পাতাল বন্দি কার্বন-ডাই-অক্সাইড

বিশ্ব উষ্ণায়নে জেরবার আমাদের বসুন্ধরা। অনেক কারণের মধ্যে এর একটি উল্লেখযোগ্য কারণ হল বাতাসে কার্বন-ডাই -অক্সাইডের পরিমাণ বৃদ্ধি। এই উষ্ণায়নে পৃথিবীর জলবায়ু, ভূমিরূপ, কৃষি উৎপাদনের উপর ব্যাপক প্রভাব পড়ছে। অদূর ভবিষ্যতে হয়তো মেরু অঞ্চলসহ পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানের বরফ গলে সমুদ্র তীরবর্তী অঞ্চলগুলিকে জলমগ্ন করে দেবে এই গ্লোবাল ওয়ার্মিং। পরিমাণগত গ্রীনহাউস গ্যাস হিসেবে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ সর্বাপেক্ষা বেশি। বিশ্ব উষ্ণায়নে এই গ্যাসটির প্রভাব খুবই বেশী। ইংল্যান্ডে শিল্প বিপ্লবের পর থেকেই এই গ্যাসটির পরিমাণ বাড়তে শুরু করে বায়ুমণ্ডলে। এক হিসাব বলছে বিগত দেড়শ বছরে বাতাসে কার্বন ডাই- অক্সাইড বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ৮০%। মানব জগতের কাজকর্মের ফলে প্রতি বছর প্রায় ৩০ বিলিয়ন টন কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গত হয়। কার্বন-ডাই-অক্সাইড একটি প্রাথমিক গ্রীন হাউস গ্যাস ও প্রকৃতিতে ইহা দীর্ঘস্থায়ীও বটে। শিল্পক্ষেত্র, পরিবহন, বিদ্যুৎ উৎপাদন ও অন্যান্য ক্ষেত্র থেকে প্রতিমুহূর্তে এই দূষক গ্যাসটি উৎপন্ন।

তাহলে কার্বন-ডাই-অক্সাইডরূপ দূষণ দৈত্যের হাত থেকে বাঁচার উপায় কী? বিজ্ঞানী, প্রযুক্তিবিদ ও পরিবেশবিদরা নানা উপায় বাতলাচ্ছেন। বর্তমান সময়ে একটি নতুন কথা শুনিয়েছেন তাঁরা। কার্বন ডাই অক্সাইড-এর একটি বিশাল উৎস কলকারখানা। এখান থেকে নির্গত এই বিষাক্ত গ্যাসটিকে যদি বাতাসে বের হবার আগেই পাতাল বন্দি করা হয়? তাহলে সমস্যার সমাধান হবে কিছুটা। আমেরিকার সাদাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু গবেষক, প্রযুক্তিবিদ ও বিজ্ঞানীরা যে পন্থা আবিষ্কার করেছেন তা হলো মাটির তলায় যেখানে ক্ষারীয় আগ্নেয়শিলা বা ব্যাসল্ট আছে, সেই স্থানে তারা পরীক্ষামূলক ভাবে ২৩০ মেট্রিক টন কার্বন-ডাই-অক্সাইড পাতাল বা মাটির তলায় বন্দি করতে সমর্থ হয়েছেন।

আইসল্যান্ডেও একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে নির্গত গ্যাসটিকে মাটির তলায় প্রায় ৪০০-৫০০ মিটার দূরত্বে অবস্থিত ওই ক্ষারীয় ব্যাসল্ট স্তরে পাঠিয়েছেন সেখানকার বিজ্ঞানীরা। এই সকল পরীক্ষার দু’বছরের মধ্যেই তাঁরা দেখেন প্রায় ৯৫% কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাসই কার্বনেট লবণে রূপান্তরিত হয়েছে। এই লবণ পক্ষান্তরে মাটির খনিজ লবণের পরিমাণ বৃদ্ধি করে। সমগ্র প্রক্রিয়াটি করতে খরচ খুবই কম। তাই পরীক্ষার সাফল্যে উজ্জীবিত বিজ্ঞানীরা পৃথিবীর সর্বত্র ইহা প্রয়োগের চিন্তাভাবনা করছেন। তাঁরা দেখেছেন প্রতি টন কার্বন-ডাই-অক্সাইডের জন্য জলের প্রয়োজন মাত্র ২৫ টন। সমুদ্র তীরবর্তী অঞ্চলে জলের যোগান দেবে পরিশ্রুত সমুদ্রের জল। তবে বলা ভাল পৃথিবীর সব জায়গায় ব্যসল্ট ভূমিস্তর পাওয়া যায় না, তাই প্রক্রিয়াটি হয়তো সর্বজনীন বা বিশ্বজনীন হবে না তবে ভারতের দক্ষিণ ডেকান অঞ্চলে রয়েছে বিপুল ব্যাসল্ট স্তর। তাই দক্ষিণ ভারতে প্রক্রিয়াটি সফল হলেও হতে পারে। যদি হয়, মন্দ কী।

You may also like