলোই আজ বৃহৎ পুঁজির কাছে একেবারে মূল্যহীন। আজ মানুষ মানুষকে পণ্য করতে ব্যস্ত সদা। আজ জীবনের সবকিছু পরিমাপ করা হয় একমাত্র টাকার মূল্যে। মুখে আমরা অনেক ভাবাদর্শের, অনেক কাব্যিক, অনেক সৌন্দর্যবোধের, অনেক আদর্শের, অনেক চিন্তার বিচ্ছুরণের কথা বলি এবং লিখিও। কিন্তু বাস্তব এটিই যে, প্রতি পদে পদে আমরা বাধ্য হচ্ছি এইসব অনুভূতিগুলোকে পা দিয়ে মাড়িয়ে যেতে।
মানুষে মানুষে ভালোবাসা, সৌভ্রাতৃত্ব, অহিংসা কথাগুলো শুনতে কার না ভালো লাগে! কিন্তু মাঠে -পথে -ঘাটের জীবন আদর্শের বাণী থেকে সরে যেতে যেতে এখন একেবারে প্রায় অদৃশ্য। হিংসা, বৈরিতা, স্বার্থের সংঘাত, পীড়নের দহন–কখনো রাষ্ট্রের, কখনো ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের গল্পগুলোকে এক নির্মম রুঢ়তা দান করেছে। চরিত্রগুলো নিষ্ঠুর সমাজের মুখে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ঝামা ঘষে দিয়েছে। সমাজের স্থবিরতা ও নিষ্ঠুরতা তাদেরকে পাগলে রুপান্তর করেছে। এই রুপান্তর মানুষের বহুমুখী হিংসা, বৈরিতা, লোভ, ক্ষমতা ও শোষণের দিকে আঙুল তোলে।
মনীশের জীবনের ছন্দপতন, বন্দনার সিজোফ্রেনিয়া উচ্চশিক্ষিত মধ্যবিত্ত ভদ্র বাঙালির ঘরে ঘরে আজ। শুনেছি সল্টলেকের নামি ফ্ল্যাটে বৃদ্ধ বাবা মাকে ফেলে রেখে ছেলে-মেয়ে বিদেশে বাসা বাঁধে শুধুমাত্র এক ‘উন্নত জীবনের’ খোঁজে। অনেক বাবা-মা -দের জীবন আয়া নির্ভর। অনেকেই নিঃসঙ্গ অবস্থায় ঝরে যায়। পরের দিন খবরে প্রতিবেদন বেরোয়। “ঝরা পাতার গান” গল্পটি সমাজের এক জটিল ছবি তুলে ধরেছে– যেখানে ‘পরিবার’ ব্যপারটি গভীর প্রশ্নের মুখে দাঁড়িয়ে আছে।
রমার কোল আলো করে মণির জন্ম , এবং সেই মণির আগমনে সংসারে দাদু ও দিদার হঠাৎ হৃদরোগে আক্রান্ত হলে সবাই মণিকে অপয়া বলে, ফলে অভিমানী মণির গৃহত্যাগ, এবং পরে রমার জায়ের পুত্র সন্তান হলে তাকে চারজন হিজড়া নাচাতে আসে। মণির সারিকা নামে এক হিজড়া হয়েও ওঠা এবং সেই মণিকেই তার মা চিনতে পেরে কেঁদে ওঠে, তার ঠোঁট দুটো একবার মণি বলেই বেহুশ। মণি মায়ের মাথা তুলে নিয়ে হাত বুলিয়ে দিতে বললে, মাগো তুমি না তাড়ালে আমি সমাজ চিনতাম না তোমাদের চিনতাম না আর আমাকেও চিনতাম না। “আর এসো না” গল্পে মায়ের ছেলেকে বাড়িতে আসতে না বলা–কী বেদনার, কী হৃদয়বিদারক!
