তবে কি আমার চোখ দেখতে ভুল করেছিল না চিনতে ভুল করেছিল? তা কী করে সম্ভব? এত বছরের মিলমহব্বত। গায়ে-গায়ে মনে-মনে…
গল্প
-
-
ইদের দিন ভোর। কিন্তু কুনু হাঁক ডাক নাই। বাড়তে বাপ চিল্লায়, মা ডাকে। খাস্সিট্যাকে ধওয়া, নিজে গা ধো, জামাত ছুইট্যা যাইবে, কত্ত কী! এঠে আগিথ্যাকায় ডোলে পানি রেডি গা ধুইবের লাইগ্যা। লয়া পাঞ্জাবি বিছ্যানে থওয়া। আয়না, চিরোনি, আতর লিয়া বহুটা খাড়্হিয়া। বাড়তে এই ঘরে আয়না, ঐ ঘরে চিরোনি, কুন্ঠে পাঞ্জাবি তো কুন্ঠে টুপি। জুত্তা ঢুঁরতে একব্যালা। এঠে কুনু দৌড় ঝাঁপ নাই। রেডি হোয়্যা ইদ পড়তে গ্যালো ।
-
সায়েদা ও শবনম, দুজনে মিলে মেলা ঘুরতে শুরু করলো। তবে এখনকার মেলাকে আর আগের মত মেলা বলা চলেনা। বছর কয়েক আগে ঈদ উপলক্ষে নানান রকমের দোকান পাশার, ছেলে মেয়েদের আনন্দ ফুর্তির জন্য বাঁশের তৈরি চরকি, লটারি খেলা, আরও কত কি যে আসতো! তাছাড়াও আসতো হাতে কৃত্রিম ট্যাটু লাগিয়ে দেওয়ার দোকান। সবাই ত্রিপল কিংবা চট পেতে বসে পড়তো মাটির উপর। মেলায় ঘুরতে ঘুরতে সায়েদার চোখ গিয়ে পড়লো এরকমই একটা দোকানে। একজন ধুতি পাঞ্জাবী পরা লোক অনেক গুলো কাঠের তৈরি ছাঁচ নিয়ে বসে আছে মেলার এক কোনায়। কোন ছাঁচে তাজমহল, কোনটাতে গোলাপফুল, তো কোনটাতে আবার দূরদর্শন চ্যানেলের শক্তিমান একটা অদ্ভুত রকমের ক্যারিকেচার হয়ে দাঁড়িয়ে!
-
সত্য’দা সেই আগের মতই। অমিত, তুহিন, গোপাদের নিয়েই বেঁচে থাকতে চান। অখ্যাত এই গ্রামটি সোনার মেয়ের সাফল্যে অদ্ভুত ঘোরের মধ্যে আছে।সত্যিকারের স্বাধীনতার স্বাদ পায় আলোর ঝিলিকে। এ তল্লাটের যত আলো এখন সোমাকে ঘিরে। স্বার্থপরের মতো বেঁচে না থেকে একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করল সোমা।
-
রায়হান ভর দুপ্পহারে বাগানে একলাই ঘোরাঘুরি কোরছিলো।পিছাদিকে ঘুইরা দ্যাখে ঐ বেটিছ্যালাট্যা খাড়ো হয়্যা আছে। চোখ্খের পলক না ফ্যালা তাকিয়্যা আছে। রায়হানের ভিতরখ্যান কেমন য্যানো শিরশিরিয়্যা উঠলো। কত্ত বেটিছ্যালা দ্যাখেছে এম্নি তো কুনুদিনি হয় নি। খানিক অ্যাগ্গ্যা অ্যাইস্যা কহিলো,”তোর নাম কিরে ? “রায়হান” তো? চল ওই খ্যাড়ের পালাটায় ঢ্যাসা দিয়্যা বোসি ।” শুন্যা তো ঘ্যাবরা গ্যালো রায়হান। ফের কহিলে ,” হাঁমার নাম রাসু।” চোখ ঘুরিয়্যা ঘুরিয়্যা ম্যাল্ল্যাই কথা কোহ্যা গ্যালো। আর রায়হান কথা-গালা গিল্যা গ্যালো।
-
কালীপদ বাবু কেঁদে কেঁদে খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে হাত দুখানি উপরে তুলে বিধাতাকে বলছে, এ তোমার কেমন বিচার। স্ত্রী,পুত্র কন্যাকে নিয়ে গেলে।শুধু বাঁচিয়ে রাখলে আমায়।এই যদি তোমার বিচার হয়, কেনো পাঠিয়ে ছিলে আমায় এই পৃথিবীতে!
