জয় শ্রীরাম

by Abu Siddik

খেলাটি সামনে সামনে হওয়া দরকার। লুকোচুরির দিন শেষ। আমি যখন এই লাইনটি লিখছি, তখন পটকার শব্দ হানা দিচ্ছে চারিদিক থেকে। নিচে এক মাড়োয়ারি-পুত্র আলো জ্বালিয়ে আমার ও আমার সন্তানদের  জীবনে অন্ধকার বয়ে নিয়ে আসছে হু হু করে ।আর সম্ভাষণ করছে, ‘জয় শ্রী রাম’ বলে।লাড্ডুর প্যকেট দিয়ে যায় নি ঘরে। সেটাই একরকম একমাত্র ভালো খবর আজ ঐতিহাসিক প্রাণ প্রতিষ্ঠার দিনে।অয্যোধ্যায় রাম মন্দিরের।

এসি সার্ভিস বয় সকাল সকাল একটি শুভেচ্ছা বার্তা পাঠিয়েছেন।খুব কাছের বন্ধুদের কয়েকজন বাড়িতে পুজো করছেন। ফেসবুকে দেখলাম। আরও অনেক বন্ধু, সহকর্মী, ফেসবুকে জয় শ্রীরাম স্লোগানের ঢেউ তুলেছেন। প্রতিবেশীর অনেকেই বাড়িতে পুজো করছেন হয়তো। আবার না করতেও পারে।

রাস্তায় সর্বহারাদের সাইকেল, ভ্যান, রিকশা, টুকটুকের হাতলে জয় শ্রী রাম পতাকা দোল খাচ্ছে। শহরের মন্দিরগুলো আলোকিত। রাস্তাঘাটের সর্বত্রই জয় শ্রী রাম পতাকা উপচে পড়ছে। দশকর্ম ভাণ্ডারগুলোর কথা ছেড়েই দিলাম।কিতাবের দোকান, মুদির দোকানেও দেদার বিক্রি হচ্ছে এই পতাকা।

এখন প্রশ্ন হলো যারা আজ উল্লাসে মেতেছেন তারা কি আমার শত্রু? মোটেও না।অনেকেই বন্ধু আছেন। অনেকেই আমাকে সম্মান করেন। কিন্তু যেটি উনারা করছেন তাতে আমাদের হাতে না মেরে ভাতে মারছেন। বিশ্বাস আর বিঞ্জান এক নয়। পারিবারিক পরিসরে ধর্মীয় আচার আচরণ করা, আর একটি ধর্মীয় স্লোগানকে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসাবে বেছে নিয়ে অন্য ধর্মাবলম্বী মানুষদের প্রকাশ্যে ভয় দেখানো এক জিনিস নয়। এটি রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস সংখ্যালঘুদের উপর। মুসলমানদের উপর।

রাস্তাঘাটে যারা জয় শ্রীরাম স্লোগান দিচ্ছেন, তাদের দৈহিক প্রকাশভঙ্গিই জানান দেয়, এখানে ধর্মের সহিষ্ণুতার কিছু নেই। এই সহজ সরল সত্যটি একটি বাচ্চাও জানে।তারাও বোঝে।বোঝেনা না বুঝতে চায় না আমাদের অনেক কুশিক্ষিত নাগরিক। ধর্মকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসাবে প্রয়োগ করতে দেখছেন। আর তাতে তাঁরা নিজ উৎসাহে দলে দলে সামিল হচ্ছেন। কিসের জন্য? সকলের রাজনৈতিক ক্ষমতার আকাঙ্ক্ষা নাও থাকতে পারে। কিন্তু যেটি আছে তা হলো তার মনের গভীরের এক গভীর বাসনা। এখানে রাম মন্দিরের প্রতিষ্ঠার। আর বিধর্মীদের টাইট দেওয়ার । খাপে খাপ। বেকারের পোলাপান বলছে। সর্বত্রই।

জয় শ্রীরাম স্লোগানে ধর্মের কিছু নেই। নেই রামের প্রতি ভালবাসা। এটি একটি রাজনৈতিক হাতিয়ার যা প্রয়োগ করে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে গণতন্ত্রের খালি ধ্বজা উড়ানো যায়। ধর্মীয় ফ্যাসিবাদের সব বিষ আগে এই স্লোগানে নিহিত না থাকলেও আজকের দিনে তা আর বিশ্বাস হয় না।এই স্লোগান ভক্তি উদ্রেক করে না। জন্ম দেয় ভীতির। রামের নামে।

