আবহমান সময়ের কবি, সময় চেতনার কবি শামসুর রাহমান 

by তৈমুর খান

তৈমুর খান

শামসুর রাহমানের কবিতা পড়েই আমাদের বড় হওয়ার দিনগুলি স্মরণ করতে পারি। আমাদের হৃদয়ে যে আগুন ছিল তা জ্বলে উঠবার প্রয়াস পেয়েছিল শামসুর রাহমানের কবিতায়। মূলত তাঁর কবিতা পড়েই নিজেকে অনুভব করতে পারতাম, আমিও বাঙালি, আমার প্রাণের ভাষাও বাংলা। ভাষার জন্য আমিও শহিদ হতে পারি। আবার অন্যদিকে কতখানি মানুষ হলে মানুষকে ভালোবাসা যায় সেই শিক্ষাও পেয়েছিলাম তাঁর কবিতায়। ধর্মীয় অন্ধকার দূর করে, ভণ্ডামির গ্রাস থেকে আত্মচেতনাকে চিরন্তন সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে মানবিক চেতনায় কীভাবে পর্যবসিত করা যায় সেই নির্দেশও ছিল তাঁর কবিতায়। চিন্তার এমন সরাসরি প্রতিফলন এবং আবেগের প্রদীপ্ত প্রকাশ উতুঙ্গ তরঙ্গ বিক্ষোভের অভিঘাত নানাভাবে হৃদয়কে আন্দোলিত করত। ছাত্রজীবনের উদ্দাম যৌবনোদ্গমের মুহূর্তগুলি তাঁর কবিতাতেই দীক্ষিত হতে চাইত। তাঁর কবিতা আমাদের কাছে ছিল স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার হাতিয়ার স্বরূপ, প্রশ্ন উত্থাপন করার, সিদ্ধান্ত প্রকাশ করার এবং বাংলা ভাষাকে ভালোবাসার এক মাধ্যম। মুকুলিত কষ্টগুলি, প্রতিবাদগুলি, স্বপ্নগুলি, চিন্তাগুলির প্রতিফলন দেখতে পেতাম।

 শামসুর রাহমানের কবিতা কতটা ভালোবাসার জায়গা ছিল,কীভাবে তাঁর মূল জীবনদর্শনের ভিত্তিভূমির গঠন করেছিল,কোথা থেকে তিনি পেয়েছিলেন তাঁর ভাবনার উপকরণ,তাঁর দৃষ্টিভঙ্গির সেই মহিমান্বিত মানবিক রূপের যে পরিচয় তা তিনি আত্মজীবনীমূলক বই ‘কালের ধুলোয় লেখা’-তে উল্লেখ করেছেন: “কবিতা আমার ভালোবাসার বিষয়। একটি উৎকৃষ্ট কবিতা দৈনন্দিন জীবনের খুঁটিনাটি, ক্ষুদ্রতা, ক্রমাগত মনুষ্যত্ব হরণকারী প্রবণতা, সমাজ নিয়ন্ত্রণকারী মাতব্বরদের ফাঁপা, ফাঁকা বোলচাল থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে যাই আনন্দলোকে, জীবনের অন্তহীন গভীরে। প্রথমে রবীন্দ্রনাথের কবিতা আমাকে টানেনি, কাজী নজরুল ইসলামের কবিতাও নয়, আমি মজে ছিলাম তিরিশের কবিদের কাব্যসৌন্দর্যে, বিশেষত জীবনানন্দ দাশের কবিতার রহস্যময়তায়, গভীরতায়। ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্র হওয়ার ফলে ইংল্যান্ডের কবিকুলের কবিতাবলীর ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে আসতে পেরেছিলাম। অনুবাদের কল্যাণে ইউরোপের প্রধান কবিকুলের অসাধারণ, নানা ধরনের কবিতা পড়ার সুযোগ হয়েছিল তখন।

সন্দেহ নেই, এই কাব্যপাঠে আমি প্রচুর উপকৃত হয়েছি। কিন্তু এই সঙ্গে আমি এটাও উপলব্ধি করতে পেরেছিলাম যে, আমাকে গভীর দৃষ্টিতে তাকাতে হবে আমার নিজের অন্তর্লোকে, আমার চারপাশের মানুষ এবং পরিবেশের দিকে। আমার সমাজ, চারপাশের লোকজন এবং নানা ঘটনাবলীর দিকে নজর না রাখলে জীবনের সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠ পরিচয় হবে না। এ ব্যাপারে সব সময় আমি যে সফল হয়েছি, তা নয়। কখনও কখনও যোগসূত্র আমার অজান্তেই আলাদা হয়ে গেছে। হঠাৎ কোনও ঝাঁকি খেয়ে আবার জেগে উঠেছি, চোখ মেলে দেখেছি চারিদিকে।

