সায়েদ ও তার ইদ

১৯৯১ সাল। সায়েদ তখুন লয়া জামুই। ইদের আগের দিন ভাঠিব্যালায় এ্যক মাথা সৈরষ‍্যার ত‍্যালে চিরোনি মাইর‍্যা চুলকে এ্যমন কৈরা মাথার দুধারে শুতিয়া দিয়াছে, এ্যকটানা তিনদিন পইচ্ছ‍্যা ঝড় হৈলে আদপাকা ধান য‍্যামুন ভুঁই সাইট‍্যা শুইত‍্যা যায়। আর গলার পাউডার যেনে সিমেট বালুর কালো পলাস্টারের ওপর একপুর ধলো রং। ফের শ্বশুরের দ‍্যাওয়া ফুল শাটের ওপর গলায় এ্যক পাক মাইরা ঝুলিয়‍্যা লেছে মাফলাট। ঠাণ্ডা পড়েনি, ঐটা সেযুগের স্টাইল। আইগন‍্যাতে ছাইপড়‍্যা ছাইপড়‍্যা ত‍্যানা দিয়া মুছ‍্যা লিছে ডিমেন্টে পাওয়া সাঁইকেলখান । দু চাক্কায় ফুল বান্ধা। স্পকগালাতে নানান রঙের গুঠলি। চাক্কার গতির সুঁতে তাল মিলিয়া আল্হাদা আল্হাদা আওয়াজ করে ঐগল্যা। হেন্ডেলের এ্যকটু নীচে এ্যকটা ডায়নামা লাইট জেনে সবসময় তাকিয়া আছে। আইজ কাইলক‍্যার বুলেটের কদর ওই সাইকেলের কাছে ফেল। শকের রেডিট‍্যা সুঁতে লিবে না থ‍্যুবে বুঝতে পারেনা সায়েদ।

চালিত্তলে মাইচ্চ‍্যাতে বৈসা আছে সায়েদের ছুটু শালা, বকরি ইদের পরবের গোনে বহনুকে আনতে আইসছে। সায়েদ বারহাইতে বারহাইতে ছুটু কুটুমটার খাতির করছে ওর মাহৈ। শরমে ভরমে হাইল‍্যা হাইল‍্যা কৈরা মুক লাইড়‍্যা খাইছে হাঁইস‍্যাতে তিনকুনা কৈরা কাইট‍্যা দ‍্যাওয়া আন্ধাসা। সামনে থওয়া আছে স্টিলের গিলাসে পানি। কাইল নমাজ তো কী হৈলো, আইজ ভাঠিব‍্যালা থাইক্যায় গোট্টা গাঁয়ে উড়‍্যা ব‍্যাড়াইছে আন্ধাসার সেন্ট।

