দশ লাইন হবে বোধহয়। হাজার বই ঘেঁটে আর কোথাও এসব কথা খুঁজে পাইনি। মনীষী, মহামনীষীর বাণী আজ সব ঘুমপাড়ানি গান ঠেকে। সমাজকর্মীদের তাণ্ডবে ভয় পাই। বুদ্ধিজীবীদের অত্যাচারে আমি অকেজো। তাই ফিরে ফিরে আসি এই সেই দশ লাইনের নিকট। শ্রদ্ধায় নির্বাক, মাথা নত করি।
মুশকিল এই যে পশ্চিমবাংলার বিরোধী দল কংগ্রেস বা বর্তমান প্রধান বিরোধী দল তৃণমূল কংগ্রেস কখনো এইসব প্রশ্নের বামফ্রন্টের সমালোচনা করেনি বা মুসলমানদের সংরক্ষণ দেওয়ার দাবি তোলেনি।
তথাকথিত নাগরিক সমাজের বিদগ্ধজনেরা সময় সময় নানা প্রশ্নে বামফ্রন্ট সরকারের সমালোচনায় মুখর হয়েছেন বা এমন কি রাস্তায় নেমে মিছিলও করেছেন কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের এক চতুর্থাংশ মানুষকে যে অন্ধকারে রেখে দেওয়া হয়েছে তা নিয়ে কোন সমালোচনা শোনা যায়নি।
যাঁরা সিপিআই (এম) কে সংশোধনবাদী বলে গণ্য করেন ও নিজেদের মার্কসবাদী, লেনিনবাদী বা মাওবাদী বলে দাবি করেন তাঁদেরও বেশিরভাগ পশ্চিমবঙ্গে মুসলমানদের বঞ্চনার বিরুদ্ধে কোনদিন কোন কথা বলেননি।
দেখে শুনে মনে হয় পশ্চিমবঙ্গে সরকারি পক্ষ, সংসদীয় বিরোধীপক্ষ তথা অসংসদীয় বিরোধীপক্ষ সকলেই যেন পশ্চিমবঙ্গের সমাজ জীবনে উচ্চবর্ণ বাঙালি হিন্দুর আধিপত্য মূলক অবস্থান মেনে নিয়েছেন এবং সেই কাঠামোর মধ্যেই ক্ষমতার ভাগাভাগি নিয়ে লড়াই করছেন।
যারা প্রকৃতই সমাজ বিপ্লবের নেতৃত্ব দিতে চান তাদের বুঝতে হবে যে দলিত আদিবাসী মুসলমান ও অন্যান্য পশ্চাদপদ জনগোষ্ঠীর সমান অধিকারের দাবিকে এজেন্ডায় না এনে ভারতে বা পশ্চিমবঙ্গে কোনও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অগ্রগতি সম্ভব নয়।
সন্তোষ রাণা, প্রবন্ধ সংগ্রহ, গাংচিল (২০১৯), পৃষ্ঠা ৩১৪।