-
‘লাশটা এই গর্তে ধপ করে ফেলে দাও ‘, তারা দূর থেকে চেঁচিয়ে বলল। কিন্তু ভিভা তা করল না। সে সাবধানে লাশটি গর্তের মধ্যে নামাল। তার মেয়ে যখন মারা যায় তার চোখের জল সবটা শুকিয়ে গিয়েছিল। এরপর হয়তো আমার পালা, সে যখন এমনটা ভাবছে গলায় কিছু একটা দলা পাকাচ্ছে কিন্তু মুখ শুকিয়ে কাঠ হওয়ায় এই অস্বস্তি দূর করতে খানিক লালাও গিলে উঠতে পারছে না।
-
আত্মীয়স্বজন না থাকা মালঞ্চের প্রৌঢ় অধ্যাপক মানুষটির মধ্যে একটা নাড়ির টান অনুভব করে সে। বারবার মনে হয় এই একা মানুষটিকে নিয়ে যেতে পারলে খুব ভালো হতো। সকালেই গাড়ি নীপার। শেষবারের মতো মালঞ্চে গেল নীপা। প্রণাম করতেই স্যার বললেন– “তোর জন্য একটা পলাশের চারা বনসাই করা আছে। ওটা নিয়ে যা। আমার তো আর ফেরা হলোনা । আমার প্রতিনিধি হয়ে ওটাই ফিরে যাক ও দেশে। হয়ত বুঝতে পারবি একদিন ওর মাঝে কী বিশাল এক বৃক্ষ স্থির হয়ে আছে।”
-
একটু পরে তাকিয়ে দেখলেন পড়ন্ত বিকেলের লাল সূর্যের আলোয় পৃথিবীটা ভরে গেছে। কিন্তু এ আলোয় কেমন একটা জ্বলন্ত আগুনের বিগ্রহ। হ্যাঁ, সেটা ভারতবর্ষের মানচিত্র।যেন মানচিত্রের বিশেষ বিশেষ অংশ জ্বলছে। গুজরাত জ্বলছে, আহমেদাবাদ জ্বলছে।আসাম জ্বলছে ।সেই আগুন ক্রমশ পশ্চিম বঙ্গের সীমান্তের দিকে ধেয়ে আসছে ।তাহলে কি, গোটা ভারতবর্ষটাই জ্বলবে।
-
খুব বুদ্ধি ছিল ওর লেখাপড়ায়। ইংরেজিতে সবার চেয়ে বেশি নম্বর পেত। ইংরেজি বানান নির্ভুল বলতে পারতো।বাবা নাম রেখেছিল গোপীনাথ। মেজদাদা অনেক পরে সেই নাম বদলে দেয়। বড় দুই ভাই-এর নামের সাথে মিলিয়ে নাম দেয় সুমন্ত। তবে মা ডাকতো হীরে মাণিক আর বাবা ডাকতো মানু। মা বাবা দুজনেই প্রয়াত।
এবার দলের নেতা নিরঞ্জন জিগ্যেস করে : এখানে কী মতলবে ঘোরাঘুরি করছো?
এবার ক্ষীণ কণ্ঠে সে বলে : আমি ছেলেধরা লই গো। হেঁটে হেঁটে সিউড়ি থেকে এই পাতা ডাঙ- এ এলম। বাসঅলা পয়সা না দিলে নামিন দেয়। ব্যাডা খিদে পেয়েঁছে , তমরা কুছু খেতে দেবে?