যখন কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলাম, তখন আমি রাজনীতি বিষয়ে আদৌ উৎসুক ছিলাম না। কোনও কোনও ঘটনা ঘটতে দেখেছি, সে বিষয়ে সামান্য কিছু জানতেও পেরেছি, কিন্তু তা আমাকে তেমন ভাবায়নি, যেন সেসব ঘটনার সঙ্গে আমার কোনও সম্পর্ক নেই, যেন আমি অন্য কোনও গ্রহের বাসিন্দা। তবে একটি কথা বলব, বলতেই হবে আমাকে—মানুষের দুঃখ-দুর্দশা আমাকে খুব বিচলিত করত। আগে আমার এক গৃহশিক্ষক আবদুল আউয়ালের কথা বলেছি। তিনি একজন আদর্শবান, প্রগতিশীল ব্যক্তি ছিলেন। তখন আমি ক্লাস এইটে কিংবা নাইনে পড়ি। তিনি আমার সঙ্গে অনেক কথা বলতেন, ধনী-দরিদ্রের বৈষম্যের কথা, সাম্যবাদের কথাও বলতেন। সব কথা আমি ঠিক বুঝতে পারতাম না, কিন্তু কিছু কিছু কথা বেশ পরিষ্কার হয়ে ঠাঁই করে নিত আমার মনে। এ কথা আমাকে স্বীকার করতে হবে, আজ যে আমি একজন প্রগতিশীল, অসাম্প্রদায়িক ব্যক্তি হয়ে উঠতে পেরেছি, তার ভিত্তিভূমিটি রচনা করেছিলেন আমার ছেলেবেলার গৃহশিক্ষক আবদুল আউয়াল। এই প্রসঙ্গে পগোজ স্কুলের শিক্ষক চিন্তাহরণ সোমের কথা না বললে ঘোরতর অন্যায় হবে। তিনি একজন ভালো শিক্ষক তো ছিলেনই, অসাম্প্রদায়িক চেতনায়ও ঋদ্ধ ছিল তাঁর চিত্ত। চিন্তাহরণ সোম এবং আমার গৃহশিক্ষক আবদুল আউয়ালের কথা আমি কস্মিনকালেও ভুলতে পারব না। কেননা, তাঁরা দু’জনই মনুষ্যত্বকে জাগিয়ে তুলেছিলেন।” এই মনুষ্যত্ব তাঁর কবিতায় প্রতিফলিত হয়েছিল। গৃহ পরিবেশে তাঁর পিতার মধ্যেও পেয়েছিলেন মনুষ্যত্বের শিক্ষা।

‘সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই’ তা তাঁর অতি শৈশবেই জানা হয়ে গিয়েছিল। তাঁর চেতনার ভিত্তিভূমি এবং সৃষ্টিক্ষেত্রের লক্ষ্যস্থল সেই আবহমান মনুষ্যত্বেরই ধারক ও বাহক তা বলাই বাহুল্য। নজরুল-রবীন্দ্রনাথের কবিতা প্রথম জীবনে তাঁকে আকৃষ্ট করেনি। ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্র হওয়ার ফলে বিদেশী কবিতা এবং জীবনানন্দ দাশের কবিতা তাঁকে বেশি করে টেনেছিল। কবিতার নানা বাঁক ও রহস্যময়তার মধ্যে তিনি ডুবে যেতে চেয়েছিলেন। আবার একইভাবে নিজের অন্তর্লোকের মধ্যে ডুব মেরেও আত্মসন্ধানে ব্রতী হয়েছিলেন। সমসাময়িক জীবনযাত্রা, পারস্পরিক সংঘাত এবং রাষ্ট্রীয় কার্যকলাপ ও অমানবিক বর্বরতার প্রতি বিদ্রোহ—কবিতা রচনায় তাঁকে শক্তি যুগিয়েছিল। সমস্ত রকম ধর্মান্ধতা ও সামাজিক নৈরাজ্যবাদের বিপরীতে দাঁড়িয়ে তিনি চিরন্তন মানবিক পৃথিবীর সন্ধান করেছিলেন। সেদিনের পটভূমিতে সেটাই ছিল তাঁর অগ্রবর্তী পদক্ষেপ।

