কৃত্রিম বাগানখানা ভরেছে আজ কাগুজে গোলাপ
দেয়ালে দেয়ালে রবীন্দ্র-নজরুল সম্প্রীতির বাণী
তবুও প্রতিবেশীকে কেবল ধর্ম দিয়েই চিনি !
সাম্প্রদায়িকতা
-
-
চোখে চোখ রেখে দৃঢ় কণ্ঠে বলা যায় ইতিহাস আর বর্তমানের নিষ্ঠুরতম সত্য। নির্দ্বিধায় নির্ভয়ে দাঁড়ানো যায় কালের সমস্ত ভণ্ডামি আর সাম্প্রদায়িকতার বিপক্ষে। সকালের স্নিগ্ধতার চেয়ে রাতের আঁধার গ্রাস করতো তাকে। সাম্প্রদায়িকতা, দাঙ্গা, বিভীষিকা, তার সাহিত্যের নিষিদ্ধ হওয়া, কোনটিই বাদ যায়নি। তার ওপর আঘাতের পর আঘাত এসেছে। তাকে মুছে ফেলতে চেয়েছিল শাসকেরা। কিন্তু তিনি তো চিরকালের।
-
জীবন দেখে যে দুচোখ দিয়ে যেতে পারে আরো গভীরে
প্রতিটি মুহূর্তে চেটেপুটে নেয় বেঁচে থাকার স্বাদ আর ঘ্রাণ
প্রশ্ন ঘিরে রাখে তার চিন্তন মনন কাণ্ডজ্ঞান -
গড়ার তাগিদে ভাঙে মসজিদ বহু পুরাতন
ভাঙন শব্দ হানেনি আঘাত মরমে কারও !
নব-পুরাতনে ভাঙা-গড়া চলে
একথা জানে ধরার প্রথম প্রহরও । -
Bunch of Thoughts- এর ভারতে তিন শত্রুদের ‘হিংস্র চিন্তনে’ ধ্বংস করাই লক্ষ্য। নগ্ন ফ্যাসিজমের মাধ্যমে বড় মাপের গণহত্যা সংঘটিত না করে ছোট ছোট কিন্তু নিয়মিত হিংসা ও হত্যা করে রোজকার সাম্প্রদায়িকতার বাস্তবায়ণ ঘটানোয় এদের লক্ষ্য। এরা দেশদ্রোহী, টুকরে টুকরে গ্যাং, শহুরে নকশাল, আ্যন্টি-ন্যাশনাল, খান মার্কেট গ্যাং, সেকুলাররিস্ট ইত্যাদি নামে দেগে দিয়ে We or Our Nationhood বইয়ের ভাষায় হিন্দুস্তানে বসবাসকারী সকলকে হিন্দুত্বের সংস্কৃতি ও ভাষাকে গ্রহণ করে হিন্দুত্বের আদর্শকে শ্রদ্ধা ও সম্মান করে নিজেদের ভিন্ন জাতিসত্ত্বাকে ভুলে কোন রকম সুযোগ সুবিধা না চেয়ে, নাগরিকত্বের কোন দাবি না করে, হিন্দুরাষ্ট্রের দ্বারা কোনঠাসা হয়ে এই দেশে থেকে যেতে হবে।
-
তবে কি আমার চোখ দেখতে ভুল করেছিল না চিনতে ভুল করেছিল? তা কী করে সম্ভব? এত বছরের মিলমহব্বত। গায়ে-গায়ে মনে-মনে…
-
গত পঞ্চাশ বছরে সরকারি চাকুরি ক্ষেত্রে মুসলমানদের অবস্থা তথৈবচ। তাঁরা প্রদীপের নিচে জমাট অন্ধকারে আছে। এই অভিযোগ নির্দিষ্ট কোনো সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ নয়। কম বেশি সব সরকারই দায়িত্ব এড়াতে পারে না “তোষণ” শব্দটি মুসলমানদের ক্ষেত্রে সবৈব মিথ্যে। অথচ, তোষণ আজ বিভাজনের রাজনীতির হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। তবে ,তোষণ যদি সত্যি কোনো সরকার করত তবে মুসলমানদের উন্নতি হতো।আসলে ওসব কাগুজে বক্তৃতা। তাছাড়া, সংসদীয় কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রতি বাজেটে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য যে অর্থ বরাদ্দ করা হয়, সেই বরাদ্দকৃত অর্থ কোনদিনই খরচ তো হয় না ,বরং দুর্নীতিবাজদের পকেটস্থ করার ব্যবস্থা হয় ।এই “তোষণের” অপপ্রচারের দ্বারা সংখ্যাগুরু ভোটকে বিপরীত মেরুতে একত্রিত করা হচ্ছে। তাই কোনো তোষণ নয়, প্রকৃত উন্নয়নই হবে মুসলমানদের প্রতিষেধক। সত্যি কথা, মুসলমানেরা সবসময় যেকোনো ক্ষমতাসীন সরকারের “ভোটব্যাঙ্ক”।শুধু তাই নয়; মুসলমানরা সাম্প্রদায়িক রাজনীতির শিকার।
