শিক্ষা ও জীবন দর্শন

by নজরুল ইসলাম

শিক্ষা সম্পর্কে বহুল প্রচলিত ধারণা হল এই যে,শিক্ষা মানুষের অন্তর্নিহিত শক্তিসমূহের বিকাশের পথকে ত্বরান্বিত করে। তাই সূক্ষ্ম ও সুকোমল হৃদয়াবেগ পরিমার্জিত করণের লক্ষ্যেই শিক্ষা অর্জন অনিবার্য।বর্তমানে যুগ ব্যবস্থার নিরিখে ,জীবন _জীবিকার নানাবিধ বৈচিত্রময় চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে এই ধারণা তার গুরুত্ব হারিয়েছে এবং বড্ড সেকেলে হিসাবে বিবেচিত হচ্ছে।আধুনিক যুগের প্রবণতা হল, শিক্ষাকে ব্যবহার উপযোগী বানাতে হবে, ব্যবহারিক মূল্যের দৃষ্টিতে অধিকতর মূল্যবান এমন শিক্ষা অর্জনই হবে মূল লক্ষ্য। শিক্ষার আলোকে আলোকিত করে হৃদয় লোককে অধিকতর উজ্জল, উদ্ভাসিত এবং জ্ঞান সমৃদ্ধ করে তোলা বর্তমানে শিক্ষার লক্ষ্য হিসাবে সীমাবদ্ধ থাকেনি। শিক্ষার লক্ষ্য বর্তমানে তাই উৎপাদনশীলতার সঙ্গে গভীরভাবে সম্পৃক্ত এবং মানুষের জীবন যাপনের ক্ষেত্রে সহায়ক উপকরণের সরবরাহের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। শিক্ষার সাথে জীবিকার সম্পর্ক বর্তমানে অত্যন্ত নিবিড়। তবে সভ্যতার অগ্রগতির লক্ষ্যে আজকের দুনিয়াতেও আমাদের সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া উচিত এমন শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতি যা আমাদের মনকে সর্বপ্রকার সংকীর্ণতা থেকে মুক্ত করবে। মানসিক উৎকর্ষতা বৃদ্ধির সহায়ক হবে। মানবতার পরিপন্থী সকল দুঃখ দুর্দশা, শোষণ , নিপীড়ন থেকে সমাজকে মুক্ত করে প্রগতির পথকে প্রশস্ত করার প্রয়াস চালাবে। মানবীয় প্রয়োজন পূরণের লক্ষ্যে প্রাকৃতিক উৎসসমুহের সুষ্ঠু সমন্বয়ের পরিকল্পনা ও রূপায়নের কাজে সদা তৎপর থাকবে। কাজেই, জীবনযাপনের ক্ষেত্রে সহায়ক বুদ্ধিমত্তা তথা কলাকৌশল অর্জনের পাশাপাশি মানবীয় গুণাবলী অর্জনের বিষয়টিও অত্যন্ত জরুরি ।

ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা বৃদ্ধি, এই বর্ধিত জনসংখ্যার জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য, পোশাক, বাসস্থানের যোগান এবং মোটের ওপর সুষম তথা ইনসাফপূর্ণ বন্টনের ব্যবস্থা করার মতো পরিকাঠামো গড়ে তোলা বিশেষ প্রয়োজন। সুস্থ জীবনযাপনের তাগিদে প্রাকৃতিক উপায়-উপকরণ পূর্ণ মাত্রায় প্রয়োগ করে সেইসাথে সকল প্রকার প্রাকৃতিক বিপর্যয় মোকাবিলা করে,মানুষের লোভ,লালসা,হিংসা, বিদ্বেষ, কর্তৃত্ব প্রবণতা, আস্ফালনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে এই সকল কুপ্রবৃত্তি নিয়ন্ত্রণে রাখার উপায় ও পদ্ধতি প্রয়োগ করে সকল শ্রেণীর মানুষের জন্য সুখ স্বাচ্ছন্দ ও আনন্দময় সৃজনশীল চিত্তবিনোদনের পরিবেশ সৃষ্টি করা একান্ত প্রয়োজন। যে ধরনের শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে এই লক্ষ্য গুলো অর্জিত হবে তা অবশ্যই সভ্যতার পক্ষে মানানসই হবে। মানবতার পক্ষে অবশ্যই কল্যাণকর হবে, তাতে কোন সন্দেহ নেই।