পঞ্চাশের দশক থেকে একুশ শতকে মৃত্যুর আগে পর্যন্ত যে অস্থির বাংলাদেশের পরিচয় আমরা পাই, সেইসব নানা ঘটনার প্রসঙ্গ ও প্রেক্ষাপটগুলি তিনি কবিতায় তুলে ধরেন। শুধু ঘটনার ইতিহাস নয়, ঘটনার সঙ্গে মানব জীবনের, দেশের ও দেশের ভবিষ্যতের কী সম্পর্ক সে সম্পর্কেও নিজস্ব উপলব্ধির কথা এবং সিদ্ধান্ত জানাতে ভুললেন না। প্রথমদিকের কবিতাগুলিতে জীবনানন্দীয় প্রভাব লক্ষ করা যায়, বিশেষ করে ‘প্রথম গান দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে’, ‘রৌদ্র করোটিতে’, ‘বিধ্বস্ত নীলিমা’, ‘নিরালোকে দিব্যরথ’ কাব্যগুলিতে।এসব কাব্যে রোমান্টিক স্বপ্নলোকে আত্মমুক্তির পরিধি বিস্তারও করেছেন। গোধূলির রঙে একদিন শেষে খুঁজে পেতে চেয়েছেন ঘাসের শয্যা। কখনো আত্মজীবনীর খসড়া লিখতে চেয়েছেন। নাগরিক সভ্যতার গহন নিঃসঙ্গতা কখনও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। ফেনিল মদিরার সঙ্গে আবর্তে আবর্তে মত্ত কামের দেখা পেয়েছেন। নগর হয়েছে বহুবল্লভা। নিষ্কাশিত যৌবনের অকুণ্ঠ মজুরি গুনে নিয়েছে। ‘বিধ্বস্ত নীলিমা’য় লিখলেন:

  “কেমন ক’রে শেখাই তাকে

           ছোট্ট অবুঝ শিশুটাকে

            জ্বালতে তারার বাতি,

 যখন কিনা আমরা নিজে

 অন্ধকারে শুধুই ভিজে

               কাদা ছোঁড়ায় মাতি!

 কেমন ক’রে শেখাই তাকে

         ছোট্ট অবুঝ শিশুটাকে

          বলতে সত্য কথা,

 যখন কিনা মিথ্যা থেকে

           আমরা নিজে শিখছি ঠেকে

            চতুর কথকতা!

 কেমন ক’রে শেখাই তাকে

              ছোট্ট অবুঝ শিশুটাকে

               বাসতে শুধুই ভালো,

 যখন কিনা রাত্রিদিন

 আমরা নানা অর্বাচীন

            হচ্ছি ঘৃণায় কালো।

কেমন করে বলি তাকে

          ছোট্ট অবুঝ শিশুটাকে

           ‘আস্থা রাখো ওহে!’—

 যখন কিনা বিশ্বজুড়ে

 আমরা শুধু মরছি ঘুরে

           নাস্তিকতার মোহে।”

অন্ধকারের যুগ, মিথ্যার যুগ, ছলনার যুগ, ঘৃণার যুগ, আস্থাহীন নাস্তিকতার যুগ যখন সমাজ ব্যবস্থায় প্রচলিত, তখন সুচারু মানবআকাশ কোথায় পাবেন কবি? সময় যেন ক্ষুদার্ত বাঘ। মেধা-মনন সবই বাঘের গ্রাসে পরিণত হয়েছে। স্তাবকবাদী একদল মানুষ যারা তোতাপাখি হয়ে উঠেছে। সেসব ব্যক্তিত্বহীন তথাকথিত বুদ্ধিজীবীদের বিপরীতে দাঁড়িয়েছেন কবি। আলোময় বিশ্বে দুঃখের পারাবার দেখে সচকিত হয়েছেন। ছুঁচোর কেত্তনের পর বিধ্বস্ত নীলিমায় তাই পৌঁছে গেছেন। ‘নিরালোকে দিব্যরথ’ কাব্যেও লিখেছেন: ‘তুমি নেই তাই বর্বরের দল করেছে দখল বাসগৃহ আমাদের।’ কবিও বাঁচতে চেয়েছেন। পড়ো বাড়িটাকে পুনরায় দাঁড় করাতে চেয়েছেন। কবির চৈতন্য জুড়ে প্রতিবাদী ঝড় উঠেছে। অসাম্য অনাচার বিভেদবাদী সমস্ত চক্রান্তের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন কবিতাকে হাতিয়ার করে। স্বাভাবিকভাবেই কবিতা সরাসরি স্পষ্টবাদিতার ভূমিকা পালন করেছে। শব্দের শরীরে লেগেছে যৌবনের জোশ। দৃঢ় উচ্চারণের সঙ্গে শৈল্পিক সিদ্ধিরও অন্তরায় ঘটেনি।