আর কারবারিতে কেঁটকুঁমামার দক্ষতা ঐ নামের গল্পে গল্পকারের হাতে রাঢ় বাংলার জীবন্ত দলিল হয়ে উঠেছে — “সপ্তা পেরুতে দিতো না মামার পকেটে টাকা চলে আসছে। পঞ্চায়েতে কেঁটকুঁমামা গেলে প্রধান তড়াক করে লাফিয়ে উঠতো, মামা হেসে বলতো, কি যে লাফালাফি কর বাবু, আমার ভালো লাগে না। আমি কি তোমাদের ডেম নাকি ( ডিএম) ? কই ১০০দিনের স্কিম কয়টা করছো মোট? প্রধান দেখালে মামা হেসে বলতো, তাহলে তুমি লিবে না তো? হাজি হবে? বলি ৮০ হাজার চুহা গিল্লা/ বিল্লি এবার হজে চললা? বলিহারি রে বলিহারি আমার টাকা কই? মামা পুলিশকে কয়েকবার বলে এসেছে, দেকুন বড়বাবু আপনার ছেলেদের খুব বাড়ন্ত হলোচে। তা একটুকু আমাদের গায়ের বাগে লজর দ্যেন। আমার পাটি পলিটিক্স কচ্ছি। আমরা আপনাদের দেখচি, তো আপনারাও তো আমার দিকে লজর দেবেন নাকি বলচেন বলুন?”
“বিশ্বাস” গল্পে ধরা পড়ে মানুষের প্রতি মানুষের বিশ্বাস হারানোর কথা। গল্পটির প্রেক্ষাপট ছাঙ্গু ভ্রমণ। নিতু ও তার মায়ের সব অজানা পাহাড়ি প্যাসেঞ্জারদের মধ্যে বেশ কয়েক দিন কাটানোর অভিজ্ঞতার কথা। ইতিমধ্যে তারা তাদের পার্সটি হারিয়ে ফেলে যাতে ছিল ড্রাইভিং লাইসেন্স, প্যান কার্ড, ভোটার কার্ড, এটিএম কার্ড, মানবাধিকার কার্ড এসব কিছুই। কিন্তু পরবর্তীকালে আমরা দেখি যে ট্রাভেল গাড়ির মালিক এসে সেই পার্স ফেরত দিয়ে যায় এবং সেখানে নিতু ও তার মায়ের এ অজানা মানুষদের সম্পর্কে যা সন্ধান মেলে– বিশ্বাস ।
“প্রশ্ন” গল্প উঠে এসেছে আজকের গণতন্ত্রের শবযাত্রার ছবি। সোহিনীর চোখে আদর্শের কথা ক্লাসের চার দেয়ালের মধ্যে সীমাবদ্ধ। আর মাঠে ঘাটে কথা আলাদা। অনেক গণতান্ত্রিক নেতাকে ঘোষণা করতে শোনা যায় তার মতের বিরুদ্ধে যদি কেউ অন্য পার্টি করে তাহলে তার হাতে অনেক পুরুষ আছে তাদের ধর্ষণ করাতে সে পারদর্শী করে চলেছে তাদের পাঠিয়ে দেবে ওই বাড়ির মেয়েদের ধর্ষণ করে আসবে। প্রশ্ন জাগে সোহিনীর এটা কি তাহলে রাজা রাজার লড়াই। অনেক প্রশ্নের উত্তর পাইনা এবং তার মাথার ভিতরে ঘুরপাক খায় আরো নানা প্রশ্ন। আগে রাজা বাদশারা প্রধান সেনাপতি সঙ্গে যুদ্ধ করেছে, যুদ্ধে প্রাণ দিয়েছে। আর গণতন্ত্রের রাজা? চুপ করে বসে বসে পান খায় মদ খায় যৌন সঙ্গের সাথী হয়ে ঝিমায় যৌনতাই ডুবে যায়। আর পোষা গুন্ডাদের বলে ইভিএম চুরি করে আবার গণতান্ত্রিক পথে ক্ষমতায় আসে।