একথা অনস্বীকার্য যে, বেঁচে থাকার জন্য মানুষকে শিক্ষা গ্রহণ করতে হয়। তাই বলা হয়ে থাকে, যাবত বাঁচি তাবৎ শিখি। প্রকৃতির ভান্ডারে নিহিত সম্পদ ও শক্তির সুষ্ঠু ব্যবহারের জন্য প্রয়োজন হয় বুদ্ধিমত্তা, প্রযুক্তি তথা কলাকৌশলের। এইগুলির সুষ্ঠু সমন্বয়ের ক্ষেত্রে যে অভিজ্ঞতা অর্জিত হয়_সেটাই হলো শিক্ষা। তবে শিক্ষার কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে একটা বিষয়ের প্রতি গুরুত্ব আরোপ অত্যন্ত জরুরী। সেটা হল মানুষের স্বভাবজাত প্রকৃতির রাজ্যে বিরাজমান কামক্রোধলোভমোহমদমাৎসর্য প্রবৃত্তি সমূহের কল্যাণময় ও ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থানের। এই বিষয়ে যদি অবহেলা করা হয়, তাহলে শিক্ষা তার আসল তাৎপর্য হারিয়ে ফেলবে। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, তাৎক্ষণিক ও দ্রুত সুফল লাভের উদ্দেশ্যে যে শিক্ষা ও অধ্যবসায় সমর্পিত হয়, তার চেয়ে মানবিক উৎকর্ষতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে যে শিক্ষা শ্রম নিযুক্ত থাকে তার অবদান অনেক বেশি। কাজেই, শিক্ষা দর্শনে শেষোক্ত ধারণাটির প্রাধান্য থাকা উচিত।

বাস্তব অভিজ্ঞতা প্রমাণ করে দেয়, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির জয়যাত্রার যুগে মানুষের জ্ঞানগত পরিধি যতই বৃদ্ধি পাচ্ছে, মানবীয় সমস্যা ততই জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে। ক্রমবর্ধমান চাহিদা ও ভোগ সর্বস্ব জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত মানুষ বস্তুগত অগ্রগতি যত বেশি লাভ করেছে, নিত্যনতুন চাহিদা, বাসনা জনিত সমস্যা তার জীবনকে আরো জটিলতার দিকে ঠেলে দিয়েছে। এর ফাটল দিয়ে বেরিয়ে আসছে নৈরাশ্য। শোষণ, বঞ্চনার হাহাকার মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিদ্যার উন্নতির যথেচ্ছ ব্যবহার ধ্বংস ও বিনাশের পথকেও প্রশস্ত করছে। প্রযুক্তি, অর্থ, ও সামরিক শক্তিতে বলিয়ান হয়ে ক্ষমতাশালী পুঁজিপতি শ্রেণি একই সাথে প্রকৃতি ও মানবীয় জগতে নানা ধরনের জটিল সংকটের সৃষ্টি করছে। মানবীয় সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধির লক্ষ্যে নিরলস প্রয়াস চালিয়েও মানব মন্ডলী এক স্থায়ী অশান্তি, দুঃখবোধ ও মানসিক যন্ত্রণায় জর্জরিত হয়ে পড়ছে। মানুষ যতই তীব্রতা ও আন্তরিকতার সাথে বিশ্বপ্রকৃতিকে জয় করতে চেয়েছে ততই যেন সে তার অস্তিত্ব সংকটের দিকে এগিয়ে চলেছে। জীবনকে সুখময় স্বাচ্ছন্দ মধুর করতে গিয়ে এবং বৈষয়িক উন্নতির পথে ছুটতে গিয়ে আত্মার উন্নয়নের পথ ভুলতে বসেছে।