 ‘নিজ বাসভূমে’ থেকেই ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। এখানেও সময় কবির উচ্চারণে আরও ঘনীভূত হয়ে উঠেছে। বিপন্ন বিস্তারের পর্যায়গুলি খণ্ডন করেছেন শব্দের মেধাবী উত্তরণে। কবি তীক্ষ্ণ পর্যবেক্ষকের মতোই চোখ কান খুলে রেখেছেন। তাই সামাজিক শোষণ এবং অপশাসনের যেমন নিরসন চেয়েছেন, তেমনি ভাষিক ও সাংস্কৃতিক আগ্রাসনে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগের বিরুদ্ধেও যেন কবিতা দিয়েই যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। পাকিস্তানের শাসক ঘোষণা করেছেন সরকারি ভাষা হবে উর্দু। কিন্তু বাঙালি বাংলাভাষী মানুষ কেন তা মেনে নেবে? ভাষা জাতির প্রাণ। ভাষা জাতির আবেগ। ভাষা জাতির স্বপ্ন। ভাষাকে কখনোই অসম্মান করা সহ্য করতে পারেন না। আর একজন ভাষাকর্মী হিসেবে শামসুর রাহমানও তা পারেননি। কবির প্রথম শর্তই হচ্ছে ভাষার প্রতি আনুগত্য, প্রেম। বিংশ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ অ্যাংলো-আমেরিকান কবি ডব্লিউ. এইচ. অডেন (১৯০৭-১৯৭৩) বলেছেন:

“A poet is, before anything else, a person who is passionately in love with language.” (The Complete Works of W.H. Auden: Prose, Volume II: 1939-1948) অর্থাৎ অন্য কিছুর আগে একজন কবি হলেন এমন একজন ব্যক্তি যিনি ভাষার প্রতি আবেগপ্রবণ। এই আবেগ প্রবণতা কতটা অন্তর্স্পর্শী তা শামসুর রাহমানও লিখেছেন ‘কবিতার সঙ্গে ঘর গেরস্থালি’ কাব্যে:

“বাংলা ভাষা উচ্চারিত হলে নিকানো উঠোনে ঝরে

রৌদ্র, বারান্দায় লাগে জ্যোৎস্নার চন্দন। বাংলা ভাষা

উচ্চারিত হলে অন্ধ বাউলের একতারা বাজে

উদার গৈরিক মাঠে, খোলা পথে, উত্তাল নদীর

বাঁকে বাঁকে; নদীও নর্তকী হয়। যখন সকালে

নতুন শিক্ষার্থী লেখে তার বাল্যশিক্ষার অক্ষর,

কাননে কুসুমকলি ফোটে, গো-রাখালে বাঁশি

হাওয়াকে বানায় মোঠা সুর, পুকুরে কলস ভাসে।

বাংলা ভাষা উচ্চারিত হলে চোখে ভেসে ওঠে কত

চেনা ছবি মা আমার দোলনা দুলিয়ে কাটছেন

ঘুমপাড়ানিয়া ছড়া কোন্‌ সে সুদূরে; সত্তা তাঁর

আশাবরী। নানি বিষাদ সিন্ধুর স্পন্দে দুলে

দুলে রমজানি সাঁঝে ভাজেন ডালের বড়া আর

একুশের প্রথম প্রভাতফেরি, অলৌকিক ভোর।”

বাংলা ভাষা যুগচেতনায় কতখানি মরমি দাগ কাটতে পারে, কতখানি আত্মবিশ্বাসের স্পর্ধা দেখাতে পারে, কতখানি ভালোবাসার যোগ্য হতে পারে তা শুধু জীবনযাপনে নয়, প্রকৃতির মধ্যেও তার সাবলীল স্পন্দন উপলব্ধি করা যায়। ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক, আধ্যাত্মিক, প্রাকৃতিক, স্বাদেশিক, স্বাধীনতা এবং প্রেমের মূল্য এই ভাষা-প্রেমের মধ্য দিয়েই তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন। যে ভাষার জন্য তরুণ যুবকেরা রাজপথে বন্দুকের সামনে বুক চিতিয়ে দাঁড়াতে পারে, যে ভাষার জন্য একটা জাতি স্বাধীনতার লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে,যে ভাষার জন্যই বিশ্বমাতৃভাষা দিবসের ঘোষণা হয়—এই ভাষার কবি কি কম গর্বের? পঞ্চাশের দশকে যে ভাষা আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল তার জীবন্ত ইতিহাস রচনায় কবিও সামিল হয়েছিলেন। তখন তিনিই তো ‘নিজ বাসভূমে’ কাব্যের ‘বর্ণমালা, আমার দুঃখিনী বর্ণমালা’ কবিতায় বলতে পেরেছিলেন: ‘নক্ষত্রপুঞ্জের মতো জ্বলজ্বলে পতাকা উড়িয়ে আছো আমার সত্তায়।’ আরও তীব্র ঘোষণা করে জানিয়েছিলেন:

“আজন্ম আমার সাথী তুমি,

 আমাকে স্বপ্নের সেতু দিয়েছিলে গ’ড়ে পলে পলে,

 তাইতো ত্রিলোক আজ সুনন্দা জাহাজ হ’য়ে ভেড়ে

                                        আমারই বন্দরে।”

