দমন

“এর একটা বিহীত অবশ্যই করা দরকার, আপনারা কী বলেন?” সফিকউল্লাহ উজুর পাড়ার চায়ের দোকানে বসে হঠাৎই চেঁচিয়ে উঠলেন। মাচায় বসে থাকা কয়েকজন গ্রামবাসী ব্যাপারটা বুঝতে না পেরে এমন বলার হেতু জানতে চাইলে সফি হুজুর বলে, “আরে এই যে নুরুর বিটি রুমানা মরদের মতন হাফ প্যান্ট পরে দেশ বিদেশে ফুটবল খেলে বেড়াচ্ছে!” সকলে এবার হুজুরের কথায় সায় দিয়ে বলে, “ঠিকই তো, ঠিকই তো, এতে তো সমাজ উচ্ছন্নে যাচ্ছে। আজই চলো সবাই। নুরুকে গিয়ে বলি, তোমার মেয়ে হয় ফুটবল ছাড়বে আর না হয় তুমি আমাদের পাড়া ছাড়ো।”

রংপুরের মফস্বলের নুরুল আমিনের একমাত্র মেয়ে রুমানা আখতার এবার স্পোটিং ক্লাবের হয়ে বিদেশে খেলতে গিয়ে দেশজুড়ে নাম পেয়েছে। তাতে হুজুরের দল খেপে আছে আর সেই কাজে আগুনে ঘি ঢালার কাজটা করছে সফি হুজুর। তারা এখন সকলেই নুরুল আমিনের বাড়িতে হাজির, এই অজাচারের একটা হ্যাস্তন্যাস্ত করতেই হবে। কিন্তু কেউ কি ভেবেছিল এমন বিস্ময় তাদের জন্য অপেক্ষা করছে? রুমানা সোজা এক ঘর লোকের সামনে সফি হুজুরের গালে সপাটে একটা চড় কষিয়ে দিল। সকলে তো অবাক! “কী? ফুটবল? হাফ প্যান্ট? তাই না? ” রুমানা বলে চলে, "ছোটো থেকেই দেখেছি, আমাদের সংসারের অভাব, বাবা যতক্ষণে রিকশা ঠেলেছে আমাদের হাঁড়ি চড়েছে। সাত তালি দেওয়া ছেঁড়া কাপড় পরে বড়ো হয়েছি। তখন কোথায় ছিল আপনাদের ফরমান? কই একটা নতুন ফ্রক এনে দিয়ে তো বলেননি- মা রে এটা পর। অন্য দিকে এই হুজুরের কাছে যখন আরবি পড়তে যেতাম, আমার ছেঁড়া ফ্রকের দিকে এক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকতো, কখন যেন আমার শরীরের ভাঁজ দেখতে পাবে। আমার ছেঁড়া কাপড়ে যদি তোমাদের কামরস জাগ্রত হয়, সে লজ্জা আমার না সমাজের? আজ আমি ফুটবল খেলে একটু ভালো পজিশনে এসেছি, আর তোমাদের গাত্রদাহ হচ্ছে? আমি হাফ প্যান্ট পরে বিদেশে ফুটবল খেলে আসলাম কিন্তু সেখানে কেউ আমাকে কেউ লালায়িত চোখেও তাকায়নি, বিশ্বাস করো। তোমাদের এত জ্বালা কেন জানতে পারি কি?”

নুরুল আমিন মেয়েকে ধমক দিয়ে চুপ করতে বলে। সফি হুজুর একটু লজ্জিত হয়। কিন্তু যাবার আগে শাসিয়ে যায়, “শোনো নুরু, তোমার মেয়ে অনেক বেড়ে গেছে, এর জন্য তোমাদের অনেক ভূগতে হবে, বলে দিচ্ছি। চলো সবাই।” সকলে নুরুলের বাড়ি থেকে চলে আসে।

রুমানা একটা জাতীয় স্তরের ক্লাবের থেকে আসা ফোনে ব্যস্ত হয়ে যায়।

You may also like