দরিদ্র, বঞ্চিত, ব্যথিত ও অসহায় মানুষদের চরম দুর্দিনে দুরাবস্থার কাহিনী ও আলো-আঁধারির লড়াইয়ের নানা দিক উঠে এসছে অধ্যাপক শ্রদ্ধেয় আবু সিদ্দিক স্যরের কলমে বিহতজনের উপাখ্যান নামক গল্পগ্রন্থ তে।
January 2024
-
-
মতিনের কালজীর্ণ দুধেরসরের মতো কুঞ্চিত হাতটি বন্ধু সুনীল, শক্ত করে বুকের কাছে চেপে ধরে স্থাণু হয়ে বসে আছে ! হাসপাতালের এই ক্ষুদ্র কামরায় যেন মাঘমাসের কড়া শীত ভর করেছে। ঘরেরকোণে সলতেবাতির মতো একটিমাত্র ধূসর নীল বিজলিবাতি জ্বলছে তাও বেজায় টিমটিম করে। অস্পষ্ট আলো-আঁধারির রহস্যময় চাদরে ঢাকা দিয়ে আছে ঘরটি। সুনীল সেই কখন থেকে একইভাবে বন্ধুর হাত ধরে বসে আছে- মুঠিবদ্ধ হাতেরপরে দু’ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়তে মস্তিষ্কের খোঁড়লে ডুবে থাকা স্মৃতিরা সহসা তাকে ফেরত নিয়ে যায় বহুদূরের সেই হিজলতলা গাঁয়ে, তেলাকোঁচ-লতার মতো জড়াজড়ি করে দু’বন্ধুর নির্ভারে কেটে যাওয়া অতীতের দিনগুলোতে।
-
সরকার দানা ছড়ায় বর্তমানের ভাগাড়ে
সেই সুবাদে নীতি বিকিয়ে যায় সামান্য দামে
আর অতীতের বিমর্ষ রেখা মুছে যায়
কেননা কাল বেলাওঠার বৈঠকে ভবিষ্যৎ নির্মিত হবে । -
ঝালরের একদিকে ওজ্জ্বল্য যেন কম, উজ্জ্বলতার দীর্ঘ পথের মধ্যে ওইখানে কেমন একটু অন্ধকার! কাছে গিয়ে হাতে তুলে দেখে, ঝালরটার রূপালি ওজ্জ্বল্য সেখানে বিবর্ণ হয়ে গেছে, সুতাগুলো খসে এসেছে। দেখে মুহূর্তে মজিদের মন অন্ধকার হয়ে আসে। তার ভুরু কুঁচকে যায়, ঝালরের বিবর্ণ অংশটা হাতে নিয়ে স্তব্ধ হয়ে থাকে।
-
এখন হাওয়ায় বসেছে হওয়া না হওয়ার মেলা
কে যাবে আর কে যাবে না তার কথামালা।
বুকের ভিতর একটা গুহা দেখে বিষম খাই
উবু হয়ে শয়তান এগিয়ে যাচ্ছে অন্ধকারে। -
একটা সরাল ডেকে গেল। তারপর ও কোন দিকে যে উড়ে গেল। বন চাঁদ ঘাড় ঘোরাবার আগেই ও পালাল। বিশি মাঝি…
-
জয় শ্রী রাম স্লোগানে ধর্মের কিছু নেই। নেই রামের প্রতি ভালবাসা। এটি একটি রাজনৈতিক হাতিয়ার যা প্রয়োগ করে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে গণতন্ত্রের খালি ধ্বজা উড়ানো যায়। ধর্মীয় ফ্যাসিবাদের সব বিষ আগে এই স্লোগানে নিহিত না থাকলেও আজকের দিনে তা আর বিশ্বাস হয় না।এই স্লোগান ভক্তি উদ্রেক করে না। জন্ম দেয় ভীতির। রামের নামে।
-
হাতের কাস্তে হাতে নিয়েই সাবু বিশ্বাসের বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসেছিল সুফল। তারপর আরও কয়েকটা জায়গায় গেছে। এ বাড়ি ও বাড়িতে কাজের খোঁজ করেছে। কিন্তু সবখানেই তাকে নিরাশ হতে হয়েছে। খালি হাতে ফিরতে ফিরতে ক্লান্ত হয়ে এক সময় ফিরে এসেছে বাড়ি। আর বাড়ি ফিরেই ক্লান্ত শরীরটাকে বাঁশের খুঁটিতে হেলান দিয়ে বসে পড়েছে দাওয়ায়।
-
অরণ্য ও প্রকৃতির সন্তানেরা কলকলমুখর প্রাগসর মানবগোষ্ঠীর চাপে আজ নির্বাক। তাঁরা নীরবে দেখছেন তাঁদের নির্ভরযোগ্য বাসভুমি-বনভূমি-মাতৃভূমি অপরের [পুঁজিবাদীদের] হাতে করায়ত্ত। নিজভূমে পরবাসীর বেদনা তাঁদের নিত্যসঙ্গী। তাঁরা অসহায়। গিরিকুমার অরণ্যসন্তান—সেই বৃহত্তর কৃষ্ণভারতকে বাদ দিয়ে, উপমহাদেশের সাহিত্যচর্চা কেন, কোন চর্চাই পূর্ণাঙ্গ নয়।
-
আমার চোক দেকেই মানুছ আমাকে ভয় করতোক। ফলে য্যাখুন যে পাপ কত্তে মুন চাহালচে ত্যাখুন ছে পাপ করেচি। কাহুকে কুনু ডর করিনি। এ্যামুন কী তুমাকেও না। কিন্তুক এ্যাখুন খুব ভয় কচ্চে। মরার পরে আমার কী হবে? আমার কী হবে? তাই, এ্যনেক পাপের মধ্যে থিক্যা বাচাই করা দুড্যা পাপ তুমাকে ছুনাবো। ছুনান্যার পর তুমার কাচে ক্ষ্যামা চাহাবো। তুমি আমাকে ক্ষ্যামা করে দিও খুদা, তুমি আমাকে ক্ষ্যামা করে দিও।
- 1
- 2