“বাঙালি নও” গল্পে ধরা পড়ে সেই চেনা গদের আত্মপরিচয়ের সমস্যা, বিশেষ করে বাঙালি মুসলমানের আত্মপরিচয়ের দিক উঠে এসেছে। পল্লবীর রাগ ক্ষোভ অপমান সবই স্বতঃস্ফূর্ত এবং সক্রিয়। পল্লবীর কথাবার্তা আর পোষাক-আশাক দেখে কেউ বুঝতে পারবে না যে সে মুসলমান। যেন ব মুসলমান মেয়ে হিজাব পরে। এ কথা শুনে কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলো তারপর পল্লবী বলল, ‘মুসলমান কিন্তু বাঙালি যেমন আপনি বাঙালি কিন্তু হিন্দু। পাশে বসে থাকা মেয়েটির স্টপেজ আসলেই সে নেমে যেতে গিয়ে ফিসফিস করে বলল বুঝতে পারিনি আপনি মুসলমান তবে আপনি ঠিক ওদের মত নন।’
“না” গল্পটি মুসলমান সমাজের একটি সামাজিক বিপর্যয়ের কথা হাজির করে। রাশিদার তালাক ও তার ছেলে রেহান এর আপত্তি তার মার সঙ্গে থাকতে। রাশিদার বিয়ে হয়েছিল সোনা দিয়ে মুড়ে। রাশিদার বাবা বড়বাজারের একটা দোকান রাশিদার বরের নামে লিখে দিলো, একটা ফ্ল্যাট ইএম বাইপাসে রাশিদা আর তার বরের নামে রেখে দিল, রাশিদার বাবার চোখে রাশিদার বর খুব পরহেজগার আর ঈমানদার ছেলে l রাশিদার এখন দুটো গাড়ি, বাড়িতে চাকর চাকরানী। তার স্বামী খুব ব্যস্ত ছেলে। কথায় কথায় আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করেন, আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহ যা দিয়েছেন আমি সন্তুষ্ট। আর সেই ধার্মিক বর একদিন অজান্তে রাশিদাকে ঠকিয়ে তার ফ্ল্যাট তার দোকান সবকিছু তার স্বামী হাতিয়ে নিল। রাশিদাকে একদিন গৃহহীন হতে হল। এবং তারা বাড়িটা বিক্রি করে তারা অন্য শহরের সব চলে গেছে এবং স্পিড পোস্ট একটা চিঠি এসেছে এবং সেখান থেকে সে জানতে পারে তার বাড়িটি বিক্রি হয়ে গেছে। সঙ্গে তার ছেলে রেহানকেও নিয়ে গেছে।
এরপর অনেক কোর্টকাছারি হলো। কিন্তু কিছুতেই কিছু হলো না। তারপর সে বুঝতে পারল যে তাকে কিভাবে ঠকানো হয়েছে শরীয়তের নাম করে l সে জানতে চায় কোথায় লেখা আছে তিনবার তালাক বললেই তালাক। স্পিড পোস্টে এসএমএস করে টেলিফোনে তালাক দিলেই কি তালাক? সে চমকে উঠে সূরা বাকারা পড়তে গিয়ে। সেই সময় কন্যার সামাজিক নিরাপত্তার জন্য পিতার সম্পত্তির অধিকার স্থাপন করা হয়েছিল। এবং বাকি থাকা দিনমোহরের খুব চালাকির সাথে রাশিদার কাছ থেকে তার স্বামী প্রতিশ্রুতির মাধ্যমে মুকুব করে নেয়। শেষ আঘাতটি আসে তার একমাত্র ছেলে রেহানের কাছ থেকে। যখন রেহান কার কাছে থাকবে তার আব্বার কাছে না মার কাছে এই প্রশ্ন কোর্টে হাজির হয় তখন রেহান নিজেই বলে, ‘রেহান এর কি রাগ মায়ের প্রতি সে যে এতদিন তার দাঁতে বিষ জমিয়ে রেখেছিল। মায়ের জন্য চিৎকার করে বলল না যাবো না। সে আমার মা নয়। সে আমার কেউ নয়। সে চরিত্রহীন সে অন্য পুরুষকে বিয়ে করার জন্য আমার বাবার সঙ্গে বেইমানি করেছে। বাবাকে ঠকিয়েছে। না না না ওই চরিত্রহীনের কাছে আমি যাব না। রাশিদার জীবন শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পুরুষের বঞ্চনায় আবর্তিত।