মানব শরীরের উন্নতি বিধানের জন্য যেমন একাধিক উপকরণ প্রয়োজন, তেমনি মানব আত্মার উন্নতি সাধনের জন্য পরিচ্ছন্ন এবং নির্মাণ শিক্ষার প্রয়োজন। এটা সভ্যতার প্রগতির স্বার্থেই একান্ত প্রয়োজন। ইতিহাসের পাতা উল্টালে দেখা যায় যে, কেবলমাত্র মানসিক উৎকর্ষতার অভাবেই অনেক প্রাচীন সভ্যতা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে। যে শিক্ষা কেবলমাত্র মানুষের দৈহিক ও বৈষয়িক জীবন রক্ষা ও বিকাশের পথ প্রদর্শন করে এবং তার উপায় উপকরণ সংগ্রহের কৌশল শেখায়, কেবলমাত্র বুদ্ধি বৃত্তিক উৎকর্ষতায় যার একমাত্র লক্ষ্য, সে শিক্ষা সার্বিকভাবে সমাজের পক্ষে কল্যাণকর হতে পারে না। তাই জাতীয় শিক্ষা দর্শন অবশ্যই মানবীয় মূল্যবোধ জাগরণের প্রতিও গুরুত্ব আরোপ করবে, যাতে সমাজে মাঙ্গলিক চিন্তা ও কর্মতৎপরতার পটভূমিকা রচিত হয়। বর্তমানে ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব বিকাশের পাশাপাশি হিতবাদী দর্শন চেতনার আলোকে সামষ্টিক ব্যবস্থার সফল রূপায়নের প্রতি বিশেষ যত্ন নেওয়া হয়। একজন ব্যক্তি বৃহত্তর সমাজের এক একটি ক্ষুদ্র একক। সমাজ বহির্ভূত ব্যক্তিসত্তা কল্পনা করা যায় না। কাজেই, সামষ্টিক প্রগতিচেতনাকেও উপেক্ষা করা যায় না। ভবিষ্যৎ বংশধরদের সামনে যে ধরনের মূল্যবোধের চেতনা জাগাতে চাই তারই উপর সমাজের বর্তমান সামষ্টিক ব্যবস্থার সাফল্য একান্তভাবে নির্ভরশীল। আমরা কোন শিক্ষার আলোকে, কি ধরনের মানবসম্পদ তৈরি করছি, তারই ওপর ভবিষ্যৎ জাতীয় লক্ষ্য তথা জাতীয় ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে। এখানেই চলে আসে সভ্যতার অগ্রগতির ভাবনা।

ব্যক্তির পরম সাফল্য ও সার্থকতার মধ্যেই নিহিত থাকে আমাদের জাতীয় লক্ষ্য। সামাজিক সুবিচার, ন্যায় পরায়ণতা এবং সামাজিক সংহতি এই উজ্জ্বল ভবিষ্যতের আসল ভিত্তি। এই পথেই দুর্নীতিমুক্ত, শোষণমুক্ত আদর্শ সমাজ গড়ে উঠতে পারে। তাহলে অমানবিক এবং অসামাজিক কার্যকলাপের অপসারণ ঘটিয়ে সকল মানুষ তার মানবিক মর্যাদা ও অধিকার লাভ করে সহাবস্থানের নীতির ওপর ভর করে শান্তিপূর্ণ জীবন যাপন করতে সক্ষম হবে। তাই বুদ্ধি বর্ধনের অনুশীলনের পাশাপাশি বিবেক বর্ধনেরও অনুশীলন একান্ত প্রয়োজন। কারণ বুদ্ধির জোরে ভাল-মন্দ দুটোই করা যায়। কিন্তু বিবেকের জাগরনে কেবলমাত্র ভালো করা যায়, মন্দ করা যায় না। তাই শিক্ষা দর্শনে জীবন দর্শনের অন্তর্ভুক্তি একান্ত প্রয়োজন মনে করাটাই যথেষ্ট নয়, বিশেষভাবে সেটা জরুরি । এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রাথমিক স্তর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত সকল পাঠক্রম স্তরকে সেভাবেই সাজানো উচিত। এমনটা সম্ভব হলে, আশা করা যায় উচ্চতর মানবিক মূল্যবোধের নির্মল চেতনা শুধুমাত্র ব্যক্তির আকাঙ্ক্ষাই চরিতার্থ করবে না, ব্যাপকভাবে জাতীয় আশা আকাঙ্ক্ষার বাস্তব রূপায়নের নিয়ামক হবে।

আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থা মূলত একটি শিল্পোন্নত সমাজ ও জাতির প্রয়োজন পূরণের উদ্দেশ্যে রচিত। এই শিক্ষায় বৈষয়িক জীবন সত্তার বিকাশ, সুখ-সম্ভোগ ও চাকচিক্যই সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত। ফলে, সুস্থ প্রতিযোগিতার পরিবর্তে দ্বন্দ্ব সংগ্রাম ও যোগ্যতমের উর্দ্ধতন (সারভাইভাল অফ দ্য ফিটেস্ট) তত্তই প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। শিক্ষার উদ্দেশ্যকে এইভাবে ব্যক্তির নিজ সত্তার সংকীর্ণ পরিধির মধ্যে সীমাবদ্ধ করা উচিত নয়। কেননা যে কোন ব্যক্তিকেই কোন জনসমষ্টি অথবা জাতির অংশ হয়েই বাঁচতে হয়। ব্যক্তিকে সমাজ সমষ্টির একজন উত্তম সদস্য রূপে গড়ে তুলতে হলে জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাকে অবশ্যই নীতি-নৈতিকতার উপর প্রতিষ্ঠিত হওয়া দরকার।