‘মা গেনুগে’ কৈহ্যা ছুটু শালাটাকে কেরিয়ালে বসিয়া সাইকেলে পেট্টেল মারলে সায়েদ। এ্যক কোস দূরে বাজার। ইদের দিন বহুটার লাইগ্যা কিছু কিনা দরকার। হাজার হৈক লয়া বহু। বিহ্যার পর পত্থম ইদ। সায়েদ এর নিজের কুনু ইনকাম নাই। বাপের গিরস্তালিতে খাটে, বাড়িরই খায়। বিড়ি খাইতে হয় সুযোগ বুঝা ধান-পাট লুকিয়া বেইচ‍্যা। সেই গাঁটের টাকা ভাঙিয়‍্যা এ্যক ডোজজুন লাল চুরি আর এ্যক পাতা কালো টিকলি কিনলে উ। বহুটা ওর দেকতে মুন্দো লয়। গা’র রং ধলো, মানাইবে ভালো। আর মা’র দ্যাওয়া টাকা দিয়া শ্বশুর বাড়ির লাইগ্যা কিনলে এক ভুচকি রসগোল্লা। এ্যঘুড়ুর মৈধ্যে বেল বাজল শ্বশুর বাড়ির গোলতে। সাইকেলের গতি কুনু অজানা টানে বেশিই ছিলো আইজ। চোক পড়লো ঝাইড় দিয়া চিকোন কৈরা থওয়া গলি। এ্যক কুনাতে টাপ্পর তুলা গাড়ি থওয়া আছে, এ্যক সাইডে কাড়ির আর পাটখুড়ির পালা। ডিহির পুরুব দিকে ডহারের কোলে গহিল, রাস্তার উপপারে গোবরের মাইন্দ। ইদের লাইগ্যা সব গোছিয়া থওয়া আছে। বেল শুন‍্যা ছোটো শালি বাহির হ‍্যোয়া আইলো, একখি দৌড়ে বাড়ি যায়া চিল্লাইছে- ‘দুলাভাই আইসছে, দুলাভাই আইসছে।’ কে জেনে কোহিলে-‘লক কৈরা থাক, মানুষে নিন্দা করবে’। এ্যকটা জোরাল গলা খাঁখাঁরি আর সালাম দিয়া বাড়ি ঢুকলো সায়েদ। মিষ্টির ভুচকিট‍্যা বহুর হাতে দিলেও চুড়ি আর টিকলি থাকলো পকোটি। দেকছে চোকির উপর লয়া তহমুন থওয়া আছে। ‘কাপড় পাইল্ট‍্যা মুখ হাত ধুয়‍্যা ল্যাও’ লরম সুরে কোহিলে বহু লালমুন। ‘ওসরায় বধনায় পানি আছে, ভককৈর‍্যা যাও।’ কতদিন কত কাজ কৈরা বাড়ি আইসছে সায়েদ, এ্যরকুম আদর তো উ কুনুদিন পায়নি। বুকের ভিতির ফড়িংয়ের পাখার মতন এ্যকটা শোখিন শান্তি চাইপ্যা বসলো জেনে।

রাতে খাইতে বৈসাও কত খাতির জামুইয়ের। বাড়তে যে লোকটা আখার পাড়ে বৈসা খায় আইজ লয়া সপে বসতে দেছে ওকে, বধনা গিলাস থওয়া আছে পানি ভৈরা ভৈরা। গিল‍্যাস দেইখ্যা মুনে পড়লো ছুটুতে এ্যকদিন ওর মার কাছে কাঁচের গিলাসে শক কৈরা পানি খাইতে চ‍্যাহ‍্যাছোলো সায়েদ। ভাইঙ্গ‍্যা যাওয়ার ভয়ে দ্যায়নি ওকে। কুটুম সদর আসলি গিল‍্যাস বাহির হয় এগল্যা বাড়তে। বাড়ির লোকজন পানি খায় বধনার লোলে মুক লাগিয়া, সায়েদের দাদি তো বেলে কুন কুটুমের বাড়তে পত্থম গিল্যাস দেইখ্যা কত্ত হ‍্যাস‍্যাছে, লোলে মুক লাগিয়া পানি না খাইলে বেলে ওর জি ভরতোক না। চ্যাংড়া পিলা তো খায় সিধা টিওলে মুক ভিড়িয়া। অজ্ঞে মাগে! আইজ সায়েদ নিজি কুটুম। ভাবতি ওকে আসুসা লাগছে। শালি বাতাস করছে, কেহু তুইল্যা দিছে তো কেহু দেখছে দ্যাওয়া ঠিকমতন হৈছে কি না? সায়েদ ভাগ্গিস ইতিহাস পঢ়েনি নাতো নিজেকে আইজ রাজা মুনে করতোক। বিহ্যার দিনও খাতির কম হয়নি, কিন্তো সেদিন স্টেজে ঠগা-ঠগির ভয়, শালা শালিরঘে ম্যালাইরকম আবদারের জুলুমে ত‍্যামুন উপভোগ করা যায়নি। ফের খাওয়ার শ‍্যাষে হাত ধুয়া দিলে শালি, তখন হাতে খুব সুড়সুড়ি লাগছিলো সায়েদকে, কষ্ট মষ্ট কৈরা সৌহ‍্যাছে আর মুনে মুনে কিরা খ‍্যায়াছে জীবনে যুতি কুনুদিন কাহুকি আর হাত ধুইতে দ‍্যায়?