“ঘরছাড়া” গল্পে বিমলাকে আমরা দেখতে পাই, বিমলার ঘর এখন রেলের ধারে। তার তো আর যৌবন নেই, সে নিয়ে তার ভাববার প্রয়োজনও নেই। বিমলা নিরক্ষর এর সময় যৌবন পার করেছিল তাই এমন নিরিবিলি কুকুরদের সঙ্গে সে থাকতে পেরেছিল পাঁচ বছর। সারাদিন যে ট্রেন চলে যায়। প্রথম প্রথম চাকা গুনতো সে। যত দিন গেছে ট্রেনটা যেন আবার তার কাছে বি জি হয়ে উঠেছে। খুব চেনা আর খুব জানা। দরকারে থামে আর কারো কথা না শুনে কত বড় সংসারে পাড়ি দেয়। ট্রেন থেকে চলে যাওয়া মানুষেরা কেউ কেউ ছুঁড়ে দেয় খাবারের প্যাকেট। কেউ আধ খাওয়া পেয়ারা, কেউ গোটা কমলা লেবু, কেউ থুথু ছুঁড়ে দেয়। বিমলা চোখ মেলে দেখে আর হৃদয় খুলে সেইসব দান গ্রহণ করে। বিমলার ঘরে সব সরঞ্জাম আছে তবুও কিছুতে স্নান করে না, কাপড় বদলায় না, চুল আঁচড়ায় না। একদিন বিমলাকে সবাই পাগল বলে।।
বি জির বাড়িতে বিমলার কাজের মেয়ে। তার ঘর ছাড়া হওয়া, রেল লাইনের পাশে ঘর বাধা, তাকে পাগল ভেবে এনজিওদের দ্বারা হাসপাতালে ভর্তি, এরপর চম্পা রানির বাড়িতে আবার কাজ, আবার তারপর পার্কসার্কাস স্টেশনের গায়ে বিমলার স্থান এবং অবশেষে আবার মন্ত্রী বি জির ঘরে শেষ স্থান এবং যেখানে গিয়ে দেখে সে যে বি জির বউ বাড়ি থেকে ঘর ছাড়া।’বাবা ও তার মেয়েরা মাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়েছে মেয়েদেরকে বিদ্রুপের হাসি পালিয়েছে মনে পালিয়েছে। বাড়ির সব জিনিসপত্র সব্বাইকে বিলিয়ে দেয়। ঘরের কথা বাইরে দেয়। বাবাদের পার্টির গোপন কথা অন্য পার্টিকে বলে দেয় তাই মাকে তাড়িয়ে দিয়েছি আমরা।’ কাজের লোক ঘর হারিয়ে, ঘর পেয়ে, আবার ঘর হারিয়ে, অবশেষে ঘর পেল। কিন্তু বাড়ির প্রধান বি জির বৌকে ঘর ছাড়া করেছে তার স্বামী ও সন্তানেরা মিলে।
‘একলা দেশে’ গল্পটি হেডদিমনির সঙ্গে জুনায়েদের স্নেহের সম্পর্ক খুব সুন্দর ভাবে ফুটে উঠেছে। ধর্মের প্রাচীরের বাঁধ ভেঙে সে এখন সংখ্যগুরুর ঘরে সংখ্যালঘু হয়েছে। অবসর নিতে পাঁচ বছর বাকি। একমাত্র মেয়ে বিদেশে চলে গেছে স্কলারশিপ নিয়ে। স্বামী মারা গেছে। সে অত্যাচারী ছিল। রেলের চাকরি করত। রেলের সম্পদ বেচে ফুর্তি করত। দেশের সম্পদ বলে এতটুকু দুঃখ দরদ ছিল না লোকটার। অথচ তাকেই পুরস্কার প্রমোশন ইনক্রিমেন্ট গুলো দিয়েছিল রেল দপ্তর। হেডদিদির এক ছাত্র। জুনায়েদ পড়াতে ভালো। কিন্তু প্রতিদিন সে গাড়ির গ্যারেজে কাজ করে তারপর স্কুলে আসে। তার হাতে পায়ে কালি মাখা। একদিন দিদিমনি জুনায়েদকে বলেছিল, ‘জুনায়েদ তোর মাকে ডেকে দিস একবার দেখা করে যেন আমার সঙ্গে কথা আছে।’ l জুনায়েদের মা এসেছিলেন কিন্তু মনের কোন কথা বলা হয়নি। কারণ সেদিন তার মা জুনায়েদকে নিয়ে মাদ্রাসাতে ভর্তি করবে। আর তারা কলকাতা ছেড়ে দিল্লি চলে যাচ্ছে সেই খবরটা দিতে এসেছে। জুনায়েদ আসেনি উল্টে তার মা হেডদিমনির হাত ধরে বলেছিল জুনায়েদকে একটা সাদাসুতোর সেরানি ও টুপি বানিয়ে দিতে। তারপর আবার চায় একটা কোরান, তারপর চাওয়া একটা জায়নামাজ। জুনায়েদ তার হেডদিমনির জন্য নিয়ে আসতো কলকাতা থেকে বহু দূরে আপনি বেড়ে ওঠা কুলেখাড়া, ডুমু্র, কাঁচা হলু্দ, কলার থোড়।
তারপর জুনায়েদের সঙ্গে একবার দেখা হয়েছিল এ সি কম্পার্টমেন্টের সামনে। দাঁড়িয়ে আছে একটা মৌলানা। সাদা শেরওয়ানি সাদা টুপি পরা লোক। এসেই প্রণাম করে বলে আমাকে চিনতে পারলেন হেডদিমনি। ঘন কালো দাড়ির ফাঁকে তার সাদা দাঁতের হাসি। সেই ছোট জুনায়েদের কথা মনে পড়ে। এখন সে দিল্লির কাছে একটি গ্রামে একটি মসজিদে ইমামতি করে। নামাজ পড়ায়। এখন রমজান মাস তারাবির নামাজে কোরান খতম করতে হয়। সে হাফেজ হয়েছে।
টিভির পর্দায় খবরের পাতা জুড়ে লেখা শুধু জুনায়েদ আর জুনায়েদ। মাসের টাকা মসজিদ থেকে পেয়েছিল। তা দিয়ে মায়ের জন্য ঈদের বাজার করতে বেরিয়েছিল। দিল্লির মার্কেটেই পাওয়া যায় সস্তা আর ভালো কাপড়। তাই কিনে ফিরছিল জুনায়েদের নতুন কাপড় পড়ে ঈদের নামাজ পড়ার কথা তার মার। কিন্তু সে নতুন কাপড় করে কবরে শুতে গেল। গো মাংস খাওয়ার অভিযোগে। হেডদিমনির বিশ্বাস ছিল যে তার মত ভালো ছেলেকে কেউ মারবে না, মারতে পারে না। বিশ্বাসের ভিত্তি নড়বড় করছে না, সমূলে উৎপাটিত হয়েছে হেডদিমনির–‘হেডদিমূনি এখন তাঁর ঠোঁটদুটিকে কাঁমড়ে ধরে আছেন আর কি যেন লুকিয়ে লুকিয়ে গিলে খাচ্ছেন,’
কিছু গল্প অনালোচিত থাকল- “বাবাহাড়াম”, “ময়নাগোর”, “গান ম্যান” ইত্যাদি ইত্যাদি। পাঠকের নিশ্চয় ভাল লাগবে এগুলো। শেষে বলি হাঁড়ির ভাত কয়েকটি টিপলেই বোঝা যায় যে সব চাল সেদ্ধ হয়েছে কি না।
বইয়ের প্রচ্ছদ আরো ভাল হতে পারত। প্রচ্ছদ আকর্ষণীয় নয়, এবং গল্পগুচ্ছের দম ও গতিকে আবদ্ধ করতে ব্যর্থ। কিন্তু এসবকে ছাপিয়ে গেছে লেখকের চেতনার ও তাড়নার অসম্ভব গতি।
আর উপরি পাওনা রাঢ় বাংলার কথ্য ভাষা, মানুষের ভাষা, মরা-বাচাঁর ভাষা –‘হওঁ, শেষ ব্যালানে প্যেল্যোম বাইশ নম্বর টেরেম। চাপল্যোম, হাওড়ার বিরিজ কত্ত ছন্দ্যির কত্ত বন্দ্যির! হাঁ কর্যো ভ্যালে আছি অপর পানে। কন্টাকদর আস্যো বলে, ভাড়া দ্দ্যো।আমি কোঁচড় থেকে এক আনা দিয়ে দিলাম! সি কি জ্জোব্ব্যোরি তার। ব্বল্যো কি কুথা যাব্বি? কুথা নাম্ববি?… জীবনকে এপাশ ওপাশ চেখে না দেখলে, ছেঁকে না দেখলে হয়তবা এসব গল্প লেখা যায় না। আর কেউ লিখলেও তাতে জীবন খুঁজে পেতে বেগ পেতে হতে পারে।