শিক্ষা সম্পর্কে নানা ধরনের চিন্তা দর্শন তথা মতাদর্শ অনেক আগে থেকেই উপস্থাপিত হয়েছে শিক্ষার আঙিনায়। এ পর্যায়ে একটি মৌলিক প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবেই আসে, সেটা হল , শিক্ষা হবে কোন মতাদর্শ ভিত্তিক? শিক্ষার মূল দর্শন কি হবে? এই প্রসঙ্গে শিক্ষা বিজ্ঞানী Thomas Percy Nunn তাঁর Education: Its Data and First Principles গ্রন্থে যে কথাটি বলেছেন, সেটি বেশ চিত্তাকর্ষক বলেই মনে হয়। তাঁর কথায়,”শিক্ষার উদ্দেশ্য হল, মানুষের স্বব্যক্তিত্বের স্বাধীন লালন ও বিকাশ সাধন। শিক্ষা কোন লক্ষ্যের জন্য হওয়া উচিত নয়। কেননা যত ব্যক্তি,তত লক্ষ্য” কিন্তু বেশিরভাগ শিক্ষা বিজ্ঞানী মনে করেন, শিক্ষা বিশেষ লক্ষ্যকে সামনে রেখেই হতে হবে। কারণ প্রতিটি সমাজই তার জাতীয় ও সামগ্রিক উদ্দেশ্যের উৎকর্ষ সাধনের উপযোগী ব্যক্তি গঠনের জন্য সচেষ্ট থাকে এবং এটাই স্বাভাবিক। এজন্য জাতির সামনে একটা সুস্পষ্ট জাতীয় ও সামগ্রিক লক্ষ্য উজ্জল ভাবে থাকা আবশ্যক। এই আবশ্যক চিন্তা থেকেই কমবেশি প্রতিটি জাতি বা দেশ তাদের শিক্ষা পাঠক্রমকে রাজনীতির ঊর্ধ্বে ঠাঁই দিতে পারেনি। মূলত শিক্ষাকে জাতীয় রাজনৈতিক লক্ষ্যের সাথেই সামঞ্জস্যপূর্ণ করে গড়ে তোলা হয়েছে। এই পেক্ষাপটে বাটার্ণ্ড রাসেল তাঁর সমাজ ব্যবস্থা ও শিক্ষা নামক গ্রন্থে শিক্ষার নেতিবাচক দর্শনের প্রতি আলোকপাত করেছেন যথেষ্ট যুক্তিগ্রাহ্য ভাবেই।

বর্তমান যুগে শিক্ষার অঙ্গনে মূলত তিনটি প্রধান স্বতন্ত্র দর্শন বা মতবাদ চালু আছে। একদল মতাদর্শীদের ধারণা, উন্নতির সুযোগ সুবিধা লাভ ও সে পথের প্রতিবন্ধকতা সমূহ দূর করায় শিক্ষার একমাত্র উদ্দেশ্য হওয়া উচিত। আর একদল মতাদর্শী মনে করেন, সমাজের ব্যক্তিদেরকে সংস্কৃতিবান করে তাদের সমগ্র যোগ্যতা প্রতিভাকে চূড়ান্ত মানে উন্নীত করাই শিক্ষার উদ্দেশ্য হওয়া বাঞ্ছনীয়। অন্যদিকে আর এক দল-মতাদর্শী দাবি পেশ করেন, শিক্ষা পর্যায়ে ব্যক্তিকেন্দ্রিক চিন্তা পরিহার করে সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে চিন্তা বিবেচনা করা কর্তব্য এবং সমাজের লোকদেরকে কল্যাণকর প্রশিক্ষণ দিয়ে তৈরি করা অতি অবশ্য প্রয়োজন। অভিজ্ঞতার আলোকে বলা যেতে পারে, এই তিন প্রকারের শিক্ষা দর্শন স্বতন্ত্রভাবে কোথাও প্রয়োগ করা হয় না। বরং শিক্ষা জগতে কমবেশি এই তিন ধরনের শিক্ষা দর্শন মিলেমিশে অনুসৃত হয়ে থাকে। বিতর্ক পরিহার করে বলা যেতে পারে,শিক্ষার লক্ষ্য যদি হয় ব্যক্তিকেন্দ্রিক তাহলে তাকে ভালো মানুষরূপে গড়ে তোলা রাষ্ট্রীয় কর্তব্য হয়ে দাঁড়ায়। তাকে যদি রাষ্ট্রের একজন উত্তম নাগরিক রূপে তৈরি হতে হয়, তাহলে তাকে এমন শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে হবে, যাতে সে নাগরিকত্বের অপরিহার্য গুণাবলীতে ভূষিত হতে পারবে। এই প্রেক্ষাপটে অনেকেই ধর্মীয় দর্শন তথা আধ্যাত্মিক চেতনার আলোকে শিক্ষা দর্শন গড়ে তোলার পক্ষপাতী। মুশকিল হল, ধর্মের সাথে রাজনীতির সংমিশ্রণের ফলে তাতে জটিলতায় সম্প্রসারিত হয়। কাজেই, দক্ষতা অর্জন, দায়িত্ব ও কর্তব্যের সর্বোপরি নৈতিকতার উপর সমন্বয় ঘটিয়ে শিক্ষা দর্শন গড়ে তোলা দরকার।