তাই এই ভয় দেখানো স্লোগানের আওতায় যেসব আঁতেল নাগরিক সোশ্যাল মিডিয়ায় নানা প্রকারের, নানা মতবাদের, নানা ভালো কথা বলছেন রামের নামে বিশেষ করে আজকের এই প্রাণ প্রতিষ্ঠার দিনে, সে উদার, অনুদার, ধার্মিক, অধার্মিক, নাস্তিক, আস্তিক, সেকুলার, মেকি সেকুলার, পুরুষ বা কাপুরুষ, বুদ্ধিজীবী বা ধান্দাজীবী, রাজনৈতিক বা অরাজনৈতিক যায় হন না কেন, তিনি “মোদীই পারেন- এ বিশ্বাসী’, ‘যে মোদীকে  আমরা একজন মাস মার্ডারার হিসাবে জানি, যার অধীনে গুজরাট গণহত্যা হয়েছে।



তাই সোজা কথা সোজাভাবে বলি। জয় শ্রীরাম একটি নিছক ধর্মীয় সম্ভাষণ নয়। এটি আর এস এসের, বিজেপির পরীক্ষিত একটি রাজনৈতিক অস্ত্র। আমার কাছের, দূরের, চেনা, অচেনা যারা জয় শ্রী রাম স্লোগানে শ্রী রামের মাহাত্য খুঁজে পাচ্ছেন, তাঁদের বুদ্ধি ভ্রষ্ট হয় নি। তাঁরা স্বেচ্ছায় বিবেক, যুক্তি, বোধ কে গলা টিপে হত্যা করছেন।প্রকাশে বিদ্বেষ ছড়াচ্ছেন। বিদ্বেষে মদত দিচ্ছেন। কেউ চায়ের দোকানে। কেউ লেপের তলে। কষ্ট এখানেই।

স্বীকার করলেই ল্যাটা চুকে যায়- হ্যাঁ হিন্দু রাষ্ট্রের বাসনা আপনার জন্মের আগে থেকেই ছিল। মোদী এই  স্বপ্নকে বাস্তব রুপ দিচ্ছেন।হাজার বছর একসাথে বাস করেও, মুসলমানরা আপনার বন্ধু বা কাছের বা বিশ্বাসী হতে পারে নি।

দোষ আপনার রক্তের নয়। আপনার পূর্বপুরুষদের।

এখানে বস্তুবাদ, ভাববাদ, পুঁজিবাদ, ফ্যাসিবাদ, সব বাদ বাদ দিলাম।বাদ দিতে পারলাম না শুধু আধিপত্যবাদকে, ধর্মের নামে, রামের নামে।

মুসলমানরা অচিরেই ভারতে সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে আবার হিন্দুদের শাসন করবে, এরকম অবাস্তব অতিকথায় যারা বিশ্বাস রাখে, তাদের জন্য এনার্জি ব্যয় করতে মন সরে না। আর এই উর্বর ভূমিতে মোদীর চাষ বেশি আকর্ষণ হবে, একথা একটি শিশুও জানে।

তাই মোদীমোহিত সহনাগরিকদের প্রতি কোন রাগ, বিদ্বেষ, ঘৃণা নেই। আছে শুধু করুণা। বিকার হয়েছেন। সময় আছে। শুধরে নিন। পরে আমি আপনি কেউ এই স্লোগানের আওতায় থাকব না।                                             

              

You may also like

Vinnokatha
Prothom Khondo
Price: Rs.260/-
www.vinnokatha.in
মেহনতি মানুষের মুক্তি নিশ্চয়ই একদিন আসবে। সব ধরণের শোষণ শেষ হবে একদিন--এ স্বপ্ন আমরা দেখি। শুধু দেখি না, একে বাস্তবে কার্যকর করতে 'ভিন্নকথা' তার সাধ্যমত প্রয়াস চালিয়ে যাবে। মানুষকে সঙ্গে নিয়ে, মানুষের চেতনার লক্ষ্যে, মুক্তির লক্ষ্যে।
মেহনতি মানুষের মুক্তি নিশ্চয়ই একদিন আসবে।সব ধরণের শোষণ শেষ হবে একদিন--এ স্বপ্ন আমরা দেখি। শুধু দেখি না, একে বাস্তবে কার্যকর করতে 'ভিন্নকথা' তার সাধ্যমত প্রয়াস চালিয়ে যাবে। মানুষকে সঙ্গে নিয়ে, মানুষের চেতনার লক্ষ্যে, মুক্তির লক্ষ্যে।
Vinnokatha
Prothom Khondo