-
হিন্দুত্ত্ববাদী ইতিহাসচর্চায় প্রাচীন ভারতের হিন্দু সংস্কৃতির উপর অধিক গুরুত্ব দিয়ে, তার ভালো দিকগুলো দেখাতে সচেষ্ট হয়েছেন। কিন্তু প্রাচীন ভারতের রাজনৈতিক হত্যা, অন্ধবিশ্বাস, জাতিভেদ প্রথা, উচ্চবর্ণ দ্বারা নিম্নবর্ণের মানুষের উপর অত্যাচারের কথা বিন্দুমাত্র দেখানো হয়নি। সুতরাং সংঘ পরিবারের একপ্রকার বিকৃত ইতিহাস উপস্থাপন করে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এখানেই লেখক দেখিয়েছেন, প্রাচীন ভারতের ইতিহাস সম্পর্কে সংঘ পরিবারের ইতিহাস পক্ষপাতদুষ্ট। এমন অনেক উদাহরণ লেখক তুলে ধরেছেন, যেটা প্রমাণ করে প্রাচীন সময় থেকেই ভারতের ঐতিহ্য ছিল সমন্বয় ও সম্প্রতির।
-
এক বিকেলে নিঃশব্দে দুজনে সাঁকো পেরিয়ে নদীর ওপারে মল্লিকাদির বন্ধুর বাড়ি যাই। পথে আমাদের একবাক্য কথারও চালাচালি হয় না যেমনটা সবসময় হয়। নোমান আলী খানের সাথে সেই দিঘির শাণবাঁধানো-ঘাটে মল্লিকা’দির শেষআলাপ হয়। এবং বিকেল নেমে এলে নিঃশব্দে বাড়িরপথে ফিরতে পা বাড়াই।
সাঁকোর মাঝপথে দাঁড়িয়ে পশ্চিমদিকে দৃষ্টি ফেরালে লাল-টকটকে বিদায়ী সূর্যটায় চোখ আটকে যায়। “সূর্যাস্তে বিষাদের সুর থাকে ঠিক যেমন সূর্যোদয়ে থাকে সুখস্বপ্ন”-মল্লিকাদির কথা। তিনি এমনতরো কতো কথা আমাকে প্রায়ই বলতেন। আমরা প্রায়ই সূর্যাস্ত দেখতে বাঁশের সাঁকোর মধ্যিখানে নীরবে দাঁড়িয়ে যেতাম আজও স্বভাব মতো থমকে দাঁড়াই। পশ্চিম আকাশ, আজকে একটু বাড়াবাড়ি রকমের বিষাদের লাল আভায় মুড়ে আছে। মল্লিকা’দির কান্নাভেজা চোখজোড়ায় বিষাদের রঙের বড়বেশি মাখামাখি টের পাই। আমি আমার বাড়িরপথে পা বাড়াতে উদ্ধত হলে, মল্লিকাদি আমার হাতজোড়া তার হাতের মুঠোয় শক্ত করে ধরে রাখে। দিঘিরজলের মতো টলমল অশ্রুফোঁটা আমার হাতে গড়িয়ে পড়ে। আমি আলতোভাবে হাত ছাড়িয়ে বাড়ির পথ ধরি। -
আজ যখন ধর্মের রাজনীতির কবলে পড়ে মানুষ মানুষকে ঘৃণা, হিংসা ও খুন করছে, আজ যখন গরিবদের কথা বললে লোকে হাসাহাসি করছে, আজ যখন বিশ্ব উষ্ণায়নের বিধ্বংসকারি ঢেউ আমাদের দোরগোড়ায় এসে ধাক্কা মারছে, আজ যখন শ্রমিক ও কৃষকদের অধিকার ও সুরক্ষা বলতে কিছুই নেই, প্রতি পদে পদে তারা বঞ্চিত, শোষিত ও লাঞ্চিত হচ্ছে, আজ যখন মালিকদের বেশিরভাগই স্বৈরাচারী এবং তাদের সাথে দেশের রাজনীতিবিদদের সুসম্পর্ক সর্বজনবিদিত –সেখানে দাঁড়িয়ে মে দিবসের প্রসঙ্গ ও এদিনের তাৎপর্য আরও বেশি বেশি উপলব্ধি করতে হবে। এবং শ্রমিক ও কৃষকদের স্বার্থে ও পুঁজিবাদী আর সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করার শপথ নতুন করে আমাদের সকলকেই নিতে হবে।