এই চিন্তা ধারা থেকে স্যার পার্সি নান প্রদর্শিত শিক্ষার সুস্পষ্ট তিনটি লক্ষ্যের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। ১) ব্যক্তি চরিত্রের পুনর্গঠন, ২) পরিপূর্ণ জীবনের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ, ৩) ভালো দেহে ভালো মন বিনির্মাণ।

পরিতাপের বিষয় হলো, আধুনিক যুগে প্রায় প্রত্যেকটি দেশে শিক্ষা দর্শনের ক্ষেত্রে সাধারণভাবে রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকেই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এই কারনেই মনে হয় বর্তমানে শিক্ষার নিজস্ব কোন তাৎপর্য নেই, নেই কোন নিজস্ব বৈশিষ্ট্য। বর্তমানে শিক্ষা নিছক রাজনৈতিক মতাদর্শের বাহন মাত্র। বর্তমান ভারতবর্ষে শিক্ষার অঙ্গনে যে ধরনের শিক্ষা দর্শন অনুসৃত হওয়ার উদ্যোগ গৃহীত হচ্ছে বিশেষ করে অতীত ঐতিহ্য ও ইতিহাসের পাঠ্যসূচি পুনর্নির্মাণ এর ক্ষেত্রে, তা সহজেই অনুমেয়। আশার কথা হলো এই, মুক্তচিন্তার অনুসারীগণ জাতিতত্ত্ববাদ ও কর্মবাদের পরিবর্তে মূল্যমানের আদর্শিক দর্শন থেকে শিক্ষাদর্শন গড়ে তোলার পক্ষপাতী। এইমত গৃহীত হলে উৎপাদনশীলতার সঙ্গে সম্পৃক্ত সকল বিষয় দক্ষতা অনুশীলনের পাশাপাশি সততা, সত্যবাদিতা, সৌন্দর্য, সদাচার, কর্তব্য পরায়নতা, নৈতিকতা ও নির্মল আধ্যাত্মিকতার জগতে শৃঙ্খলা বিধানের মধ্যে পূর্ণ মাত্রায় শামিল করা সম্ভব হবে। শিক্ষা দর্শনের সোনার ফসল ঘরে ঘরে উঠবে।

You may also like

Vinnokatha
Prothom Khondo
Price: Rs.260/-
www.vinnokatha.in
মেহনতি মানুষের মুক্তি নিশ্চয়ই একদিন আসবে। সব ধরণের শোষণ শেষ হবে একদিন--এ স্বপ্ন আমরা দেখি। শুধু দেখি না, একে বাস্তবে কার্যকর করতে 'ভিন্নকথা' তার সাধ্যমত প্রয়াস চালিয়ে যাবে। মানুষকে সঙ্গে নিয়ে, মানুষের চেতনার লক্ষ্যে, মুক্তির লক্ষ্যে।
মেহনতি মানুষের মুক্তি নিশ্চয়ই একদিন আসবে।সব ধরণের শোষণ শেষ হবে একদিন--এ স্বপ্ন আমরা দেখি। শুধু দেখি না, একে বাস্তবে কার্যকর করতে 'ভিন্নকথা' তার সাধ্যমত প্রয়াস চালিয়ে যাবে। মানুষকে সঙ্গে নিয়ে, মানুষের চেতনার লক্ষ্যে, মুক্তির লক্ষ্যে।
Vinnokatha
Prothom Khondo