সায়েদ খুব শোখিন আর খুশ মিজাজি মানুষ, কিন্তো এঠে তো জামুই, কী আর গল্প! অগৈত্যা বড়ো শালার সুঁতে মোহজিদ থাইক্যা নামাজ পৈঢ়‍্যা আইস‍্যা ফের ঘরে। ততখুনে চোকিতে লয়া চাদর পাড়া হোয়্যা গেছে। এ্যখান নকশা করা সুন্দর হাত পাখা বালিশের পাঞ্জরে থওয়া। আর আলতার উপর ছুটুছুটু ঝুনঝুনি লাগা পায়ের পাতা পিনহ্যা সামনে ঘুরছে বহু, যার ওপর ওর অগাধ অধিক্যার। কুনুদিন কাহুরির দিকে তাক্যাইব্যার সাহুস হয়নি যার সে এ্যকটা বেটিছাইল‍্যার হকদার। আল্লাহ ! কী সুক! জীবনে আর কী চাহি ওর! চরম আনন্দে গল্পতে আদরে এ্যকটা রঙিল রাইত কাটাইলে সায়েদ।

ইদের দিন ভোর। কিন্তু কুনু হাঁক ডাক নাই। বাড়তে বাপ চিল্লায়, মা ডাকে। খাস্সিট‍্যাকে ধওয়া, নিজে গা ধো, জামাত ছুইট‍্যা যাইবে, কত্ত কী! এঠে আগিথ‍্যাকায় ডোলে পানি রেডি গা ধুইবের লাইগ্যা। লয়া পাঞ্জাবি বিছ‍্যানে থওয়া। আয়না, চিরোনি, আতর লিয়া বহুটা খাড়্হিয়া। বাড়তে এই ঘরে আয়না, ঐ ঘরে চিরোনি, কুন্ঠে পাঞ্জাবি তো কুন্ঠে টুপি। জুত্তা ঢুঁরতে একব্যালা। এঠে কুনু দৌড় ঝাঁপ নাই। রেডি হোয়্যা ইদ পড়তে গ্যালো । কত লোক চ্যারিদিকে কিন্তো কাহুকি চিন্হেনা উ। মুনটা খারাপ হৈতে লাগল ওর। নমাজ শ‍্যাষে কতঝোনা গল্প করছে কতঝনার সুঁতে, আর উ মানুষের সমুদ্রে জেনে একটা দ্বীপ। বাড়তে থাকলে সেন্ট‍্যা, রফিকুল্যা, ফাইরক্যা সভারির সুঁতে কত্ত কথা হৈতোক এতখুন। নমাজ পৈঢ়‍্যা শুরু হৈতোক কে আগে গোস করতে পারে, কম্পিটিশন। আর এঠে বৈসা বৈসা ক‍্যামুনি লাগছে ওকে। মুনে হৈছে এক্খি দৌড়ে বাড়ি পালিয়‍্যা যায়। কিন্তো লয়া জামুই চৈলা গেলে কত্ত কথা রটবে। বারেবারে বহুটাকে কোহিছে হাঁকে ভাল্লাগেনা। বাড়ি চৈলা যাবো একটু ব্যালা পঢ়তি। দুপ্পহরে কুনুরকম দুটা খায়া শ্বশুর-শাশড়ি সভারি মুক উইঝড়‍্যা সাইকেল ছাড়লে সায়েদ। সাইকেলের রেশ জেনে ডাবল। গাঁয়ে বসিয়া থওয়া কুনু চুমবুক যেনে টানছে ওর সাইকেলের চাক্কা দোপ্পাসে।

You may also like