 বাংলা ভাষার মহিমা এভাবেই অনুধাবন করেছেন এবং সারা বিশ্বের মানুষকে তা করিয়েছেন। আসাদের রক্তাক্ত শার্ট বিজয় পতাকার মতো উড়েছে। চৈতন্যে প্রতিধ্বনি তুলেছে। প্রাণের পতাকা হয়ে ঘোষণা করেছে মানবিক দেশের মুক্তিকে। অত্যাচারী শাসক একের পর এক হত্যা করেছে। যাঁরা মৃত্যুবরণ করেছে দেশের জন্য তথা ভাষার জন্য, তাঁদের পবিত্র লাশ রাখার কোনও যোগ্য সমাধি নেই। মৃত্তিকা-পর্বত-সুনীল-সাগর-জল সবই ছেঁদো, তুচ্ছ। তাই এই লাশ মানুষের হৃদয়ে ঠাঁই নিয়েছে শ্রদ্ধায় ভালোবাসায়। ‘বন্দী শিবির থেকে’ কাব্যে কবি বারবার এই প্রশ্নই তুলেছেন:

“তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা,

 তোমাকে পাওয়ার জন্যে

 আর কতবার ভাসতে হবে রক্তগঙ্গায়?

 আর কতবার দেখতে হবে খাণ্ডবদাহন?”

 ৫০ দশকের এই অস্থির সময়কেই কবিতা যাপনের মুহূর্তে পরিণত করেছেন। যেখানে ইতিহাস, আবেগ এবং দেশপ্রেমের ঘনীভূত উচ্চারণ মর্মরিত হয়েছে। সাকিনা বিবি, হরিদাসীরা একের পর এক বিধবা হয়েছে। দানবের মতো চিৎকার করেছে জলপাই রংয়ের ট্যাংক। গ্রামের পর গ্রাম পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। বাস্তুভিটা ভগ্নস্তূপে পরিণত হয়েছে। শূন্য দগ্ধ ঘরে মোল্লা বাড়ির বিধবা নড়বড়ে খুঁটি ধরে দাঁড়িয়ে আছে। হাড্ডিসার এক অনাথ কিশোরী শূন্য থালা হাতে পথের ধারে বসে আছে। কৃষক, জেলে, মাঝি, রিক্সাওয়ালা সবাই স্বাধীনতার লড়াইয়ে বন্দুক তুলে নিয়েছে হাতে। সেই সময়ের আবেগ দৃপ্ত ও প্রদীপ্ত হয়ে কবিতার শরীর নির্মাণ করেছে। ‘দুঃসময়ের মুখোমুখি’, ‘উদ্ভট উটের পিঠে চলেছে স্বদেশ’,’ দেশদ্রোহী হতে ইচ্ছে করে’ প্রভৃতি কাব্যগুলিও এই একই আবেগের প্রশ্রয়ে প্রবহমান। স্বৈরশাসন এবং যুদ্ধ অপরাধীদের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদে কবি গর্জে উঠেছেন। কখনও বিদ্রূপাত্মক ভঙ্গিতেও এই প্রতিবাদ নেমে এসেছে। ‘ভগ্ন স্তূপে গোলাপের হাসি’ কাব্যের ‘কবন্ধ তাণ্ডব’ কবিতায় লিখেছেন অনিদ্রা-পীড়িত রাত কাটানোর কথা।

ধু-ধু ক্লান্তিতে দু’চোখ বিছিয়ে দেওয়া কুয়াশার জালে নিজেকে একাই দেখেন ভ্রাম্যমাণ

কাঁটাবনে।শরীর থেকে রক্ত

ঝরে। পর মুহূর্তেই মাথাটা

 গিলে খায় অর্ধেক-নেকড়েরূপী জীব।

আচমকা দুঃস্বপ্নের ধোঁয়া ছিঁড়ে জেগে উঠে দেখেন:

“সহোদরা সুতপা এবং প্রমীলার কুমারীত্বহরণের

পৈশাচিক লীলা আর রক্তাপ্লুত বাবা মা’র নিঃসাড় শরীর

বিধ্বস্ত বাস্তুভিটায়, ক্ষণকাল আগেও ছিল যা ছিমছাম,

রুচিশীল। প্রতিরোধ ভঙ্গুর, নিষ্ফল ছিল। সুতপা, প্রমীলা

পাথরের মতো ছিল নিথর, নিশ্চুপ; অবিনাশ, তুমি নিজে

ভীষণ আহত, প্রতিবেশীগণ ভীত, পলাতক। আমরাও

অতিশয় ব্যর্থ, অসহায়, যোজন-যোজন দূর থেকে ছুটে

এসে ঠিক পারিনি দাঁড়াতে তোমাদের পাশে”

 এই সেই ইতিহাস, হত্যা-ধর্ষণ, বাস্তুভিটা ভগ্নস্তূপে পরিণত করা, তারপর দেশছাড়া। কবি নিজের বিবেকের সম্মুখেই দাঁড়িয়েছেন। সময় চেতনার মধ্য দিয়ে অব্যর্থ সেই ইতিহাসকে ধারণ করেছেন। সেই রক্তাক্ত, বেদনার্ত, অশ্রুময়, করুণ অসহায়ত্বকেই লিখতে চেয়েছেন বারবার। দেশদ্রোহী হবার বাসনা নিয়েই মানবিক হবার শক্তি অর্জন করতে চেয়েছেন। নিজেই হয়েছেন সময়ের শিল্পী, সময়ের আজ্ঞাবহ শব্দকর্মী। ‘কবিতার সঙ্গে গেরস্থালি’ করতে গিয়ে রক্তখেকো বাঘের ডাক শুনেছেন। গণ্ডার, বন্যবরাহের পদচ্ছাপ দেখেছেন। বিষধর সাপ হিস হিস শব্দে ফণা তুলে দাঁড়িয়েছে। ছাগলের চামড়ার মতো স্তব্ধ আকাশ। শোকাহত বাল্মীকির চোখের মতো কবির নিজেরও চোখ। কত স্মৃতি, কত গল্প, কত প্রাণের সমারোহ সবই হারিয়ে গেছে। মহামানবের সাগরতীরে চয়নিকার পাতায় কবি রবীন্দ্রনাথকেও পেয়েছিলেন আপন করে। তাও একদিন হারিয়ে গিয়েছে। শুধু সময়ের দাগ থেকে গেছে। বেদনাকাতর হাহাকারময় জন্মভূমিকেই কবি হারিয়ে ফেলেছেন। ‘যে অন্ধ সুন্দরী কাঁদে’ কাব্যের ‘জন্মভূমিকেই’ কবিতাতে সে কথা উল্লেখও করলেন:

 “বৃথাই আমি তোমাকে কাছে চাই

 অত্যাচারী দিন, স্বৈরাচারী রাত

 আমাকে রোজ পুড়িয়ে করে ছাই—

 পাই না আর তোমার সাক্ষাৎ।”

 যে সময় কবি পেরিয়ে এসেছেন, সেই সময়কে কবি কোনওদিনই ভুলতে পারেননি। যে মানব মহিমার উপলব্ধিকে আপন হৃদয়ে লালন করেছেন, তাকেও মুছে ফেলতে চাননি। একটা দেশ, জাতি, সময়ের উত্থান-পতনকে, স্বপ্ন ও স্বপ্নহীনতাকে, গৌরবময় ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে নিয়েই তিনি মহাকালের যাত্রী হয়েছেন। নিজের কবিতা সম্পর্কে ‘ইকারুসের আকাশ’ কাব্যে বলেছেন:

“আমার কবিতা করে বসবাস বস্তি ও শ্মশানে,

চাঁড়ালের পাতে খায় সূর্যাস্তের রঙলাগা ভাত,

কখনো পাপিষ্ঠ কোনো মুমূর্ষু রোগীকে কাঁধে বয়ে

দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে পৌঁছে যায় আরোগ্যশালায়।

আমার কবিতা পথপ্রান্তে দুঃখীর চোখের মতো

চোখ মেলে চেয়ে থাকে কার পায়ের ছাপের দিকে,

গা ধোয় ঝরনার জলে। স্বপ্ন দেখে,বনদেবী তার

ওষ্ঠে ঠোঁট রেখে হুহু জ্বলছেন সঙ্গম-লিপ্সায়।”

 তখন আমরা বুঝতে পারি কবিতার প্রতি কবির আত্মবিশ্বাস কতখানি। তিনি যেমন গিমিক সর্বস্ব কবিতা লিখতে চাননি, তেমনি দুর্বোধ্য বা অবোধ্য শব্দেরও ব্যবহার করেননি। কবিতাকে বিজ্ঞাপনের ভাষাও হতে দেননি। শুধু স্লোগান বা বিবৃতিধর্মী দীর্ঘপয়ারেও কবিতায় গল্পের আমদানি করেননি। ষাট দশকের ভ্রষ্ট রাজনীতি, স্বৈরাচারী শাসক, দেশপ্রেমের নামে ভণ্ডামি, মুখের ভাষা কেড়ে নেওয়ার চক্রান্ত, স্বাধীনতা হরণ, হত্যা-ধর্ষণ ও খুনের বিরুদ্ধেই সর্বদা নিজেকে সচল রেখেছেন কবিতায়। কবিতাও যে অস্ত্র হতে পারে, শব্দও যে মন্ত্র হতে পারে, দুঃখী মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে, দেশকে স্বাধীনতার ডাক দিতে পারে তা বুঝিয়ে দিয়েছেন। এখানেই মানবিক কবির দায়বদ্ধতা। আত্মহৃদয়ের অন্তঃস্থল থেকেই মানুষের জন্য, দেশের জন্য অব্যক্ত যন্ত্রণার অমোঘ উচ্চারণ হয়েই ফিরে এসেছে। সমকালীন সময়, সমাজ, রাষ্ট্রকে অস্বীকার করতে পারেননি। আর সে-সবই চিরন্তন নান্দনিকতায় শৈল্পিকসিদ্ধির পর্যায়ে পৌঁছে গেছে।

 নাগরিক কবি হিসেবে শামসুর রাহমান উঠে এলেও কবিতাকে তিনি প্রতিটি রাস্তার মোড়ে মোড়ে দাঁড় করাতে চেয়েছেন। কেরানির কলোনি থেকে মজুরের ঝুপড়িতে, মাছরাঙার বিলে, কৃষকের কুপি জ্বলা রাত্রির কুটিরে, ফ্যাক্টরির চঞ্চল চাকায়, হাটে মাঠে জোনাকি ঝলসিত ঝোপে ঝাড়ে, কুমোর পাড়ায়, জেলের ডিঙিতে, পুকুরের স্তব্ধ ঘাটে, চাঁদের সংকেতে চমকিত ছোট্ট ঘরে চুপিসারে। এভাবেই কবি সময়ের মানুষের কাছে দায়বদ্ধ হয়েছেন। তেমনি শিল্পের কাছেও।আবার কবির শিল্পচৈতন্যে মিশে গেছে বিশ্বচৈতন্য তথা মানবচৈতন্য। রোমান্টিক কবিদের কল্পনাতত্ত্ব থেকে নিজেকে আলাদা করে প্রশ্নজর্জর বিরোধপূর্ণ বাস্তবে থেকেও তিনি ঊর্ধ্বগামী হতে পেরেছেন। তাঁর কল্পোক্তি আবেগোদ্দীপক কান্তিময় চিন্তনে মননে শক্তি সঞ্চার করেছে। জীবনযাত্রার নান্দনিক স্পৃহায় শহুরে ঝকঝকে স্মার্টনেসকে তিনি এড়িয়ে যেতে পারেননি। তাই তাঁর নাগরিক সত্তায় টংকারিত হয়েছে দৃঢ় জীবনবাদের সম্মোহন। কবিতার পংক্তিতে ফুটে উঠেছে নাগরিক জীবনের আঁটসাঁট প্রাণস্পন্দনও।

জীবনানন্দ দাশের কবিতার এলায়িত দীর্ঘপয়ারের পংক্তিকে তিনি গ্রহণ করেননি। সেক্ষেত্রে কবিতায় তিনি সংহত রূপটিই স্থাপন করেছেন।  পুরাণপ্রতিমা বিনির্মাণে এলিয়টীয় প্রভাব থাকলেও বিষয়ভাবনায় তিনি নিজেকে সম্পূর্ণ আলাদা করতে পেরেছেন। ত্রিশের কাব্যঐতিহ্য তাঁর সৃষ্টিতে ছায়া ফেলেছে। কবিতায় অন্ত্যমিল বা পর্বান্তিক মিল কোথাও কোথাও দেখা দিয়েছে। তবে স্বাদেশিক জীবনেতিহাস প্রতীকায়নে তিনি গতিসঞ্চার করতে পেরেছেন। পাশ্চাত্য সাহিত্যপাঠ লব্ধ অভিজ্ঞতাকে কখনও কখনও অনুসরণ করেছেন। বিশেষ করে হুইটম্যানীয় আবেগের তাড়না কবিকে চালিত করেছে। সেক্ষেত্রে সংগীত ও ধ্বনিকে একইসঙ্গে প্রয়োগ করেছেন। নিজস্ব অনুভূতিকে বোধের দরোজা খুলে দিয়েছেন। তবে লিরিককে কখনও অধিবাস্তব বা বা মরমিয়াবাদে পর্যবসিত করেননি। কবিতা যে কোনও বিষয়ের প্রতিবেদন নয় তা বুঝিয়ে দিয়েছেন। ‘শূন্যতায় তুমি শোকসভা’ কাব্যের ‘পারিপার্শ্বিকের আড়ালে’ কবিতায় লিখেছেন:

“শামসুর রাহমান ব’লে আছে একজন, নিজের কাছেই

                বন্দী সর্বক্ষণ।

প্রতিদিন শহরের সবচেয়ে করুণ গলির মুখচ্ছবি

               মুখের রেখায় নিয়ে হাঁটে ফুটপাতে,

 সুনিবিড় রিশতা তার রহস্য নামক অতিশয়

 লতাগুল্মময় প্রান্তরের সাথে কেমন অচিন

                             দৃশ্যাবলী সমেত বিপুল

                                       অদৃশ্যের সাথে!

 একদিন মরে যাবে ভেবে তার মনের ভেতরে

 আঁধার ঘনায় একরাশ, মনোবেদনার রেখা

                             ফোটে মুখমণ্ডলে গভীর,

কিছুকাল এভাবেই কাটে,ফের চকিত আনন্দে নেড়ে দেয়

                 সময়ের থুতনি ঈষৎ।”

 যে মুক্ত ছন্দের কাছে কবির এই আত্মপরিধির বিস্তার ঘটেছে নিজেকে দেখার, নিজেকে উপলব্ধি করার প্রজ্ঞা লাভ করেছেন তা কতখানি অকপট এবং আন্তরিক প্রকাশ তাই স্পষ্ট হয়েছে কবিতায়। নিজেকে তুলে আনার প্রয়াস, আত্মচেতনার অন্তঃশীল পর্যবেক্ষণ গভীরভাবেই নির্ণয় করতে চেয়েছেন। উনবিংশ শতাব্দীর আরও একজন কবিকে এই আত্মদর্শী অন্তঃশীল পর্বান্তরে গভীরভাবে নিমগ্ন হতে দেখেছিলাম। তিনিও ছিলেন

মুক্তছন্দের জনক সর্বাধিক প্রভাবশালী মার্কিন কবিদের অন্যতম প্রাবন্ধিক ও সাংবাদিক এবং মানবতাবাদী হিসেবে প্রসিদ্ধ, যিনি তুরীয়বাদ ও বাস্তবতাবাদের সম্মিলন ঘটিয়েছিলেন। তাঁর রচনা সেযুগে যথেষ্ট বিতর্কেরও সৃষ্টি করেছিল। সেই ওয়াল্ট হুইটম্যান(১৮১৯-১৮৯২) ‘As I Ponder’d in Silence’ নামক একটি কবিতায় লিখেছেন:

“As I ponder’d in silence,

Returning upon my poems, considering, lingering long,

A Phantom arose before me with distrustful aspect,

Terrible in beauty, age, and power,

The genius of poets of old lands,

As to me directing like flame its eyes,

With finger pointing to many immortal songs,

And menacing voice, What singest thou? it said,

Know’st thou not there is but one theme for ever-enduring bards?”

এখানেও নৈঃশব্দ্যের গভীরে এক চিন্তামগ্নতায় কবিকে কবিতার কাছে ফিরে আসতে দেখি।, লীন হয়ে যেতে দেখি দীর্ঘস্থায়িত্বে। কবির সত্তায় সন্দেহের সঙ্গে  এক অশরীরীও জেগে ওঠে। যে সৌন্দর্য, সময় ও অধিকারবোধের ভয়ঙ্কর মাত্রায় প্রাচীন ভূখণ্ডের কোনও বিস্মৃত কবিপ্রতিভার উজ্জ্বলতায় কবিকে বিদ্ধ করে। নির্দেশ করে অবিনশ্বর সঙ্গীতের প্রতি।ভয় পাইয়ে দেওয়ার মতো জিজ্ঞাসায় জানতে চায়—, এ কোন্ সংগীত? যে সংগীত শামসুর রাহমানও শুনেছেন। তাঁর আত্মসত্তায়  বারবার কড়া নেড়েছে। এই কবিতাতেই তাই লিখেছেন:

“তন্দ্রিল সংগীতময় দ্বীপপুঞ্জ, বাঘের পায়ের ছাপ আর

প্রাচীন দুর্গের সিঁড়ি, দেবদূত, অজানার দ্যুতি;

জীবনকে দিয়েছেন বাস্তবিক স্বপ্নের গড়ন।”

প্রাচীন দুর্গের সিঁড়ি যা অমরত্বের দরোজায় পৌঁছে দিতে পারে। অজানার দ্যুতি আলোকময় দেবদূতেরই প্রবল আকর্ষণ, যেহেতু বয়স বেড়ে চলেছে তাই মৃত্যুরূপী বাঘও পায়ের ছাপ ফেলেছে। মুক্ত ছন্দের সঙ্গে কবির ভাবব্যঞ্জনায়ও গভীরভাবে সম্পর্কিত হয়ে ওঠে। আবেগ এসে চিরন্তন মানবীয় আবেগে মিশে যায়। কথা বলে ওঠে সময়। তখন শামসুর রাহমানকেও আবহমান সময় চেতনার কবি হিসেবেই আমরা বরণ করে নিতে পারি।

You may also like